ইরানের কবি ও গণিতবিদ ওমর খৈয়াম

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২ জানুয়ারী ২০২৪ ১৬:৪১

প্রতীকী ছবি প্রতীকী ছবি

তার পুরো নাম গিয়াসউদ্দিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়াম নিশাপুরি। ইরানের কবি, গণিতবেত্তা, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করার পর যুবক বয়সে তিনি সমরখন্দে চলে যান এবং সেখানে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর বুখারায় নিজেকে মধ্যযুগের একজন প্রধান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ ট্রিটাইজ অন ডেমনস্ট্রেশন অফ প্রবলেমস অফ অ্যালজেবরা বইয়ে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণ সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিতে একটি পরাবৃত্তকে বৃত্তের ছেদক বানিয়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়। ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারেও তার অবদান রয়েছে।

তিনি রুবাইয়াতের জন্য বিখ্যাত। কাব্য-প্রতিভার আড়ালে তার গাণিতিক ও দার্শনিক ভূমিকা অনেকখানি ঢাকা পড়েছে। ধারণা করা হয়, রনে দেকার্তের আগে তিনি বিশ্লেষণী জ্যামিতি আবিষ্কার করেন। যদিও এর পক্ষে তেমন কোনো দলিল পাওয়া যায়নি। তিনি স্বাধীনভাবে গণিতের দ্বিপদী উপপাদ্য আবিষ্কার করেন। বহুমুখী প্রতিভার দৃষ্টান্ত দিতে বলা হলে বিশ্বসাহিত্য কিংবা ইতিহাসে যাদের নাম উপেক্ষা করা কঠিন ওমর খৈয়াম তাদের মধ্যে অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয়।

দর্শন ও শিক্ষকতায় ওমরের কাজ তার কবিতা ও বৈজ্ঞানিক কাজের আড়ালে অনেকখানি চাপা পড়েছে বলে মনে করা হয়। মধ্যযুগের মুসলিম মনীষা জামাকসারি ওমর খৈয়ামকে ‘বিশ্ব দার্শনিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে তিনি নিশাপুরে তিন দশক ধরে শিক্ষকতা করেছেন। ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমরের একটি বড় পরিচয় কবি হিসেবে। এর কারণ তার কবিতা বা রুবাইয়ের অনুবাদ এবং তার প্রচার। ইংরেজিভাষী দেশগুলোতে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়। ইংরেজ মনীষী টমাস হাইড প্রথম অ-পারস্য ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম ওমরের কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তবে খৈয়ামকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেন অ্যাডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। তিনি খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা রুবাইয়্যাতে ওমর খৈয়াম নামে প্রকাশ করেন।

ওমর খৈয়াম জন্মগ্রহণ করেন ১০৪৮ সালের ১৮ মে। তিনি ছিলেন মালিক শাহ সেলজুকের সমসাময়িক। অনেক ইতিহাসবিদের মতে সুলতান মাহমুদের মৃত্যুর কিছু আগে ওমর খৈয়ামের জন্ম হয়। এখনকার ইরানের পুরনো নাম ছিল পারস্য আর তার রাজধানী ছিল খোরাসান। ওমর খৈয়ামের বাবা ছিলেন তাঁবুর কারিগর ও মৃৎশিল্পী।

ওমর খৈয়ামের শৈশবের কিছু সময় কেটেছে অধুনা আফগানিস্তানের বালক্ শহরে। সেখানে তিনি বিখ্যাত মনীষী মহাম্মদ মনসুরীর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে তিনি খোরাসানের অন্যতম সেরা শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত ইমাম মোয়াফেফ্ক নিশাপুরির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। জীবনের পুরো সময় জুড়ে ওমর তার সব কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন। দিনের বেলায় জ্যামিতি ও বীজগণিত পড়াশোনা, সন্ধ্যায় মালিক-শাহের দরবারে পরামর্শ প্রদান এবং রাতে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি জালালি বর্ষপঞ্জি সংশোধন। সবটাতে তার নিষ্ঠার কোনো কমতি ছিল না।

ইসফাহান শহরে ওমরের দিনগুলো খুবই কার্যকর ছিল। কিন্তু আততায়ীর হাতে সুলতান মালিক শাহের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী ওমরের ওপর রুষ্ট হলে ওমর হজ করার জন্য মক্কা ও মদিনায় চলে যান। পরে তাকে নিশাপুরে ফেরার অনুমতি দেয়া হয়। নিশাপুরে ওমর গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিষয়ক তার বিখ্যাত কাজগুলো শেষ করেন।

জ্যোতির্বিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করায় সেলজুকের বাদশাহ মালিক শাহ ১০৭৩ সালে আরও কয়েকজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে ওমরকেও আমন্ত্রণ জানান একটি মানমন্দির নির্মাণের জন্য। ওমর তখন অত্যন্ত সফলভাবে সৌর বছরের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন।

১১৩০ সালের দিকে তিনি শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ হতে শুরু করেন। সে সময় থেকেই তিনি অনেকটা নিভৃত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। ১১৩১ সালের ৪ ডিসেম্বর ৮৩ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: