ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বাড়ছে আন্তর্জাতিক নিন্দা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৯ জুলাই ২০২৫ ১৯:৫১

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্ষোভ ও নিন্দা দিন দিন বাড়ছে। তেলআবিব দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর মদদ পেয়ে এলেও সম্প্রতি কিছু রাষ্ট্র ও গোষ্ঠী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে, নিচ্ছে কার্যকর পদক্ষেপও।

গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলের দুই চরমপন্থী মন্ত্রীকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা গাজায় ‘সহ্যের সীমা ছাড়ানো মানবিক বিপর্যয়’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে।

ইসরায়েলের আগ্রাসন রোধে সমন্বিত কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ নিতে গঠিত হয়েছে গ্লোবাল সাউথভুক্ত দেশসমূহের একটি জোট ‘হেগ গ্রুপ’।

দক্ষিণ আফ্রিকা, বলিভিয়া, কিউবা, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, কলম্বিয়া, হন্ডুরাস ও সেনেগাল—এই আট দেশের সমন্বয়ে গঠিত এই জোট আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের মান রক্ষাকে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।

সম্প্রতি কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় হেগ গ্রুপ ৩০টি দেশের অংশগ্রহণে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে— যেখানে চীন, কাতার ও স্পেনও অংশ নেয়। সেখানে ১২টি দেশ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে একমত হয়।
যার মধ্যে রয়েছে— ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ, অস্ত্রবাহী জাহাজ নিষিদ্ধ, ও ইসরায়েলি দখলদারিত্বে লাভবান কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারি চুক্তি পর্যালোচনা।

এদিকে, ইসরায়েলের দুই কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী—ইতামার বেন-গাভির ও বেজালেল স্মোত্রিচকে চলতি সপ্তাহে স্লোভেনিয়া তাদের দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর আগে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নরওয়েও একই ব্যবস্থা নিয়েছিল।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে ‘অতিরিক্ত ও অনুপযুক্ত’ বলে আখ্যা দিয়ে মে মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়।

যুক্তরাজ্য পরে ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা ‘স্থগিত’ করে এবং কিছু বসতি স্থাপনকারী সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গাজার মানবিক সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সকল বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দেয় তুরস্ক।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে।

এরপর কলম্বিয়া, চিলি, আয়ারল্যান্ড, তুরস্কসহ আরো দেশ এ মামলাকে সমর্থন জানায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আইসিজে জানায়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে। এই আদালত ইসরায়েলকে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেয়।

গোটা বিশ্বেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জনমত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ইউরোপের এক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নেমে এসেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। যুক্তরাষ্ট্রেও সিএনএন পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, মাত্র ২৩% মানুষ মনে করছে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ‘সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত’।

এমনকি জার্মানির ফিউশন ফেস্টিভ্যাল, পোল্যান্ডের ওপেনার ফেস্টিভ্যাল, এবং যুক্তরাজ্যের গ্লাস্টনবারি ফেস্টিভ্যালেও শিল্পীরা ইসরায়েলের যুদ্ধ নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছেন।

শুধু বাইরের দেশগুলোতেই নয়, ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও বাড়ছে ক্ষোভ। সংগঠন ‘স্ট্যান্ডিং টুগেদার’-এর নেতৃত্বে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি কর্মীরা যৌথভাবে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ করছেন।

পাশাপাশি ১ লাখের বেশি রিজার্ভ সেনা কর্তব্যে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।

তবে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোট এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গাজাবাসীর জন্য ‘মানবিক শহর’ গড়ার যে প্রস্তাব দিয়েছে, অনেকেই সেটিকে ‘ঘনবসতিপূর্ণ বন্দিশিবির’ বা ‘আধুনিক কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ হিসেবে অভিহিত করছেন।

ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনই মূলত দেশটির সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ঢাল। গাজায় একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় বোমা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফোনে ‘ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া’ জানালেও, সামগ্রিকভাবে ওয়াশিংটন এখনো ইসরায়েলকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, সামরিক সাহায্য ও ইসরায়েলের সমালোচকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, সব মিলিয়ে ইসরায়েল স্বল্পমেয়াদে নিরাপদ বোধ করলেও, দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা দেশটিকে তীব্র সংকটে ফেলতে পারে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: