ব্রিটেনে অ্যাসাইলাম নীতিতে বড় পরিবর্তন, শরণার্থী মর্যাদা হবে অস্থায়ী

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:১৪

অভিবাসীদের প্রতীকী ছবি: রয়টার্স অভিবাসীদের প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

আশ্রয়প্রার্থীদের (অ্যাসাইলাম) নীতি আমূল বদলে শরণার্থী মর্যাদাকে অস্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটেন। পাশাপাশি স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষার সময় চার গুণ বাড়িয়ে ২০ বছর করা হবে। এটি দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে আশ্রয় নীতির সবচেয়ে বড় সংস্কার। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

লেবার সরকার তাদের অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করছে। বিশেষ করে ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় অবৈধভাবে প্রবেশ রোধে জোর দেওয়া হচ্ছে। রিফর্ম ইউকের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় অভিবাসন ইস্যুতে চাপের মুখে রয়েছে দেশটির সরকার।

শনিবার রাতে প্রকাশিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য থাকা, সাপ্তাহিক ভাতা ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার আইনগত বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হবে। যারা কাজ করতে সক্ষম হয়েও কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেবে বা আইন ভঙ্গ করবে, তাদের ক্ষেত্রে এসব সহায়তা প্রযোজ্য হবে না। অর্থনীতিতে ও স্থানীয় সমাজে অবদান রাখেন, এমন ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, শরণার্থীদের সুরক্ষা এখন অস্থায়ী হবে এবং তাদের দেশের পরিস্থিতি ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচিত হলে মর্যাদা প্রত্যাহার করা যাবে। তিনি বলেন, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্রিটেনের ব্যবস্থা বেশি উদার, যেখানে পাঁচ বছর পর প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। নতুন নিয়মে দুই বছর ছয় মাস পরপর শরণার্থীর অবস্থার পর্যালোচনা করা হবে এবং স্থায়ী হওয়ার পথ হবে ২০ বছরের দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

মাহমুদ আরও জানান, সোমবার তিনি পরিবর্তনগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। এর মধ্যে ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদের আর্টিকেল ৮, পরিবারের অধিকার সম্পর্কিত ঘোষণা থাকবে। সরকারের দাবি, এই ধারাটি এমনভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে যা দেশত্যাগে বাধা সৃষ্টি করছে।

সরকারের কঠোর অবস্থান নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। শতাধিক ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা মাহমুদকে চিঠি দিয়ে অভিবাসীদের ‘বলির পাঁঠা’ বানানো বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এসব পদক্ষেপ বর্ণবাদ ও সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।

জনমত জরিপ বলছে, অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে ব্রিটিশ ভোটারদের সর্বোচ্চ উদ্বেগ এখন অভিবাসন। সরকারি খরচে হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা নিয়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিক্ষোভও হয়েছে।

শেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন করেছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৩৪৩ জন। যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি এবং ২০০২ সালের সর্বোচ্চ রেকর্ডকেও ছাড়িয়েছে।

মাহমুদ বলেছেন, বিপদাপন্ন মানুষদের সহায়তা দিতে ব্রিটেনের আরও ‘নিরাপদ ও বৈধ’ পথ খোলা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ডেনমার্কসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশের নীতিকে অনুসরণ করে, কিছু ক্ষেত্রে তা ছাড়িয়ে ব্রিটেন নতুন সংস্কার আনছে। এসব দেশে শরণার্থী মর্যাদা অস্থায়ী, সহায়তা শর্তসাপেক্ষ এবং নতুন সমাজে একীভূত হওয়ার প্রত্যাশা করা হয়।

ডেনমার্কে সাধারণত দুই বছরের জন্য অস্থায়ী আবাস অনুমতি দেওয়া হয়, মেয়াদ শেষে আবেদনকারীদের পুনরায় আবেদন করতে হয়। দেশটি ‘নিরাপদ’ হলে শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। নাগরিকত্ব পাওয়ার পথও দীর্ঘ হয়েছে। কঠোর নীতি চালুর পর দেশটিতে আশ্রয় আবেদন ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে এবং প্রত্যাখ্যাত ৯৫ শতাংশ আবেদনকারীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তবে এসব নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব পদক্ষেপ অভিবাসীবিরোধী পরিবেশ তৈরি করছে এবং শরণার্থীদের অনিশ্চয়তায় ফেলে দিচ্ছে।

ব্রিটেনের রিফিউজি কাউন্সিল জানিয়েছে, বিপদ থেকে পালানোর সময় শরণার্থীরা বিভিন্ন দেশের আশ্রয়ব্যবস্থা তুলনা করে না। তারা ব্রিটেনে আসে পরিবারিক সম্পর্ক, ইংরেজি ভাষাজ্ঞান বা পরিচিতদের কারণে, যা তাদের নতুন জীবন শুরু করতে সহায়তা করে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: