ফাইল ছবি
১ সেন্ট মূল্যমানের মুদ্রা পেনি-র উৎপাদন বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ২৩৮ বছরের এক অধ্যায়ের অবসান হলো। বুধবার বিকালে ফিলাডেলফিয়ার ইউএস মিন্টে তৈরি হয়েছে শেষ পেনি। এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারার ব্র্যান্ডন বিচ।
শেষ দিনে তৈরি করা কয়েনগুলো স্মারক হিসেবে নিলামে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ব্র্যান্ডন বিচ। সাধারণ প্রচলনের জন্য সর্বশেষ পেনি তৈরি হয়েছিল গত জুন মাসে। মূলত ব্যয় সাশ্রয় করতে গত ফেব্রুয়ারিতে পেনির উৎপাদন বন্ধ করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
১৭৯৩ সালে যখন পেনির প্রচলন শুরু হয়েছিল, তখন একটি মুদ্রা দিয়ে একটি বিস্কুট, একটি মোমবাতি বা এক টুকরো ক্যান্ডি কেনা যেত। কিন্তু এখন এর বেশিরভাগই কাচের বয়ামে বা ড্রয়ারে পড়ে থাকে। অথচ প্রতিটি পেনি তৈরি করতে সরকারের খরচ হয় প্রায় ৪ সেন্ট। অর্থাৎ তার মূল্যের চেয়ে চার গুণ বেশি। হাফ-পেনির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরও ১৬৮ বছর টিকে ছিল পেনি। বাজারে এখন নিকেল, ডাইম, কোয়ার্টার এমনকি হাফ-ডলার ও ডলার কয়েনের প্রচলনও খুব কম। তবে বন্ধ হয়ে গেলেও পেনি চলমান আইনত মুদ্রা হিসেবেই থাকবে।
এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতা। অনেক দোকানদার এখন নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে নিকটতম মুদ্রা নিকেলে রাউন্ড ফি আপ বা ওপরে উঠিয়ে নির্ধারণ করছেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও অনেকসময় ক্রেতাদের জন্য পণ্যের দাম এক বা দুই সেন্ট বেশি পড়ছে। সরবরাহ ঘাটতি সামাল দিতে অনেক ব্যবসায়ী এখনো ক্রেতাদের পেনিতে লেনদেন করার আহ্বান করছেন।
অন্যদিকে, পেনি বন্ধের প্রক্রিয়াটি বিশৃঙ্খল বলে মন্তব্য করেছেন ‘আমেরিকানস ফর কমন সেন্টস’-এর নির্বাহী পরিচালক মার্ক ওয়েলার। সংগঠনটি পেনির পক্ষে কাজ করে। ওয়েলার বলেন, ‘ক্রিসমাসের সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তখন খুচরো না থাকায় দোকানদারদের বিপদ বাড়বে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলো তাদের ছোট মুদ্রার উৎপাদন বন্ধ করার আগে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। প্রেসিডেন্টের এক পোস্টের পরই উৎপাদন বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে খুচরো সংকটের পর ব্যবসায়ীরা কী করবেন, সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না।’
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব রিচমন্ডের এক গবেষণা বলছে, এভাবে নিকেল পর্যন্ত রাউন্ডিং করলে ভোক্তাদের বছরে প্রায় ৬ মিলিয়ন বা ৬০ লাখ ডলার অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। তবে এটি মোটামুটি সামান্য, কারণ ১৩৩ মিলিয়ন আমেরিকান পরিবারের মধ্যে ভাগ করলে প্রতি পরিবারের জন্য গড়ে পাঁচ সেন্ট করে হয়।
তবে এ রাউন্ডিং জাতীয় সমাধান নয়। ডেলাওয়্যার, কানেকটিকাট, মিশিগান, ওরেগন রাজ্য ও নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, মায়ামি ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ভোক্তাদের খুচরা ফেরত দেয়া বাধ্যতামূলক। এ পরিস্থিতিতে পেনি উৎপাদন বন্ধের পর উদ্ভূত সমস্যাগুলোর সমাধানে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে কংগ্রেসের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে খুচরা বিক্রেতা সংগঠন ।
পেনি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দিকের মুদ্রাগুলোর একটি। ইউএস মিন্ট প্রতিষ্ঠারও ছয় বছর আগে ১৭৮৭ সালে পেনি উৎপাদন শুরু হয়। প্রথম উৎপাদিত ফুজিও সেন্ট নামের পেনির নকশা করেছিলেন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। আর বর্তমান পেনির নাকশা প্রকাশিত হয় আসে ১৯০৯ সালে, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের জন্মশতবার্ষিকীতে। আর সেটিই হয়ে ওঠে প্রেসিডেন্টের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা প্রথম মার্কিন কয়েন। কালের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা কমেছে। ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের হিসাবে বর্তমানে বাজারে ৩০০ বিলিয়ন পেনির প্রচলন আছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: