যুক্তরাজ্যের প্রথম মুসলিম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন শাবানা মাহমুদ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:২২

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিসভায় বড় রদবদলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই রদবদলের মধ্যে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য শাবানা মাহমুদকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের পেছনে মূল কারণ হলো উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়নারের পদত্যাগ। রায়নার স্বীকার করেছেন যে, নতুন বাড়ির উপর সম্পত্তি কর যথাযথভাবে না দেওয়ার জন্য তিনি “গভীরভাবে দুঃখিত।” শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডন।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা রদবদল মূলত স্টারমারের কর্তৃত্ব পুনঃস্থাপন এবং দলের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। রায়নারের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন এবং বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেন। ল্যামির জায়গায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে, আর কুপারের স্থানে শাবানা মাহমুদকে বিচার মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে নেওয়া হয়েছে। এই তিনজনই স্টারমারের বিশ্বস্ত ও দক্ষ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত শাবানা মাহমুদ (৪৪) লেবার দলের একজন “নিরাপদ হাত” হিসেবে বিবেচিত। বিচার ব্যবস্থার দায়িত্বে তিনি সাহসী এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে তার মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ হবে চ্যানেল ক্রসিং, আশ্রয় হোটেল এবং অভিবাসন নীতি সম্পর্কিত চাপ মোকাবেলা। ইভেট কুপার, যিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের অধীনে কাজ করেছেন, লেবারের একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে পরিচিত এবং সরকারের অভিবাসন নীতিমালা তদারকি করেছেন।

অ্যাঞ্জেলা রায়নার (৪৫) স্টারমারের দলের অষ্টম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেছেন। তাকে ৪০,০০০ পাউন্ড কর এড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। রায়নার পদত্যাগপত্রে স্টারমারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং বলেছেন, “আমি বিশেষজ্ঞ কর পরামর্শ না নেওয়ার জন্য গভীরভাবে দুঃখিত।” তিনি মন্ত্রী ও উপ-দলীয় নেতা পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন।

রায়নারের পদত্যাগ লেবার দলের উপর রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করেছে, বিশেষ করে যখন তারা জনমত জরিপে নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে দলের পিছনে রয়েছে। স্টারমারকে রাষ্ট্রীয় ব্যয় ও কর নীতি নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। রিফর্ম ইউকে’র সম্মেলনে ফারাজ বলেন, লেবার সরকার “গভীর সংকটে” রয়েছে এবং পরবর্তী নির্বাচন ২০২৭ সালে হতে পারে।

রায়নার ইংল্যান্ডের হোভে নতুন বাড়ি নিবন্ধন করেছিলেন, তবে উত্তর ইংল্যান্ডের পারিবারিক বাড়ির অংশ তার প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য একটি ট্রাস্টে বিক্রি করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন দ্বিতীয় বাড়ির জন্য উচ্চ কর দিতে হবে না, কিন্তু মিডিয়ার রিপোর্টে প্রায় ৪০,০০০ পাউন্ড কর এড়ানোর বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি অতিরিক্ত আইনি পরামর্শ নিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন এবং বাকি কর পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শাবানা মাহমুদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ তিনি প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তবে, লেবার সরকারের জন্য এই রদবদল এবং রায়নারের পদত্যাগ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে। স্টারমারের নেতৃত্বে সরকারকে এখন জনমত পুনরুদ্ধার এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: