ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাংক এইচএসবিসি ব্যাংক, ১৮৬৫ সালে হংকংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি নিয়ে স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের প্রথম ১০টি ব্যাংকের তালিকায়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই ব্যাংক এগিয়ে যেতে থাকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরির প্রকল্প নিয়ে। বিশ্বব্যাপী পরিষেবা পৌঁছানোর সুবিধা বিবেচনা করেই প্রধান কার্যালয় সরিয়ে নেওয়া হয় ব্রিটেনে। এরপর ব্রিটেনের ব্যাংকিং খাতে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে এইচএসবিসি। ব্যাংক খাতের দুর্দিনেও রয়েছে শক্তিশালী অবস্থানে, পরিণত হয়েছে লাভজনক ও দ্রুতবর্ধনশীল প্রতিষ্ঠানে। তবে সম্প্রতি ব্যাংকটিকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, শেষ পর্যন্ত বিভাজন ঠেকিয়ে এক থাকতে পারবে তো এইচএসবিসি?
এইচএসবিসির সব থেকে বড় বিনিয়োগকারী চীনা ইন্স্যুরেন্স পিং অ্যান। তারা হংকংকে কেন্দ্র করে স্বাধীনভাবে এইচএসবিসি’র কার্যক্রম চালু করতে আগ্রহী। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ প্রবলভাবে বিরোধিতা জানিয়েছে। দেখিয়েছে সিদ্ধান্ত ব্যয়বহুল ও অকার্যকর হয়ে যাওয়ার ভয়। সে প্রান্তিকতা ধরেই চলছে আলোচনার পর আলোচনা। বিনিয়োগকারীদের নিয়ে পিং অ্যান দুটি প্রস্তাব ধরে এগোচ্ছে। তার প্রধানটিই হলো এইচবিসির এশীয় উইংকে আলাদা করা। পিং অ্যান ২০১৭ সালে প্রথম বিনিয়োগ করে এইচএসবিসি ব্যাংকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে শেয়ারের ৮ শতাংশ পিং অ্যানের। পিং অ্যান পৃথিবীর বৃহত্তম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। সেই সঙ্গে রয়েছে স্বাস্থ্য ও ব্যাংকিং পরিষেবা। স্বাভাবিকভাবেই খুব সহজে কাটছে না শঙ্কা।
যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকায় উল্লেখযোগ্য গ্রাহক থাকলেও এখন পর্যন্ত এইচএসবিসির প্রায় অর্ধেক গ্রাহকই এশিয়ার, বিশেষ করে হংকং ও চীনের। চীনের গ্রাহকদের জন্য নয় শুধু, পশ্চিমা ব্যাংক খাতের দুরবস্থার সময়ও ভালো অবদান রেখেছে ব্যাংকটি। তবে বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রান্তিক অবস্থান তৈরি করেছে নতুন চাপ। এইচএসবিসি ব্যাংককে দুদিক থেকেই সামাল দিতে হচ্ছে রাজনৈতিক আবহাওয়া। খুব বেশি দিন হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ের প্রধান অর্থনৈতিক প্রধান মেং ওয়ানচোকে শাস্তি প্রদান করে। সেখানে এইচএসবিসি ব্যাংকের নেওয়া অবস্থান তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয় চীনে। যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেছে এইচএসবিসি ব্যাংক। বিপরীত দিকে হংকংয়ের এইচএসবিসি শাখা স্থগিত করে দিয়েছে হংকংয়ে খোলা আমেরিকান আইনপ্রণেতাদের অ্যাকাউন্ট। প্রতিষ্ঠানটির এশীয় প্রধান সরাসরি বেইজিং অধ্যুষিত নিরাপত্তা আইনকে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে সম্পূর্ণ বিপরীত প্রবণতা তৈরি হয়েছে খোদ ব্যাংকের ভেতরেই।
এইচএসবিসির এশীয় কার্যক্রমকে আলাদা করতে সাধ্যমতো চাপ প্রয়োগ করে চলছে পিং অ্যান। প্রধান নির্বাহী গত এপ্রিলে এইচএসবিসির ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে এইচএসবিসির ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে, হংকং অংশকে স্বাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বানানোর তোড়জোড় চলছে। এমন নয় যে ব্যাংকটির দুর্দিন চলছে। বরং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের আয়ই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অতিক্রম করেছে। গত বছরের তুলনায় শুল্ক বাদে আয় হয়েছে তিন গুণ, সংখ্যায় যা ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার।
আয়কে ইঙ্গিত করে প্রধান নির্বাহী নোয়েল কুইন মনে করেন, ব্যাংকটি বর্তমানে সবচেয়ে নিরাপদ ও দ্রুততম আয়ের নীতি গ্রহণে হাঁটছে। পিং অ্যান অবশ্য তাতে আশ্বস্ত হতে নারাজ। দাবি করা হয়েছে, লাভের চিত্রটা মূলত নিরীক্ষাগত ও সুদের হার বাড়ার কারণে। হংকং উইং আলাদা থাকবেই।
এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাংক এইচএসবিসি শেষ পর্যন্ত একক ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে তো?, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে! সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, সিএনবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: