ছবি : সংগৃহীত
গাজার খান ইউনুসের আল-মাওয়াসি এলাকার একটি জরাজীর্ণ তাঁবুতে কনকনে শীত। নেই পর্যাপ্ত গরম কাপড়, নেই মাথা গোঁজার ঠিকঠাক ঠাইটুকুও। ফলে জমে গিয়ে মোহাম্মদ নামে মাত্র ১৪ দিন বয়সী এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তীব্র ঠান্ডায় হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুটির এই করুণ মৃত্যু গাজার বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর চরম মানবেতর জীবনের বাস্তবতা।
শিশুটির মা ইমান আবু আল-খায়ের জানান, জন্মের সময় মোহাম্মদ সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল কিন্তু তাবুর ভেতরের হাড়কাঁপানো শীত সহ্য করার মতো ক্ষমতা তার ছিল না। গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও শীতের মধ্যে শিশুটি হঠাৎ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ইমান যখন তার সন্তানকে পরীক্ষা করেন, তখন দেখেন শিশুটির হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে এবং গায়ের রং ফ্যাকাশে হয়ে এসেছে। সেই রাতে বৃষ্টি আর যুদ্ধের ধ্বংসলীলার মাঝে কোনো যানবাহন না পাওয়ায় শিশুটিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়াও সম্ভব হয়নি। পরদিন সকালে একটি গাধার গাড়িতে করে তাকে রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর সকালে মোহাম্মদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তীব্র ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসেই গাজায় শীতের প্রকোপে প্রাণ হারানো শিশুদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজনে। ইমান আবু আল-খায়েরের পরিবার খান ইউনুসের পূর্বাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বর্তমানে একটি তাঁবু ও প্লাস্টিকের চাদরে ঘেরা খুপরিতে বসবাস করছে।
শোকার্ত এই মা জানান, গাজার কনকনে শীতে সামান্য কাপড় বা পলিথিন শিশুদের উষ্ণতা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বৃষ্টির পানি বিছানার নিচ দিয়ে তাঁবুর ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং চারপাশ স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। যুদ্ধ শুরুর আগে তারা একটি স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন দেখলেও এখন তাদের সন্তানরা বোমা, অনাহার আর শীতের বলি হচ্ছে। মোহাম্মদের মৃত্যুর পর এখন তার দুই বছরের মেয়ে মোনাকেও হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ইমান।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শীতকালীন এই দুর্যোগে আরও অনেক শিশু এবং বৃদ্ধের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাঁবুগুলোর ভেতরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং চিকিৎসার অভাব শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা জটিলতা বাড়িয়ে তুলছে। গত অক্টোবরে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজায় পুনর্গঠনের কোনো কাজ শুরু না হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই পরিস্থিতিতে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো বিশ্ববিবেকের কাছে প্রশ্ন তুলেছে, আর কত শিশুকে এভাবে তিলে তিলে প্রাণ দিতে হবে। শীত থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং স্থায়ী আশ্রয়ের অভাবে গাজার প্রতিটি তাবু এখন একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: