ভারতের বানারসির জ্ঞানবাপী মসজিদে এখন চলছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব জরিপের (আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই) বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা। সপ্তদশ শতকে তৈরি জ্ঞানবাপী মসজিদটি কোনো হিন্দু মন্দির ভেঙে সেই ধ্বংসাবশেষের ওপর তৈরি করা হয়েছিল কি না তা জানার জন্যই এএসআইয়ের সমীক্ষা চলছে। ৬ আগস্ট, রবিবার তৃতীয় দিনের সমীক্ষায় নামবে এএসআই। তাদের সঙ্গে থাকবেন মুসলিম পক্ষের পাঁচজন সদস্য।
জ্ঞানবাপীতে চলমান সমীক্ষার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেছিল মসজিদ কমিটি। কিন্তু শীর্ষ আদালতে সেই আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। ফলে শুক্রবার (৪ আগস্ট) থেকে যে সমীক্ষা শুরু হয়েছে, তা আজও চলবে। ৫ আগস্ট, শনিবার সারা দিন জ্ঞানবাপী ঘুরে দেখেছেন এএসআইয়ের কর্মকর্তারা।
তাদের মূল পরিদর্শনকেন্দ্র ছিল মসজিদের সেন্ট্রাল হল। সেখানেই নামাজ পড়া হয়। এ ছাড়া মসজিদ ভবনের বেসমেন্টের কিছু অংশও পরিদর্শন করা হয়েছে।
মুসলিম পক্ষের আইনজীবী তৌহিদ খান জানিয়েছেন, মসজিদ কমিটির দুজন আইনজীবী এএসআইয়ের সমীক্ষক দলের সঙ্গে ছিলেন।
হিন্দু পক্ষের এক আইনজীবীর দাবি, জ্ঞানবাপীতে এখনো হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি পাওয়া যায়নি ঠিকই, তবে মূর্তির ধ্বংসাবশেষের ছোটখাটো টুকরো মিলেছে। শিগগিরই মূর্তিও পাওয়া যাবে বলে তাদের বিশ্বাস।
২০২১ সালের আগস্টে পাঁচজন হিন্দু নারী জ্ঞানবাপী মসজিদের অজুখানা এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেয়ালে দেব-দেবীর মূর্তির অস্তিত্ব থাকার দাবি করেন। তারা পূজার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন, তারই পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদের অভ্যন্তর পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বানারসির নিম্ন আদালত। এর পরই হিন্দুদের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নমুনাগুলোর কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়েছিল।
এরপর ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার শুনানির দায়িত্ব পান বানারসির জেলা আদালত। পর্যবেক্ষক দলের ভিডিওগ্রাফির রিপোর্টে মসজিদের অজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের মতো আকৃতির যে কাঠামোর খোঁজ মিলেছে, সেটি আসলে ফোয়ারা বলে মুসলিম পক্ষ দাবি করে।
অন্যদিকে হিন্দুপক্ষের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নমুনাগুলোর কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়েছিল। শিবলিঙ্গের বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। তারা জানাচ্ছেন, মৃত প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহাংশ এবং জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং কার্যকর হলেও এই পদ্ধতিতে কোনো প্রাচীন শিলা বা প্রস্তরখণ্ডের বয়স নির্ধারণ করা কঠিন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: