নারীদের মুখ ঢাকা ও পুরুষদের দাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক করলো তালেবান

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৩ আগস্ট ২০২৪ ১২:২৩

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার এবার নারীদের মুখ ঢাকার বাধ্যবাধকতা এবং পুরুষদের দাড়ি রাখার নির্দেশসহ একটি নৈতিকতা আইন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণয়ন করেছে। এছাড়া গাড়ির চালকদের গান বাজানো নিষিদ্ধ করার আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

এই নীতিগুলো ইসলামিক শরিয়া আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং তালেবানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার ২০২২ সালের একটি ডিক্রির ভিত্তিতে এ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

তালেবানের নৈতিকতা মন্ত্রণালয়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পাপ প্রতিরোধ ও পুণ্যের প্রচার’ মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত। এর আগেও একই ধরনের নৈতিকতার নিয়মকানুন প্রয়োগ করেছিল এবং ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষকে এসব নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক করেছে। তবে নতুন আইন প্রকাশের পর এসব নিয়ম আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাসের কারণে মানবাধিকার সংগঠন এবং বহু বিদেশি সরকার তাদের কড়া সমালোচনা করে আসছে।

কাবুলের ৩৭ বছর বয়সী গৃহবধূ হালিমা বলেন, প্রতিদিনই তারা সমাজ থেকে নারীদের মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা তালেবানকে নতুন আইন ও বিধিনিষেধ তৈরি করতে উৎসাহিত করছে।

পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষত ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে, তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অগ্রগতি থেমে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে নারীর অধিকার এবং মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার বিষয়ে তাদের নীতিকে দায়ী করেছে।

তালেবান বলছে, তারা নারীর অধিকারকে ইসলামিক আইন এবং স্থানীয় রীতিনীতি অনুযায়ী সম্মান করে এবং এটি একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করা উচিত।

বিচার মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বারাকাতুল্লাহ রাসোলি জানান, সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আখুন্দজাদার অনুমোদনের পর ৩৫টি ধারা বিশিষ্ট নৈতিকতা আইনটি বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর ও প্রকাশ করা হয়েছে।

বিচার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে, মন্ত্রণালয়কে (পাপ প্রতিরোধ ও পুণ্যের প্রচার) ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী ভালো কাজের প্রচার এবং খারাপ কাজ নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আইনগুলোতে নারীদের শরীর এবং মুখ পুরোপুরি ঢেকে রাখার মতো পোশাক পরিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং পুরুষদের দাড়ি কামানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি নামাজ ও রোজা পালন না করার জন্য শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির মধ্যে রয়েছে ‘পরামর্শ, আল্লাহর শাস্তির হুঁশিয়ারি, মৌখিক হুমকি, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, জনসাধারণের কারাগারে এক ঘণ্টা থেকে তিন দিন পর্যন্ত আটক এবং প্রয়োজনীয় যেকোনও শাস্তি’, বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এসব পদক্ষেপে ব্যক্তির আচরণ সংশোধন না হলে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারীর অধিকার বিভাগে সহযোগী পরিচালক হিদার বার বলেছেন, অনেক নিয়ম ইতোমধ্যে কার্যকর ছিল, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়। এখন সেগুলোকে আনুষ্ঠানিক করা হয়েছে। গত তিন বছরে যা দেখেছি, তার সঙ্গে মিল রেখে এটি একটি ধীরগতিতে এবং ধাপে ধাপে দমনমূলক কার্যক্রমের উদাহরণ।

আইনগুলোতে আরও বলা হয়েছে, গাড়ির চালকদের নারী যাত্রী পরিবহনে পুরুষ অভিভাবকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, মিডিয়াকে শরিয়া আইনের অধীনে পরিচালিত হতে হবে এবং জীবিত প্রাণীর ছবি প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

তালেবান গত তিন বছর ধরে আফগানদের ওপর এই ধরনের আইন কার্যকর করছে। গত বছরে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। যদিও এর মধ্যে অপরাধের ধরণ বা আটক ব্যক্তিদের লিঙ্গের বিবরণ দেওয়া হয়নি। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এদের প্রায় অর্ধেককে ২৪ ঘণ্টার জন্য আটক রাখা হয়েছিল।

২০২১ সালে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে আগের সংবিধান বাতিল করে। ওই সময় তারা ঘোষণা দিয়েছিল, তারা দেশটিকে শরিয়া আইন অনুযায়ী শাসন করবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: