ছবি : সংগৃহীত
আফ্রিকার দেশ সুদানের সাউথ করদোফান রাজ্যের কালোগিতে বৃহস্পতিবার একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। স্থানীয় কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় কমপক্ষে ১১৪ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪৬ শিশু রয়েছেন। নিহতের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে কম জানানো হয়েছিল, তবে আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে তা ক্রমেই বাড়ছে।
হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি কিন্ডারগার্টেন। সুদানের চিকিৎসকদের জোট ‘সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক’ জানায়, এ স্কুলে প্রথমবার হামলা চালানো হয়। পরবর্তীতে উদ্ধারকাজে সেখানে জড়ো হওয়া বেসামরিক মানুষদের ওপর আরেক দফা হামলা হয়। এছাড়া শহরের হাসপাতাল ও একটি সরকারি ভবনেও বোমা হামলা চালানো হয়েছে।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেসামরিক জনগণ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালানো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ ও শিশুদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
সুদানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন উয়েত বলেন, “নিজের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিশুদের হত্যা করা শিশু অধিকার লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ। শিশুদের কখনোই সংঘাতের মূল্য চোকাতে দেওয়া উচিত নয়।” তিনি বিবাদমান সব পক্ষের প্রতি অবিলম্বে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানান।
২০২৩ সাল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে লড়াই চলতে থাকে। সেনাবাহিনী দেশের কেন্দ্র ও পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। আরএসএফ পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে উত্তর করদোফান ও দারফুর অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এই সংঘাতের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা কম দেখানো হলেও, স্থানীয় হাসপাতাল ও উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের তথ্যমতে তা ক্রমেই বাড়ছে। আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ায় আরও মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের বরাত দিয়ে আল–জাজিরা জানিয়েছে, হামলার ধারাবাহিকতা, শিশুদের ওপর সরাসরি হামলা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ক্ষতি এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় পরিণত করেছে।
সাম্প্রতিক এই হামলার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে সুদানের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুদের ওপর হামলা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কঠোর নিন্দার মুখে ফেলেছে।
সুদানের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছে, হামলার জের ধরে আহতদের হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া এবং মৃতদেহ সঠিকভাবে দাফনের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: