আগামী ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আসছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফলে ভারতও প্রস্তাবিত কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত করে দিয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সময়েই বাইডেনকে ভারত প্রজাতন্ত্র দিবসে বিশেষ অতিথি হিসেবে আসার অনুরোধ করেছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েও দেওয়া হয়। ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি নিজেই সেই প্রস্তাবের কথা জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, জানুয়ারির শেষ দিকে ভারত সফরের বিষয়টি প্রেসিডেন্ট বিবেচনা করছেন। খবর উইওনের।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সেই আমন্ত্রণ রক্ষা বা না রাখার বিষয়ে কিছু জানায়নি। ভারতও বাইডেনের বিশেষ অতিথি হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। যদিও সরকারি সূত্র থেকেই তার না আসার খবরটি গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে জানানো হয়।
বাইডেনকে আমন্ত্রণ জানানোর পরপরই দিল্লিতে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন করার বিষয়ে ভারত উদ্যোগী হয়েছিল। চার দেশীয় ওই অক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে গঠিত। ভারত চেয়েছিল, বাইডেন থাকাকালে দিল্লিতে ওই জোটের শীর্ষ সম্মেলন করে ফেলবে। সে জন্য জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রাথমিক কথাবার্তাও হয়েছিল। দুই দেশই জানিয়েছিল, বাইডেনের সম্মতি থাকলে তারাও ওই সময়ে ভারতে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।
গতকাল সরকারি সূত্রে জানানো হয়, বাইডেন আসতে পারবেন না বলে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনও আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারি দিল্লিতে সেই সম্মেলন করার কথা ভাবা হয়েছিল।
নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে ২০১৫ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসে বিশেষ অতিথি হিসেবে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ২০১৮ সালে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কিন্তু ‘অন্যান্য কর্মসূচির জন্য’ তিনি আসতে পারেননি। এবার বাইডেনও না আসার সিদ্ধান্ত নিলেন।
বাইডেনকে যখন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তখন কানাডায় খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার সন্দেহের কথা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রকাশ করেননি। কানাডার পার্লামেন্টে সেই অভিযোগ জানানোর কিছুদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও সে দেশের শিখ নাগরিক ও ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংগঠনের নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার চক্রান্তে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ আনে। ওই অভিযোগে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে এক ভারতীয়কে গ্রেফতারের কথাও তারা জানায়।
লক্ষণীয়ভাবে, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের চরিত্র এক হলেও কানাডার অভিযোগ ভারত অস্বীকার করে, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের গুরুত্ব স্বীকার করে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই হত্যাচেষ্টার অভিযোগকে ভারত ‘গুরুতর’ বলেও অভিহিত করেছে।
আরও লক্ষণীয়, বাইডেনের ভারতে না আসার খবরটি যে সময়ে জানাজানি হয়, ঠিক তখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের প্রধান ক্রিস্টোফার এ রে ভারত সফর করছেন। পান্নুন হত্যা চক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে দুই দিনের সফরে তিনি গত রোববার রাতে দিল্লি আসেন। দুই দিন ধরে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই), দিল্লির পুলিশ কমিশনার ও জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
দুই তরফের আলোচনা ও অগ্রগতি নিয়ে কোনো পক্ষই অবশ্য বিস্তারিত কিছু জানায়নি। কিন্তু পান্নুন হত্যা চক্রান্তের সঙ্গে বাইডেনের না আসা সম্পর্কযুক্ত কি না, সেই জল্পনা শুরু হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: