
কয়েক মাসের টানাপোড়েনপূর্ণ আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান একটি ‘বৃহৎ’ বাণিজ্য চুক্তি করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এ ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার ঘোষিত এই চুক্তি অনুযায়ী, জাপানের রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই চুক্তির অধীনে জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। নিজের ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, আমরা জাপানের সঙ্গে একটি বিশাল চুক্তি সম্পন্ন করেছি। সম্ভবত এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুক্তি। আমার নির্দেশনায় জাপান ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এর ৯০ শতাংশ লাভ যুক্তরাষ্ট্র পাবে। খবর অনলাইন আল জাজিরার।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গাড়ি, চাল এবং কিছু কৃষিপণ্যের রপ্তানির জন্য বাজার খুলে দেবে জাপান। এই চুক্তির ফলে লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও তিনি দাবি করেন। এমন কিছু আগে কখনও হয়নি।
মঙ্গলবার কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, দুই পক্ষ আলাস্কায় তরল প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের জন্য একটি যৌথ উদ্যোগ গঠনে সম্মত হয়েছে। এটি সবার জন্যই একটি দারুণ চুক্তি। আমি সবসময় বলি, চুক্তি সবার জন্যই উপকারী হতে হবে। এটি দারুণ একটি চুক্তি। অতীতের চুক্তিগুলোর চেয়ে অনেক ভিন্ন, এটা আমি বলতে পারি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা সপ্তাহান্তে উচ্চকক্ষের আসন হারিয়ে রাজনৈতিক চাপে রয়েছেন। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের জানান যে, তিনি চুক্তির বিস্তারিত ‘সতর্কভাবে পর্যালোচনা’ করবেন। তবে তিনি মনে করেন এটি দেশের স্বার্থে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিশ্চিত করে ইশিবা জানান, যুক্তরাষ্ট্র জাপানি গাড়ির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে।
অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্পের গাড়ির শুল্ক ছিল ওয়াশিংটন ও টোকিওর মধ্যে মাসের পর মাস ধরে চলা আলোচনার অন্যতম বড় অন্তরায়। জাপান এতদিন ট্রাম্পের ১০ শতাংশ মৌলিক শুল্কের আওতায় ছিল। আগস্টের ১ তারিখের মধ্যে চুক্তি না হলে অধিকাংশ রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়ত।
ওয়াশিংটন ডিসির হাডসন ইনস্টিটিউটের জাপান চেয়ার-এর উপপরিচালক উইলিয়াম চৌ লিঙ্কডইনে এক পোস্টে মন্তব্য করেছেন, পারস্পরিক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১৫ শতাংশ হওয়া জাপানের জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো খবর। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, স্টিল ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ২৩২ ধারার শুল্ক থেকে জাপান কোনও ছাড় পেয়েছে কি না।
তবে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক সমঝোতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমরা যুক্তরাষ্ট্র-জাপান সহযোগিতার এক নতুন স্বর্ণযুগে প্রবেশ করছি। এই দীর্ঘদিনের জোটকে গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে পেরে আমি আনন্দিত।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর জাপানি গাড়ি কোম্পানির শেয়ারমূল্য বেড়ে যায়। বুধবার সকালে মাজদার শেয়ার ১৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়। আর টয়োটা, নিশান ও হোন্ডার শেয়ার ৮.৫ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। জাপানের প্রধান স্টক সূচক নিক্কেই ২২৫, যা বিস্তৃত বাজারকে অনুসরণ করে, প্রায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যদিও বিস্তারিত তথ্য এখনও স্পষ্ট নয়, ট্রাম্পের এই ঘোষণা তার এতদিনের বাণিজ্য চুক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে তিনি যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনসের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি করেছেন এবং চীনের সঙ্গে ৯০ দিনের বাণিজ্য বিরতি চুক্তি করেছেন। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি জাপান হলো যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে জাপান থেকে ১৪৮.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৯.৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছে জাপান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: