“ইসলাম-পিচ এন্ড জাস্টিজ ফর হিউম্যানিটি’’ শ্লোগানে নর্থ-আমেরিকাতে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সম্মেলন মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা – মুনা কনভেনশন ২০২৪ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত ৯ আগস্ট শুক্রবার থেকে ১১ আগস্ট রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ার কনভেনশন সেন্টারে ৩ দিনব্যাপি মুনার এই ৭ম বার্ষিক সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার মুনা কনভেনশনে আগত অতিথিদের জুমার নামাজের শেষে সম্মেলনটি শুরু হয়। তিনদিনের এই সম্মেলনের প্রতিটি পর্ব সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
ইসলাম: শান্তি ও মানবতার জন্য ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এবারের মুনা সম্মেলনে ২০ সহস্রাধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন।
কুরআন সুন্নাহ আলোচনা, জ্ঞানগর্ভ নির্দেশনা, দোয়া মোনাজাত এবং শিক্ষার দারুন সব আয়োজনে বাংলাদেশ ও আমেরিকানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪০ জন স্বনামধন্য এবং বিখ্যাত স্কলারস কনভেনশনে কুরআন এবং সুন্নাহের আলোকে বক্তব্য রাখেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবুল কালাম আজাদ বাশার, দেলোয়ার হোসাইন, ইয়াসির কাধি, ওমর সুলেমান, সিরাজ ওয়াহহাজ, হুসাইন কামানি, পেনসেলভেনিয়া স্টেট সিনেটর নিখিল সাবা এবং মূলধারার রাজনীতিবিদ তারেক খান প্রমুখ।
আমন্ত্রিত অতিথি ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের দেশ থেকে আগত ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক এবং কোরআনের নন্দিত তাফসিরকারক ও খ্যাতিমান হাদিসবিদদের প্রানোচ্ছল আলোচনা প্রাণভরে উপভোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি মুসলিম-আমেরিকার নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্টে উদীয়মান ইসলামী চিন্তাবিদ, তরুণ বক্তারাও এবারের কনভেনশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যাদের উদ্দশ্য প্রজন্মের মাঝে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য পৌঁছে দেয়া। বিশেষ করে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ইসলাম ধর্মকে আঁকড়ে রাখার কৌশল এবং ভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে মুসলিম হিসেবে নিজেদের স্বকীয়তা বজায়ে প্রজন্মরা আগ্রহী করে গড়ে তোলা।
পুরো আয়োজনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মুনা ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশিদ বলেন, মুনা ইসলাম প্রতিষ্ঠায় শিশু কিশোর, ইয়ুথ এবং পরিবারের সকলের জন্য কাজ করে।
বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ’বাংলাদেশে জুলুমবাজ শাসক পরাজিত হয়েছে। এর পেছনে ছিলো ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ। তারা অন্যায়, অবিচার, অবিবেচকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো বলেই একটি জুলুমবাজ সরকারের দ্রুত পতন সম্ভব হয়েছে ‘
কনভেনশনকে সফল ও সার্থক করতে বিভিন্ন বিভাগ ভিত্তিক একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়েছে। উক্ত টিমের চেয়ারম্যান মুনার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী, সিপিএ। এছাড়া, মিডিয়া উইং’সহ আছে একাধিক বিভাগ ভিত্তিক টিম। যাদের নিরলস প্রচেষ্টা অত্যন্ত গোছানো ভাবে অব্যাহত রয়েছে মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ-আমেরিকার তিনদের এই সম্মলনের দ্বিতীয় দিন।
মুনা কনভেনশনে মিডিয়া এবং কালচারাল বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে থাকা আনিসুর রহমান গাজী নিজের সন্তুষ্ট প্রকাশ করে বলেন এবারের আয়োজনে উপস্থিতি ছিলো প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। তিনি আরো বলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ৫ হাজারের বেশি নারী পুরুষ অংশ নেন।
আয়োজকরা জানান, মুনা’র এ কনভেনশনই প্রমাণ করেছে যে- প্রবাসী বাংলাভাষী মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হয়ে থাকে তাদের নেতৃত্বে। বিভিন্ন সিটি ও রাজ্যে বসবাসকারি বাংলাদেশি-আমেরিকানরা সপরিবারে তিনদিন ব্যাপী এই কনভেনশনে অংশগ্রহণ করতে ফিলাডেলফিয়ায় ছুটে আসেন। যাদের কথা বিবেচনা করে মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা মুনা’র নেতৃত্বদানকারিরা বিভিন্ন পর্বে ঢেলে সাজিয়েছেন আলোচনা সভা, বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তরুণ প্রজন্মের জন্য পৃথক পৃথক নানা আয়োজন।
অনুষ্ঠানের মাঝে ছিল নিয়ম মেনে বিরতী। এছাড়া, নামাজের সময়সূচিতে সব বয়সের মুসলিম উম্মাহরা সারিবদ্ধভাবে সালাত কায়েম করেছেন।
সম্মেলনে শিশু কিশোর, ইয়ুথ, নারী পুরুষদের জন্য ছিলো ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। বিশেষ করে শিশুদের জন্য শিক্ষনীয় বিষয়ের পাশাপশি ’লার্ন অ্যান্ড ফান’ এর আয়োজন করা হয়।
এছাড়া ইয়ুথ ছেলে মেয়েদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা হয়। সেইসাথে কুরআন প্রতিযোগীতা, কালচারাল ইভেন্টেরও ব্যবস্থা করা হয়।
বরাবরের মতো এবারো কনভেশনের একটি ফ্লোরজুড়ে ছিল রকমারী সামগ্রীর মেলা। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে- নারী পুরুষের পোশাক পরিচ্ছদ, অলঙ্কার, হস্তশিল্প সামগ্রী, গিফট আইটেমস ও খাবারের দোকান।
মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা মুনা একটি অলাভজনক দাওয়াহ ভিত্তিক সংগঠন। যা সূচনা হয় ৯৯০ সালে অভিবাসিদের সর্গরাজ্য নিউইয়র্কে। সমাজ সেবামূলক জাতীয় সংগঠন হিসেবে ‘মুনা’ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যক্তিগত, নৈতিক ও মানুষের জীবনের সামাজিক মানোন্নয়নের মাধ্যমে মহান আল্লাহতা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি প্রজন্মের মাঝে ইসলামের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরাও মুনার অন্যতম লক্ষ্য।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: