১৯২২ সালের ডিসেম্বর। স্বামীর সঙ্গে বড়দিন উদযাপন করতে ট্রেনে করে প্যারিস থেকে সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করেন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের স্ত্রী এলিজাবেথ হ্যাডলি রিচার্ডসন। ২৩ বছর বয়সি হেমিংওয়ে তখন সুইজারল্যান্ডে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন।
স্বামীর সমস্ত খসড়া ও পাণ্ডুলিপি একটি স্যুটকেসে ভরে রওনা হন এলিজাবেথ। ট্রেনে ওঠার আগে সাথে থাকা স্যুটকেসটি রেখে খাবার জল কিনতে যান। ফিরে এসে দেখেন ততক্ষণে চুরি হয়ে গেছে স্যুটকেসটি।
স্ত্রীর চুরি হওয়া স্যুটকেসের পাণ্ডুলিপির মধ্যেই হয়ত সুপ্ত ছিল হেমিংওয়ের লেখা প্রথম উপন্যাস।
নিউইয়র্কে একটি প্রদর্শনীতে দর্শকরা চাইলে সেই অপ্রকাশিত উপন্যাসের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।
হেমিংওয়ের কাল্পনিক সেই উপন্যাস বাদেও প্রদর্শিত হচ্ছে বহু বছর ধরে সাহিত্যপণ্ডিতদের কাছে রহস্যেঘেরা শেক্সপিয়ারের লাভস লেবার'স লস্ট-এর হারানো সিক্যুয়েল—লাভস লেবার'স ওন।
সিলভিয়া প্লাথের অর্ধ-লিখিত উপন্যাস ডাবল এক্সপোজারও সেখানে থাকবে, যা ১৯৭০ এর দশকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।
নিউইয়র্কের গরোলিয়ার ক্লাবে আয়োজিত এ প্রদর্শনীর নাম 'ইম্যাজিনারি বুকস: লস্ট, আনফিনিশড অ্যান্ড ফিকটিভ ওয়ার্কস ফাউন্ড অনলি ইন আদার বুকস'। ১৮৮৪ সালে কিছু বইপ্রেমী মিলে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এমন কিছু বইয়ের প্রদর্শনী হচ্ছে এখানে।
প্রদর্শনীর কিউরেটর রিড বায়ার্স গার্ডিয়ানকে বলেন, 'এ ধরনের একটি প্রদর্শনী আয়োজন করতে হলে মানুষকে কিছুটা কল্পনার জগতে যেতে হয়'।
বায়ার্স জানান, প্রথমে তার কাছে ৪০০ কাল্পনিক বইয়ের তালিকা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা কমিয়ে ১১৪ তে নিয়ে আসেন তিনি।
কিউরেটর বায়ার্স পুস্তক বাঁধাইকারী, প্রিন্ট ও হাতের লেখার কারিগর এবং সকল কলাকুশলীদের সাথে মিলে একসাথে কাজ করেছেন, যাতে বইগুলোকে আসল বইয়ের মতো করে প্রদর্শন করা যায়।
আর্টনেটের রিচার্ড হুইডিংটন লিখেছেন, 'দর্শকদের বইগুলোকে শুধু তাদের মলাট দেখে বিচার করতে বলা হয়েছে'। বইয়ের গল্পগুলো মূলত কাল্পনিক।
প্রদর্শনীতে রাখা বইগুলো তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে:
হারানো বই: যেগুলো একসময় ছিল, কিন্তু হারিয়ে গেছে—যেমন হেমিংওয়ের এবং শেক্সপিয়রের বই।
অসম্পূর্ণ বই: সেসব বই পরিত্যক্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যেমন সিলভিয়া প্লাথের ডাবল এক্সপোজার অথবা লর্ড বাইরনের আত্মজীবনী, যা তার বন্ধুবান্ধব ও পরিবার পুড়িয়ে ফেলেছিল।
কাল্পনিক বই: যেগুলোর বর্ণনা শুধু অন্যান্য বইয়ের মধ্যেই পাওয়া যায়।
যেমন- দ্য ফ্যান্টম টোলবুথ বইয়ে উল্লিখিত ড্রাইভারের হ্যান্ডবুক, একই নামের উপন্যাস থেকে দ্য হিচহাইকারস গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি, ডিউন বইয়ের বেনে গেসেরিটের বই, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড এ অ্যালিসের সামনে আসা দ্য সঙস অফ দ্য জ্যাবারওয়াক এবং দ্য লায়ন, দ্য উইচ অ্যান্ড দ্য ওয়ারড্রোবে বইয়ে লুসির দেখা নিম্ফস অ্যান্ড দের ওয়ে বইয়ের একটি অনুলিপি।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বায়ার্স বলেন, 'এই বইগুলো আপনাকে বাস্তব ও কল্পনার মাঝামাঝিতে নিয়ে যাবে'।
প্রদর্শনীটি নিউইয়র্ক সিটির গ্রোলিয়ার ক্লাবে ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: