স্কটল্যান্ড সফরের প্রথম দিনে গলফ খেললেন ট্রাম্প, বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ

Shojon Jahir | ২৮ জুলাই ২০২৫ ১৭:৪৫

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার স্কটল্যান্ড সফরের প্রথম পূর্ণদিন শনিবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে গলফ খেলে কাটিয়েছেন। এ সময় দেশটির বড় শহরগুলোতে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছে।

যুক্তরাজ্যের টার্নবেরি থেকে এএফপি জানায়, স্কটল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত নিজের টার্নবেরি রিসোর্টে ট্রাম্প তার ছেলে এরিক ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ওয়ারেন স্টিফেন্সের সঙ্গে গলফ খেলেন। এসময় ফটোগ্রাফারদের উদ্দেশে হাত নাড়তেও দেখা যায় তাকে।

তবে তার উপস্থিতি এই সুন্দর ও সাধারণত শান্তিপূর্ণ এলাকা এক প্রকার দুর্গে পরিণত করেছে। সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ চেকপয়েন্ট। ক্যাম্পাসজুড়ে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা লক্ষ্য করা যায়। কেউ পেট্রল চালিত কোয়াডবাইকে, কেউ স্নিফার কুকুর নিয়ে হেঁটে টহল দিচ্ছেন। সিক্রেট সার্ভিস স্নাইপারদের অবস্থান ছিল কৌশলগত স্থানে, অন্যদিকে সাধারণ গলফারদের শরীর তল্লাশি করতেও দেখা গেছে নিরাপত্তাকর্মীদের।

৭৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট শুক্রবার প্রেস্টউইক বিমানবন্দরে পৌঁছান। ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ দেখতে ও ট্রাম্পকে এক ঝলক দেখতে শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করেন। স্কটল্যান্ড সম্পর্কে বারবার ভালোবাসা প্রকাশ করলেও, ট্রাম্পের বিতর্কিত রাজনীতি ও বিনিয়োগ দেশটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প ইউরোপজুড়ে অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সমালোচনায় সরব হন। তিনি বলেন, ‘নিজেদের ঠিক করে নিন, না হলে ইউরোপ আর থাকবেনা।’ ‘এই উইন্ডমিল’ বন্ধ করুন। এগুলো আপনাদের দেশ ধ্বংস করছে,’ আরও যোগ করেন তিনি।

এই পাঁচদিনের সফরে ব্যবসা, অবসর ও কূটনীতি মিলিয়ে নানা কর্মসূচি থাকলেও, স্থানীয়দের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। পূর্ব উপকূলে রাজধানী এডিনবরার আমেরিকান কনসুলেট এবং উত্তরের আবেরডিন শহরে শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হন। আবেরডিনেও ট্রাম্পের একটি গলফ রিসোর্ট রয়েছে।

‘স্টপ ট্রাম্প কোয়ালিশন’ এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। তারা স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টারকে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার আহ্বান জানায়। বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘স্কটল্যান্ড হেটস ট্রাম্প’ লেখা প্ল্যাকার্ড, এবং ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা গেছে।

আবেরডিনে ৪৪ বছর বয়সী অ্যামি হ্যানলন বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি আমেরিকায় ট্রাম্পের অধীনে ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদ জানাতে। গাজায় যে গণহত্যা চলছে, তা ব্রিটিশ ও মার্কিন সরকার অর্থায়ন করছে।’ যদিও টার্নবেরিতে কোনো বিক্ষোভের চিহ্ন দেখা যায়নি।

সবাই অবশ্য ট্রাম্পের সফরের বিরোধিতা করেননি। প্রেস্টউইক বিমানবন্দরে এক কিশোর ‘স্বাগত ট্রাম্প’ লেখা সাইনবোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, আর এক ব্যক্তি ট্রাম্পের বিখ্যাত স্লোগান ‘মেক আমেরেকিা গ্রেট অ্যাগেন’ লেখা পতাকা ওড়ান। ৪৬ বছর বয়সী লি ম্যাকলিন বলেন, ‘ট্রাম্প রাজনীতিবিদ না হয়েও বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমি মনে করি তিনি নিজের দেশের স্বার্থে কাজ করেন।’

শনিবার ট্রাম্পের কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচি ছিল না। তবে তিনি ট্রুথ সোশ্যালে জানান, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাত বন্ধে দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। রোববার তিনি টার্নবেরিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লাইয়েনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা করবেন।

তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তিনি যাবেন আবেরডিনশায়ারের বালমেডি এলাকায়, যেখানে নিজস্ব রিসোর্টে একটি নতুন গলফ কোর্স উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরে আসবেন। তবে তিনি আগামী ১৭-১৯ সেপ্টেম্বর আবার যুক্তরাজ্যে ফিরবেন রাষ্ট্রীয় সফরে। ওই সময়ে রাজা চার্লস তৃতীয় তাকে স্বাগত জানাবেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: