কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে চার দিনব্যাপী ‘আল্লামা ইউসুফ আল-কারজাভির চিন্তাধারায় পুনর্নবীকরণ ও দিকনির্দেশনা বিষয়ক অধ্যয়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠান শুরু হয়। আট অধিবেশনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে আরব ও মুসলিম বিশ্বের খ্যাতিমান ইসলামী ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, গবেষক ও চিন্তাবিদরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৩২টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বিশ্ববরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব ড. ইউসুফ আল-কারজাভি (রহ.)-এর লেখা ১০৫ খণ্ডের এনসাইক্লোপিডিয়ার আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ৭২ হাজার পৃষ্ঠার এই রচনাসমগ্রে আল-কারজাভির দীর্ঘ চার দশক ধরে লেখা কোরআন, তাফসির, হাদিস, ফিকাহ, আকিদা, সমকালীন বিভিন্ন বিষয়সহ গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংকলন করা হয়।
মোড়ক উন্মোচন করেন কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ওমর মুহাম্মদ আল-আনসারি এবং ড. আল-কারজাভির ছেলে রুমানিয়ায় নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত ড. মুহাম্মদ আল-কারজাভি।
ইসলামী জীবন সংশ্লিষ্ট সর্বমোট ১৩টি বিষয় নিয়ে ১০৫ খণ্ডের এই এনসাইক্লোপিডিয়া লেখা হয়। এর মধ্যে ইসলামের পরিচিতি বিষয়ে ছয় খণ্ড, আকিদা বিষয়ে চার খণ্ড, ফিকাহ ও উসুলে ফিকাহ বিষয়ে ৩০ খণ্ড, ফতোয়া বিষয়ে সাত খণ্ড, উলুমুল কোরআন ও তাফসির বিষয়ে আট খণ্ড, হাদিস ও উলুমুল হাদিস বিষয়ে ছয় খণ্ড, মুসলিম উম্মাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাত খণ্ড, কবিতা ও সাহিত্য বিষয়ে আট খণ্ড, মুসলিম ঐক্য বিষয়ে দুই খণ্ড, জুমার খুতবা নিয়ে ১৩ খণ্ড, বক্তব্য নিয়ে আট খণ্ড এবং বিভিন্ন চিঠিপত্র নিয়ে দুই খণ্ড রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের ডিন ড. ইবরাহিম বিন আবদুল্লাহ আল-আনসারি বলেন, ‘মরহুম ড. আল-কারজাভি ছিলেন আধুনিক যুগের ইসলামী জ্ঞানের অনন্য কাণ্ডারি। তিনি ছিলেন অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব, যিনি একসঙ্গে বহুমুখী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকতেন। শরিয়তের সব শাখায় তাঁর সরব পদচারণ ছিল। ফিকাহর আলোকে সমকালীন পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আজীবন লিখেছেন। তাঁর হাত ধরে বিশ্বের নানা প্রান্তে অনেক ইসলামিক একাডেমি ও দাওয়াহ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কাতারে জাতীয় ধর্মীয় শিক্ষা পরিচালনায় তাঁর অবদান অসামান্য। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর এর জন্য দেশ-বিদেশের শিক্ষকদের নিয়োগ দেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিভাগের জন্য গবেষণা জার্নাল চালু করেন, যা গত চার দশকের বেশি সময় ধরে প্রকাশিত হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আহমদ আল-খলিলির মুখপাত্র সাইয়েদ আহমদ সাউদ আল-সায়ারি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব ইসলামিক স্কলারসের মহাসচিব ড. আলি কারাহ দাগি, সুদানের সাবেক আওকাফ বিষয়ক মন্ত্রী ড. ইসাম আল-বাশির, তুরস্কের ধর্মবিষয়ক বিভাগের প্রতিনিধি ড. মুহাম্মদ গুরমাজ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিশ্ববরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব ড. ইউসুফ আল-কারজাভি (রহ.) গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ৯৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব ইসলামিক স্কলার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান এবং মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী আলেম। ২০০৮ সালে ফরেন পলিসির সমীক্ষা অনুসারে তিনি ছিলেন বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
কাতারভিত্তিক টিভি-চ্যানেল আল-জাজিরার মাধ্যমে তিনি সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে ইসলামী জীবনাচার তুলে ধরেন। ইসলামের নানা বিষয়ে তিনি ১৭০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৭৭ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শরিয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ’ অনুষদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি এর প্রথম ডিন ছিলেন।
সূত্র : ইসলাম অনলাইন ডটকম
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: