ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদি সেরে উঠছেন। তিনি এখন ভালো আছেন। তবে তিনি নিজ হাতে লিখতে পারছেন না কিংবা কিছু টাইপ করতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন রুশদি। বুকার পুরস্কারজয়ী এই লেখক গত বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার শিকার হন। নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর থেকে বেশ অসুস্থ ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর উপন্যাস প্রকাশ উপলক্ষে আবারও আলোচনায় এসেছেন। তবে ৭৫ বছর বয়সী রুশদি শারীরিক অবস্থার কারণে উপন্যাসের প্রচারকাজে সশরীর অংশ নিচ্ছেন না।
আগস্টে আহত হওয়ার পর এই প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন রুশদি। এই সাক্ষাৎকারে নিজের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই বড় আঘাত সেরে যায়। আমার বৃদ্ধাঙ্গুল, তর্জনী ও হাতের তালুর একটি অংশে অনুভূতি পাচ্ছি। হাতে অনেক ধরনের থেরাপি নিতে হচ্ছে। আমি ভালো করছি।’ তবে এই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন, আঙুলের অগ্রভাগে তাঁর অনুভূতি কম। ফলে তিনি কলমে যেমন লিখতে পারছেন না, তেমনি টাইপ করতেও পারছেন না।
রুশদি বলেন, ‘আমি এখন একা দাঁড়াতে পারি এবং হাঁটতে পারি। আমি যখন বলছি, আমি ভালো আছি, এর মধ্য দিয়ে আমি এটাই বলছি, আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। এটা ভয়ংকর হামলা ছিল।’ নিউইয়র্কের ওই হামলার পর থেকে বেশ ভয়ের মধ্যেও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিজের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (পিটিএসডি) মতো জটিল মানসিক সমস্যার কথা বলেছেন রুশদি। তিনি বলেন, ‘আমি লিখি। কিন্তু শূন্যতা এবং অর্থহীনতার সংমিশ্রণে একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমি লিখছি এবং সেগুলো মুছে ফেলছি পরদিন।’
এদিকে রুশদির ওপর যিনি হামলা চালিয়েছিলেন, সেই হাদি মাতারকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সালমান রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ নামক বইয়ের জন্য বুকার পুরস্কার জেতেন তিনি। তবে ১৯৮৮ সালে তাঁর চতুর্থ বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য তাঁকে ৯ বছর লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে বসবাসকালে বেশির ভাগ সময় তাঁকে সরকারের সুরক্ষা নিয়ে থাকতে হয়েছে। ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর তাঁর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনে বিভিন্ন মহল। এটি প্রকাশের পর থেকে সালমান রুশদি হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন। বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তাঁর মাথার দাম হিসেবে ৩০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে সালমান রুশদিকে নাইট উপাধি দেন ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: