ফাইল ছবি
২০২৫ সালটি ভ্রমণকারী, প্রবাসী এবং নীতিনির্ধারক সবার কাছে ‘নিরাপত্তা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে। সদ্য প্রকাশিত ‘নাম্বিও সেফটি ইনডেক্স’ অনুসারে পিরেনিস পর্বতমালা বরাবর ফ্রান্স এবং স্পেনের মাঝে অবস্থিত দেশ অ্যান্ডোরা ২০২৫ সালে বিশ্বের সব থেকে নিরাপদ দেশ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
অর্থাৎ, অ্যান্ডোরায় অপরাধের হার সব চেয়ে কম। শক্তিশালী নিরাপত্তা পরিকাঠামোও রয়েছে সে দেশে। মজার বিষয় হলো, ঐতিহ্যগতভাবে স্থিতিশীল এবং নিরাপদ দেশ হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য নিরাপত্তা র্যাঙ্কিংয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে, যা এই দেশগুলোতে অপরাধের হার এবং জননিরাপত্তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে তুলে ধরে।
২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলো হলো
অ্যান্ডোরা: নিরাপত্তা স্কোর ৮৪.৭
সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE): নিরাপত্তা স্কোর ৮৪.৫
কাতার: নিরাপত্তা স্কোর ৮৪.২
তাইওয়ান: নিরাপত্তা স্কোর ৮২.৯
ওমান: নিরাপত্তা স্কোর ৮১.৭

এই দেশগুলো জননিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। ফলে এই দেশগুলো পর্যটক এবং প্রবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে কার্যকর আইন প্রয়োগ, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ব্যাপক নিরাপত্তা নীতি।
২০২৫ সালে সবচেয়ে কম নিরাপদ দেশ
বিপরীতে, ‘নাম্বিও সেফটি ইনডেক্স’ বেশ কয়েকটি দেশকে তুলে ধরেছে যারা গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সাথে লড়াই করছে।
ভেনেজুয়েলা: নিরাপত্তা স্কোর ১৯.৩
পাপুয়া নিউ গিনি: নিরাপত্তা স্কোর ১৯.৭
হাইতি: নিরাপত্তা স্কোর ২১.১
আফগানিস্তান: নিরাপত্তা স্কোর ২৪.৯
দক্ষিণ আফ্রিকা: নিরাপত্তা স্কোর ২৫.৩

এই দেশগুলো উচ্চ অপরাধের হার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক কষ্ট এবং সামাজিক অস্থিরতার মতো জটিল সমস্যার মুখোমুখি, যা জনসাধারণের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে।
নিরাপত্তার দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের স্থান
২০২৫ সালের প্রতিবেদনে সম্ভবত সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের আপেক্ষিক অবস্থান। উন্নত অর্থনীতি এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও, উভয় দেশের অবস্থান অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে কম। ৫০.৮ স্কোর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৮৯তম স্থানে রয়েছে।
যুক্তরাজ্য ৫১.৭ স্কোর নিয়ে রয়েছে ৮৭তম স্থানে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে নিরাপত্তা স্কোর কমার কারণগুলো হলো
২০২৫ সালের নিরাপত্তা র্যাঙ্কিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের তুলনামূলকভাবে কম নিরাপত্তা স্কোরের পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ প্রভাব রাখে:
নির্দিষ্ট কিছু শহরাঞ্চলে সহিংস অপরাধের হার বৃদ্ধি
জননিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে
চুরি, ডাকাতি এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধের বর্ধিত রিপোর্ট
সম্পত্তিজনিত অপরাধ কমিউনিটি পুলিশিং এবং সামাজিক সংহতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে- এই বিষয়গুলো নাগরিক এবং ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা সম্পর্কে ধারণাকে প্রভাবিত করেছে, যা সামগ্রিক নিরাপত্তা সূচকের স্কোরকে প্রভাবিত করেছে।
নিরাপত্তার র্যাঙ্কিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোকে জানা একাধিক কারণে অপরিহার্য। যেমন,
ভ্রমণ পরিকল্পনা: পর্যটকরা কোথায় যাবেন সে সম্পর্কে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা র্যাঙ্কিংয়ের উপর নির্ভর করেন ।
ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত: আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ বা কার্যক্রম সম্প্রসারণের সময় নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে।
জননীতি: সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সামাজিক কর্মসূচি উন্নত করতে নিরাপত্তা তথ্য ব্যবহার করে।
প্রবাসীদের পছন্দ: বিদেশে পাড়ি জমানো লোকেরা নিজেদের এবং তাদের পরিবারের জন্য নিরাপদ পরিবেশ খোঁজে।
‘নাম্বিও সেফটি ইনডেক্স’ কি ?
নাম্বিও সেফটি ইনডেক্স বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার একটি ব্যাপকভাবে উল্লেখিত পরিমাপ। এটি অপরাধের হার, জননিরাপত্তা সম্পর্কে ধারণা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উদ্বেগ সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য সংকলন করে। ২০২৫ সালের সূচকটি ১৪৬টি দেশের মূল্যায়ন করেছে , যা বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রবণতার একটি সারসংক্ষেপ প্রদান করে।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, নিরাপত্তা স্কোরগুলো প্রতিফলিত করে যে বাসিন্দারা এবং ভ্রমণার্থীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা নিরাপদ বোধ করেন- সহিংস অপরাধ, চুরি এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্ভাবনা বিবেচনা করে। এই সূচকটি বিশেষ করে ভ্রমণকারী এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পেশাদারদের জন্য কার্যকর যারা জানতে চান যে তারা কোথায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করতে পারেন।

বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?
এদিকে অনিরাপদ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২২তম। অর্থাৎ নিরাপত্তার দিক দিয়ে ১৪৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম। অপরাধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম্বার ৬১. ৬। নিরাপত্তায় যা ৩৮.৪। অন্যদিকে সবচেয়ে অনিরাপদ দেশ ভেনেজুয়েলার অপরাধের ক্ষেত্রে নাম্বার ৮০.৭।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: