ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সামরিক সরঞ্জামাদি যুদ্ধের আওতার বাইরে রাখতে দেশটির বিভিন্ন কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে সর্বশেষ এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই; কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা করা প্রয়োজন, তার সবটাই করব আমরা। সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর ফেলে যাওয়া কৌশলগত সামরিক সরঞ্জাম ও স্থাপনায় বোমা হামলা চালাতে বিমানবাহিনীকে অনুমতি দিয়েছি, যাতে এগুলো জিহাদিদের হাতে না যায়।’
লন্ডনভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক সানাম বাকিল বলেন, সিরিয়ার অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল। এটা অবশ্যই সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চুপ থাকা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কারণে তারা এই সুযোগ নিচ্ছে। বাকিল বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আরব ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইসরায়েল যেভাবে কথিত নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তুলছে, তাতে আরব রাষ্ট্রগুলো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর ইসরায়েলের সেনারা সিরিয়ার ভূখণ্ডে আরও ভেতরে ঢুকতে শুরু করেছেন। ইসরায়েলের দখলে থাকা গোলান মালভূমি পেরিয়ে সিরিয়ার ভেতরে ‘নিরস্ত্রীকরণ এলাকায়’ (ডিমিলিটারাইজড জোন) ঢুকে পড়েছেন ইসরায়েলের সেনারা। আল-জাজিরা বলছে, গোলান মালভূমি পেরিয়ে ইসরায়েলের সেনারা দামেস্ক অভিমুখে ১৮ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছেন।
১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় গোলান মালভূমি দখল করে ইসরায়েল। যুদ্ধ শেষে সিরিয়ার ভেতরে গোলান মালভূমি লাগোয়া সিরিয়ার একটি ভূখণ্ডকে নিরস্ত্রীকরণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইসরায়েলের সেনারা এই এলাকায় ঢুকে সামরিক চৌকিগুলোরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইসরায়েলের সেনারা ওই অঞ্চলে থেকে যাবেন। এর আশপাশের আরও কিছু এলাকাতেও থাকবেন তাঁরা। তবে সিরিয়ার একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সেনারা ইতিমধ্যে কাতানা শহরে পৌঁছে গেছেন। নিরস্ত্রীকরণ ওই অঞ্চল থেকে শহরটি বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে কিছু দূর এগোলেই দামেস্ক বিমানবন্দর।
ইসরায়েলের সেনারা কি দামেস্ক অভিমুখে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ সোশানি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ইসরায়েলের সেনারা দামেস্ক অভিমুখে যাচ্ছেন না এবং দামেস্কে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনাও নেই।
এরই মধ্যে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি ‘নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল’ গঠনের কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ইসরায়েল কাৎজ বলেন, নিয়ন্ত্রিত ওই অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থায়ী উপস্থিতি থাকবে না, তবে সেটি নিয়ন্ত্রিত হবে। বিস্তারিত না জানালেও তিনি বলেন, এই অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্য হচ্ছে, যাতে সিরিয়ার ভূখণ্ডে সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হতে না পারে।
হামলা বন্ধ ও সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান
সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া, তুরস্ক, মিসর, কাতার, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ। দেশগুলো বলছে, বাশারের পতনের পর ইসরায়েলের এমন হামলা দেশটিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। ইসরায়েলকে সিরিয়ায় হামলা বন্ধ ও দেশটির ভূখণ্ডে সেনা না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো।
সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় সর্বাত্মক হামলা ও দেশটির আরও ভূখণ্ড দখলে নেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, ইসরায়েলের এ ধরনের তৎপরতা ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় করা চুক্তির লঙ্ঘন। একই সঙ্গে ইসরায়েলের এ ধরনের হামলা গভীর উদ্বেগের।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘সিরিয়ার মানুষের স্বাধীনতা ও দেশটির সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এবং নতুন প্রশাসনকে অস্থিতিশীল করতে হামলা হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা এর জবাব দেব।’
সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার গতকাল জানান, বুধবার থেকে শুক্রবার তিন দিনের সফরে জর্ডান ও তুরস্কে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: