নজরুল সাহিত্যে ইসলাম প্রসঙ্গ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৩ জুন ২০২৩ ০৭:২৯

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা। সমকালীন রবীন্দ্রধারার প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে তিনিই প্রথম বাংলা সাহিত্যের নতুন এক সাহিত্য শৈলীর উদ্ভাবন করেন। তিনিই প্রথম বাংলা সাহিত্যে আরবি, ফারসি, ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষার শব্দের সফল ব্যবহার করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন।

বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র এই কবি ঈসায়ী ১৮৯৯ সালের ২৫শে মে, বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ই জৈষ্ঠ্য বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কবির পিতা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মক্তবের শিক্ষক। পরবর্তীতে পিতার মৃত্যুর পর তাকেই উক্ত দায়িত্ব পালন করতে হলে ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতির সাথে তার পূর্ণ পরিচয় হওয়ার বিপুল সুযোগ ঘটে। ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ এবং পরবর্তীতে মসজিদের ইমাম ও মক্তবের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতায় নজরুলের সাহিত্যে ইসলামের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

নজরুল প্রচুর ইসলামী ভাবধারার কবিতা ও গান রচনা করেছেন। তার হাত ধরেই বাংলায় ইসলামী গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনিই প্রথম বাংলায় গজল ও কাওয়ালী গান রচনা করেন। তার রচিত অমর গজল ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে’ গানটিই ছিল গ্রামোফোন রেকর্ড কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম ইসলামী গানের রেকর্ড, যে গানটি ছাড়া বাঙ্গালী মুসলমানের ঈদ অসম্পূর্ণ।

নজরুলের আত্মচারিত্রিক কবিতা ‘বিদ্রোহী’তেও রয়েছে ইসলামী ভাবধারার প্রভাব। এর একাংশে বলা হয়েছে,

“আমি বজ্র, আমি ঈশান বিষাণে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,”

কুরআনের অংশবিশেষ কাব্যাকারে অনুবাদের কর্তৃত্ব প্রথম তারই। ১৯৩৩ সালে তার ‘কাব্যে আমপারা’ প্রকাশিত হয়।

নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনি নজরুলকে করেছে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। রাসূল (সা.) এর জীবনী নিয়ে তিনি ‘মরুভাস্কর’ নামে একটি ‘কাব্য জীবনী’ রচনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৪২ সালে তার আকস্মিক অসুস্থতায় এটি তিনি আর শেষ করে যেতে পারেননি। ১৯৫১ সালে অসম্পূর্ণ কাব্যটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া রাসূল (সা.) এর শানে তিনি অসংখ্য নাত রচনা করেছেন। ‘ত্রিভূবনের প্রিয় মুহাম্মদ’, ‘তোরা দেখে যা’, ‘আমি যদি আরবে হতাম’, ‘তৌহিদেরই মুর্শিদ আমার’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

ইসলামের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা এবং চরিত্রগুলো ঘুরে ঘুরে এসেছে তার বিভিন্ন রচনায়। এসকল ঘটনা ও চরিত্রগুলো নিয়েও রয়েছে তার স্বতন্ত্র রচনা। মোহররম, উমর ফারুক, খালেদ প্রভৃতি এর উদাহরন।

নিজের মুসলিম পরিচয়ে নজরুল অসংকোচ ও সচেতন। একটি গান নিম্নরূপ,

“ধর্মের পথে শহীদ যাহারা আমরা সেই সে জাতি
সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি”

 

আল্লাহর কাছে তিনি প্রার্থনা করেছেন মুসলমানদের পুর্নজাগরনের জন্য।

“তওফিক দাও খোদা ইসলামে,
মুসলিম জাঁহা পুন হোক আবাদ,”

 

মুসলমানদেরও তিনি ঘুম ভেঙ্গে নব উদ্দীপনায় জেগে উঠার আহবান জানিয়েছেন।

“বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা শির উঁচু কর মুসলমান
দাওয়াত এসেছে নয়া জামানার ভাঙা কিল্লায় ওড়ে নিশান”

 

১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট, বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ই ভাদ্র বাংলা সাহিত্যের এই রাজপুত্র ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার একটি গানে তিনি মসজিদের পাশে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার ইচ্ছানুসারেই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলাম মুসলিম পূনর্জাগরণের কবি ছিলেন, কিন্তু তিনি কোন ধর্মবেত্তা ছিলেননা। আলেমদের মত তিনি মুসলমান জাতিকে ধর্মীয় নসিহত করতে চাননি, বরং তিনি চেয়েছিলেন মুসলমানদের সার্বিক পূনর্জাগরণ, যাতে তারা আবার বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এলক্ষ্য অর্জনে তিনি মুসলমানদের অনুপ্রেরণা প্রদানের জন্যই কলম ধরেন, ‘খাদেমুল ইসলাম’ বলে নিজেকে জাতির নিঃস্বার্থ খেদমতে নিয়োজিত করেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: