
মালয়েশিয়ার পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমদ বাদাবী ৮৫ বছর বয়সে আজ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছিল। একজন প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা, আব্দুল্লাহ আহমদ বাদাবী যিনি “পাক লাহ” নামে স্নেহভাজন ছিলেন- তিনি ড. মাহাথির মোহাম্মদ এর ২২ বছরের শাসন শেষে ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
দেশটির বারনামা, ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে, মালয় মেইল এবং মালয়েশিয়া কিনি সহ প্রায় সবকটি মিডিয়া আব্দুল্লাহর জামাতা এবং প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী খাইরি জামালুদ্দিন ইনস্টাগ্রামের পোস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
খাইরির ভাষ্যমতে, আব্দুল্লাহ সোমবার রাত ৭টা ১০ মিনিটে (মালয়েশিয়ার সময়) জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে (আইজিএন) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। একটি আলাদা বিবৃতিতে, আইজিএন জানায়, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে আব্দুল্লাহকে গতকাল সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং সাথে সাথেই তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়।
সৌম্য, নম্রভাষী এবং "মি. ক্লিন" হিসেবে পরিচিত আব্দুল্লাহ ২০০৪ সালে বারিসান ন্যাশনালকে (বিএন) এক ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী করেন- তবে ২০০৮ সালে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং পাঁচটি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বিরোধী পুনরুত্থানের মুখে পড়ে।
রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সংস্কার আনার চেষ্টা সত্ত্বেও, মাহাথির এবং বিরোধীদের ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হন আব্দুল্লাহ ও খাইরি, যার ফলে বিএন-এর প্রতি সমর্থন কমে যেতে থাকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য তাকে দায়ী করা হয় এবং এক বছরের মধ্যেই চাপের মুখে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন।
আব্দুল্লাহ রেখে গেছেন তার স্ত্রী জিন আব্দুল্লাহ এবং তার প্রথম স্ত্রী এন্ডন মাহমুদের (যিনি ২০০৫ সালে স্তন ক্যান্সারে মারা যান) ঘরে জন্ম নেওয়া দুই সন্তান নোরি ও কামালুদ্দিনকে। এছাড়াও, জিনের আগের বিয়ে থেকে তার দুই সৎসন্তান ছিল- নাদিয়া কিমি ও নাদেন কিমি।
পেনাংয়ের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ এক দশকের বেশি সময় ধরে সরকারি চাকরিতে ছিলেন, এরপর রাজনীতিতে আসেন। ১৯৭৮ সালে তিনি কেপালা বাতাস আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী তিন দশকেরও বেশি সময় এই আসনে প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৮০ সালে প্রধানমন্ত্রী হুসেইন ওননের আমলে তিনি ফেডারেল টেরিটরিজ উপমন্ত্রী নিযুক্ত হন। হুসেইন পদত্যাগ করার পর, মাহাথিরের প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মন্ত্রী হন। এরপর তিনি শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও অর্থনীতি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে আনোয়ার ইব্রাহিম কারাবন্দি হওয়ার পর এবং রিফরমাসি আন্দোলন শুরু হলে, আব্দুল্লাহ মাহাথিরের তৃতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী হন।
মাহাথির প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর, ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ২০০৪ সালের মার্চে বিএন-কে ২১৯টি আসনের মধ্যে ১৯৮টি জয় এনে দিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ জয়ী করেন।
তবে মাহাথির এবং বিরোধী পক্ষের অব্যাহত সমালোচনার মুখে পড়ে, পাঁচ বছরের মাথায় বিএন ৫৮টি আসন হারায় এবং দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নষ্ট হয়; পাশাপাশি বিরোধী জোট পকাতান রকায়াত পাঁচটি রাজ্য দখল করে।
তবে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এক বছরের মধ্যেই আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং তার ডেপুটি নাজিব রাজাক প্রধানমন্ত্রী হন। পরে তিনি কেপালা বাতাসের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন, যা তার শেষ মেয়াদ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে তিনি জনজীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন এবং পরিবার ও লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন।
তার স্বাস্থ্য অবনতি হতে থাকে, এবং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খাইরি প্রকাশ করেন যে আব্দুল্লাহ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন এবং নিজের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নাম মনে রাখতে পারছেন না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: