যে ১০ উপায়ে ভালো মুসলিম হওয়া যায়

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৪ আগস্ট ২০২৫ ২০:৪২

প্রতীকী ছবি প্রতীকী ছবি

ইসলাম আমাদেরকে নিজেদের উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে উৎসাহিত করে। মুসলিম মাত্রই অন্য সবার তুলনায় উত্তম হবে, এটাই হওয়া উচিত। তবে উত্তম মুসলিম হওয়ার জন্য ইসলাম আমাদের সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা ১০টি উপায় আলোচনা করব, যা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে।

'যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তারা যেন একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ জন্মায়, প্রতিটিতে একশত দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন।' (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬১)

১. আরও ধৈর্যশীল হওয়া
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘ধৈর্য ধরো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৬)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কারও জন্য ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও মহান নিয়ামত দেওয়া হয়নি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৪৬৯)

জীবনের চ্যালেঞ্জ, ব্যক্তিগত সংগ্রাম বা বাহ্যিক প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্য ধরা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ধৈর্যশীল হওয়ার মাধ্যমে আমরা মানসিক শান্তি লাভ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। কখনও রাগ বা হতাশা অনুভব করলে, গভীর শ্বাস নিন, ওজু করুন এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ুন। এটি ধৈর্য ধরতে সহায়তা করবে।

২. বেশি বেশি দান করা
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তারা যেন একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ জন্মায়, প্রতিটিতে একশত দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬১)

দান শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, একটি হাসি বা সদয় আচরণও দানের অংশ। দান আমাদের হৃদয়কে সমৃদ্ধ করে এবং সমাজে ঐক্য সৃষ্টি করে। তাই প্রতি মাসে নিয়মিত সদকা দেওয়ার জন্য একটি অংশ নির্ধারণ করুন। এমনকি অল্প পরিমাণেও নিয়মিত দান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য।

৩. বেশি করে দোয়া করা
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, (বল) আমি সত্যিই তাদের কাছাকাছি। আমি প্রত্যেক আহ্বানকারীর প্রার্থনা শুনি যখন সে আমাকে ডাকে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া হলো সকল ইবাদতের মগজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫,২৬৪)

প্রতিদিন সকাল বা রাতে ৫ মিনিট সময় নিয়ে দোয়া করুন। ‘রব্বানা আতিনা ফিদ্দুন্‌ইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবা-ন্নার’ (আমাদের প্রতিপালক, ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ দান করু এবং দোজখের আগুণ থেকে আমাদের বাঁচান)–এর মতো কুরআনের দোয়া মুখস্থ করুন।

৪. নামাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নামাজ শেষ করার পর দাঁড়িয়ে, বসে বা শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করো। আর যখন নিরাপদ হও, তখন নিয়মিত নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা. আয়াত: ১০৩)

নামাজ ইসলামের মূল স্তম্ভ এবং আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। নিয়মিত ও মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে। নামাজের সময়সূচি তৈরি করুন এবং মোবাইলে রিমাইন্ডার সেট করুন। খুশু (একাগ্রতা) বাড়াতে নামাজের আগে ওযু করে ধীরে ধীরে সুরা পড়ুন।

৫. নিজেকে শিক্ষিত করা
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পড়ো, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। পড়ো, তোমার প্রভু অতি সম্মানিত। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা আলাক, আয়াত: ১-৫)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ।’ (সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস: ২২৪)
শক্তিশালী ব্যক্তি সে নয় যে কুস্তিতে জয়ী হয়; শক্তিশালী সে, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১১৪)

ইসলাম জ্ঞান অর্জনকে উৎসাহিত করে, যা আমাদের ধর্ম, ইতিহাস ও বিশ্ব সম্পর্কে বোঝার গভীরতা বাড়ায়। প্রতি সপ্তাহে ইসলামি বই পড়ার জন্য সময় নির্ধারণ করুন। সিরাতুন নবী বা কুরআনের তাফসির পড়া শুরু করতে পারেন।

৬. রাগ নিয়ন্ত্রণ করা
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী ব্যক্তি সে নয় যে কুস্তিতে জয়ী হয়; শক্তিশালী সে, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১১৪)

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রাগ হলে দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ো, বসে থাকলে শুয়ে পড়ো। রাগ না কমলে ওযু করো।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৮২)

রাগ নিয়ন্ত্রণ আমাদের নফসের উপর আধিপত্য এবং সমাজে শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। রাগ হলে কয়েক সেকেন্ড থেমে ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পড়ুন এবং অবস্থান পরিবর্তন করুন।

৭. গীবত থেকে বিরত থাকা
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো দুষ্ট লোক তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে, তবে তার সত্যতা যাচাই করো, যাতে তোমরা অজ্ঞাতে কাউকে ক্ষতি না করো এবং পরে অনুতপ্ত হও।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ৬)

গীবত বা পরচর্চা সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং এটি অন্যের সম্মান নষ্ট করে। ইসলাম এর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে। কথোপকথনে অন্যের সমালোচনা শুরু হলে বিষয় পরিবর্তন করুন বা নীরব থাকুন। নিজেকে স্মরণ করান, গীবত আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়।

৮. বেশি বেশি কুরআন পড়া
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘একটি কিতাব (কুরআন) যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ২৯)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কুরআন সুন্দর ও সঠিকভাবে তিলাওয়াত করে, সে ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবে। আর যে কষ্ট করে তিলাওয়াত করে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৩৭)

কথোপকথনে অন্যের সমালোচনা শুরু হলে বিষয় পরিবর্তন করুন বা নীরব থাকুন। নিজেকে স্মরণ করান, গীবত আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়। কুরআন পড়া আমাদের আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ বাড়ায় এবং মানসিক শান্তি প্রদান করে। প্রতিদিন ৫ মিনিট কোরআন তিলাওয়াত করুন, এমনকি একটি পৃষ্ঠাও যথেষ্ট। বাংলা তাফসির পড়লে অর্থ বোঝা সহজ হবে।

৯. আরও ক্ষমাশীল হওয়া
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা যেন ক্ষমা করে এবং উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা নুর, আয়াত: ২২)

ক্ষমা করা কঠিন হলেও এটি হৃদয়কে হালকা করে এবং আল্লাহর রহমতের পথ খোলে। কেউ আপনার প্রতি অপরাধ করলে তাদের জন্য দোয়া করুন এবং আল্লাহর কাছে তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এটি ক্ষমার মনোভাব গড়ে তুলবে।

১০. আল্লাহকে জীবনের কেন্দ্রবিন্দু রাখুন
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার আগে আমি যে রাসুল পাঠিয়েছি, তাকে বলেছি, ‘আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাই আমার ইবাদত করো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ২৫)

তাওহিদ ইসলামের মূল ভিত্তি। প্রতিটি কাজে আল্লাহকে স্মরণ করা আমাদের জীবনকে উদ্দেশ্যপূর্ণ করে। প্রতিদিনের কাজ শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন এবং নিয়ত করুন যে আপনার কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

কীভাবে এই অভ্যাসগুলো বজায় রাখবেন?
নতুন অভ্যাস গড়ে তোলা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ছোট থেকে শুরু করুন, যেমন দিনে একটি দোয়া মুখস্থ করা বা ৫ মিনিট কোরআন পড়া। একটি জার্নালে অগ্রগতি লিখুন এবং সাপ্তাহিক মূল্যায়ন করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কর্ম নির্ভর করে নিয়তের ওপর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১)

তাই, এই অভ্যাসগুলো আল্লাহর জন্য গ্রহণ করুন। উত্তম মুসলিম হওয়ার জন্য ধৈর্য, দান, দোয়া, নামাজ, শিক্ষা, রাগ নিয়ন্ত্রণ, গীবত পরিহার, কোরআন তিলাওয়াত, ক্ষমা এবং তাওহিদের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। এই ১০টি উপায় কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আমাদের জীবনকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে। প্রতিদিন ছোট পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যান এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: