ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে চলতি ফল সেশনে নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। অভিবাসন নীতি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর এমন পতন দেখা গেল। যার অর্থনৈতিক মূল্যও বেশ বড়। প্রায় ১১০ কোটি ডলার।
সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ফল সেমিস্টারে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ কমেছে। চলতি মাসে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের (আইআইই) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আইআইই–এর ওপেন ডোরস রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মোট প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে যুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে টিউশন ফি ও শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন খরচ।
এ বছর এই তীব্র হ্রাসের মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শিক্ষার্থী–ভিসা নীতির পরিবর্তন। আন্তর্জাতিক শিক্ষা সংগঠন নাফসার আলাদা এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই পতনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষতি হবে প্রায় ১.১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলার।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান ইমপ্ল্যানের আলাদা হিসাব অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের সরাসরি খরচ কমে যাওয়া এবং তার প্রভাব মিলিয়ে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি ধরা পড়েছে। ইমপ্ল্যানের অর্থনীতিবিদ বিয়র্ন মার্কেসন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শুধু ক্লাসে যায় না, তারা স্থানীয় অর্থনীতিকে সক্রিয় রাখে। তাদের খরচ হাজারো চাকরি টিকিয়ে রাখে, স্থানীয় ব্যবসা সচল রাখে, আর সেই আয় থেকেই কমিউনিটি সার্ভিসের কর রাজস্ব গড়ে ওঠে।’
ট্রাম্প প্রশাসন আগামী বসন্তে নতুন ভিসা আবেদন অস্থায়ীভাবে বন্ধ করার আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিল। তাদের বেশির ভাগই ভারত ও চীন থেকে এসেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট উচ্চশিক্ষা শিক্ষার্থীর প্রায় ৬ শতাংশ, ওপেন ডোরসের তথ্য অনুযায়ী।
যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর প্রধান গন্তব্য। কিন্তু সেই পাইপলাইন আগে থেকেই চাপে ছিল। ২০২৪ সালের শরতেও নতুন বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছিল, যা ২০২০-২১ কোভিড-পরবর্তী সময়ের পর প্রথম বড় হ্রাস বলে ওপেন ডোরস জানায়। আরও কঠোর যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থী–ভিসা নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা নিয়ে বিদেশে পরিবর্তিত মনোভাব, এসব কারণেই এমন পতন ঘটেছে বলে অন্যান্য গবেষণায় পাওয়া যায়।
নাফসার নির্বাহী পরিচালক ও সিইও ফান্টা আউ বলেন, ‘গত বছর ও এ বছরের ভর্তি সংখ্যাগুলো গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের মেধা আসার পথ এখন অস্থির ও ঝুঁকির মধ্যে। এই নীতি পরিবর্তনের প্রভাব এখন বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কমিউনিটিতে অনুভূত হচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার বিস্তৃত অর্থনৈতিক প্রভাব থাকলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেখানকার শিক্ষার্থীদের। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কেবল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যই আনেন না, তারা সাধারণত পূর্ণ টিউশন ফি দেন। ওপেন ডোরস ৮২৫ টির বেশি প্রতিষ্ঠানের জরিপ চালিয়ে বলেছে, এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় আয়ের উৎস।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: