মুসলিম সভ্যতায় সাহিত্য সম্মাননা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২০ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৩৫

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি
সাহিত্যের সবচে মূল্যবান পুরস্কার ধরা হয় নোবেল পুরস্কারকে। নোবেল পুরস্কার প্রবর্তিত হয় ১৯০১ সালে। কিন্তু সাহিত্যিকদের সম্মাননার এই প্রচলন অনেক পুরোনো। আমরা ইসলামি সভ্যতায় এই প্রচলন বেশ প্রবলভাবে হাজির দেখতে পাই। আমেরিকান সভ্যতার ইতিহাসবিদ উইল ডুরান্ট ‘কিসসাতুল হাজারা’ গ্রন্থে লিখেন, সমসাময়িক সাহিত্য পুরস্কারগুলো একটি সভ্যতাগত প্রভাব, যা ইসলামী বিশ্ব থেকে ইউরোপীয়দের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল।
 
এই লেখায় দেখাব, ইসলামি সভ্যতায় সাহিত্যিকরা কিভাবে পুরস্কৃত হতেন। পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে কী মানদণ্ড ছিল, কোন প্রক্রিয়ায় পুরস্কার দেয়া হতো। আরব সমাজে সাহিত্যিকদের মূল্যায়ন কেমন ছিল, তাও ফুটে উঠবে এই লেখায়।
 
 
আরব সমাজে কবিদের অবস্থান
 
শরহে দিওয়ানে হামাসায় আবু আলী মারজুকি লিখেছেন, আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে কোনো কবি-প্রতিভা জন্ম নিলে তাকে নিয়ে তোড়জোড় হতো বেশ। কারণ কবিতা ছিল শান্তি ও যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। গোত্রগুলোর মধ্যে পুরুষ এবং টাকা যেমনভাবে বরিত হতো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে, তেমনি কবিও বরিত হতেন। কবিদের দিয়ে আরবরা টাকা কামাতো না, বরং কবিদের কবিতা তাদের প্রতিরক্ষাকে সম্পূর্ণ করে তুলতো।
 
এ কারণেই ইবনে রাশিক কায়রাওয়ানি তার ‘আল-উমদা’ গ্রন্থে আরব কবিদের মর্যাদা নির্দেশ করে লিখেন, আরবের কোনো গোত্রে একজন কবিপ্রতিভা দেখা দিলে তারা সবাই উৎসব শুরু করতো। কারণ, কবির কবিতা তাদের সম্মানের সুরক্ষা, ইতিহাসের ধারক। তার জানতো, কবির কবিতাই তাদের আলোচনা হাজির রাখবে ইতিহাসের পাতায়।
 
ইসলামি সাম্রাজ্যে আরবরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন কবিদের কাজ পরিবর্তন হয়। উপজাতির সুরক্ষা, বংশের গৌরব-বয়ানের পরিবর্তে তাদের কাজ হয়, ইসলামি আকিদার পক্ষে কথা বলা। ইসলামি দাওয়াতের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত জবাব দেয়া। এই কবিদের মধ্যে রাসুলের সবচে প্রিয় ছিলেন হাসসান ইবনে সাবেত রাজি.। হাসসানের কবিতা শুনে রাসুল প্রশান্তি বোধ করতেন।
 
ইবনে আবদিল বার ইসতিআব গ্রন্থে লিখেন, সমসাময়িক কবিদের মধ্যে হাসসান বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত ছিলেন তিনটি কারণে। এক. জাহেলি যুগে তিনি ছিলেন আনসারদের কবি। দুই. নবিজির যুগে তিনি ছিলেন নবিজির কবি। তিন. ইসলামি যুগে তিনি ছিলেন ইয়ামানের কবি।
 
খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগেও কবিদের এই মর্যাদা বহাল ছিল। ইবনে হাজার ইসাবা গ্রন্থে লিখেন, হজরত ওমর রাজি. কুফার গভর্নর মুগিরা ইবনে শোবাকে বলেছিলেন, আপনার আগের কবিদের জিজ্ঞেস করুন, তারা ইসলাম সম্পর্কে কী বলেছে? এই জরিপে সাহাবি কবি লাবিদ বিন রাবিয়া নগদ পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার বেতন বেড়ে গিয়েছিল ৫০০ দিরহাম।
 
 
উচ্চতর পৃষ্ঠপোষকতা
 
ইসলামি শাসকদের এই পৃষ্ঠপোষকতা সাহিত্য মূল্যায়নে গতি এনে দেয়। হিজরি তৃতীয় শতাব্দি /খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীর শুরু থেকে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের যুগ শুরু হলে গতি আরও বেড়ে যায়। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ, কিংবা তাদের দেশের সমৃদ্ধি, অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্যই হোক, স্বাধীন রাষ্ট্রের শাসকরা হয়ে উঠেন কবি-সাহিত্যিকদের সবচে বড় পৃষ্ঠপোষক। তারা তাদের দরবারে কবি-সাহিত্যিকদের জায়গা দেন, তাদেরকে পুরস্কৃত করেন।
 
ইয়াকুত হামাভি ‘মুজামুল উদাবা’ গ্রন্থে লিখেন, বুওয়াইহি মন্ত্রী ইবনে আব্বাদ বলতেন, এক লক্ষ আরবি এবং ফারসি কবিতায় আমার প্রশংসা করা হয়েছে। আমি আমার অনেক সম্পদ কবি-সাহিত্যিকদের পেছনে ব্যয় করেছি।
 
হিজরি পঞ্চম শতাব্দি /খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দিতে কবির সংখ্যা বিপুল সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। ‘আল ওয়াফি বিল ওফায়াত’ গ্রন্থে ঐতিহাসিক সাফাদি বলেন, সেলজুক মন্ত্রী নেজামুল মুলক ছিলেন প্রশংসিত। তার প্রশংসা করেছে ৫ হাজারের বেশি কবি। তার প্রশংসায় লেখা হয়েছে তিন লাখ কবিতা।
 
সিবত ইবনুল জাওজি ‘মিরআতুয যামান’ গ্রন্থে লিখেন, আব্বাসি মন্ত্রী ইবনে জাহির কবি-সাহিত্যিকদের মূল্যায়ন করতেন বেশ। এক লাখ কবিতায় তার প্রশংসা করা হয়েছে। প্রশংসাকারী কবিদের সংখ্যা দশ হাজার। যাহাবি ‘তারিখুল ইসলামে’ লিখেন, সেলজুক মন্ত্রী আবু তালিব আল-সুমাইরিমির প্রশংসা করেছেন এক হাজার কবি।
 
 
মন্ত্রীদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিযোগিতা
 
প্রথম দিকে সাহিত্যের প্রতিযোগিতাগুলো রাজপুত্র এবং সিনিয়র মন্ত্রীদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের দরবারে অনুষ্ঠিত হতো। পুরস্কার দেয়া হতো মোটা অংক। ইবনে জাফের আল-আজদী লিখেন, আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের দরবারে উপস্থিত হলেন জারির, ফারাজদাক, আখতাল। দরবারে আনা হয় ৫০০ দিনারের একটি থলে। আবদুল মালিক বলেন, প্রত্যেকেই নিজের প্রশংসা করে একটি পঙক্তি বলো। যে জিতবে, এই থলে সে পাবে। অবশেষে এই থলে জিতেন জারির।
 
ইস্পাহানি ‘আল আগানি’ গ্রন্থে কবি জারিরের অভিজ্ঞতা লিখেন, ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়ার দরবারে গেলাম। তখন আমি যুবক। গিয়ে দেখি সেখানে কবিদের জমায়েত। দরবার থেকে একজন ঘোষক এসে বললো, আমিরুল মুমিনিন বলেছেন, যার একটি কবিতাও আমরা শুনিনি, সে দরবারে প্রবেশ করতে পারবে না। আমি তার হাতে একটি কবিতা দিয়ে বললাম, আমিরুল মুমিনিনকে এটা দেখাবে। সে ভেতরে চলে গেলো। ফিরে এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলো। এরপর আমিরুল মুমিনিনকে কবিতা শুনিয়ে আমি পুরস্কারও পাই সেদিন।
 
আবদুল ওয়াহিদ মারাকেশি লিখেন, সালাম ইবনে আব্দুল্লাহ বাহেলি মুতামিদের কাছে এসে তাকে প্রশংসা করে কবিতা শোনালেন। তার বয়স তখন বিশ। মুতামিদের কবিতা পছন্দ হলে তিনি তাকে পুরস্কৃত করেন; এবং কবিদের তালিকায় তা নাম লিপিবদ্ধ করে রাখার নির্দেশ দেন।
 
 
মেধা অনুসারে পুরস্কার
 
ইবনে কুতাইবা দিনাওয়ারি ‘কবি ও কবিতা’ গ্রন্থে লিখেন, কবিদের মেধা বিবেচনা করে পুরস্কার দিতে শুরু করেন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ। তিনি কবি কুসাইর বিন আবদুর রহমানকে দেন তিনশ দিরহাম। আহওয়াসকে দেন তিনশ দিরহাম। নুসাইবকে দেন দেড়শ দিরহাম।
 
পরবর্তীতে কবিতার মান অনুযায়ী পুরস্কারের ধারা চালু হয়ে যায়। ইমাদ ইস্পাহানি ‘মালিকুল আরব’ গ্রন্থে লিখেন, ইবনে দুবাইস আল-আসাদি কবিতার সৌন্দর্য অনুযায়ী পুরস্কার দিতেন। প্রত্যেক কবির স্তর অনুযায়ী তার কাছে প্রত্যেকের পরিমাণ নির্ধারিত ছিল।
 
কবিরা যদি ভিনদেশী হতো কিংবা এমনিতেই কখনও কখনও স্তর বিন্যাসের দায়িত্ব একজনের কাছে দেয়া হতো। ঐতিহাসিক সাফাদি লিখেন, কিবা আবু নাওয়াস ইরাকের একদল কবির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যখন তারা মিসরে এসেছিল। আব্বাসি গভর্নর আবু নসর খুসাইব তাদের সম্মানে একটি সভার আয়োজন করেন। তিনি আবু নাওয়াসকে দায়িত্ব দেন, কবিদের স্তর অনুযায়ী যেন তিনি সবার পুরস্কার নির্ধারণ করে দেন।
 
 
বিচারকের ভূমিকায় নারীরা
 
আরবি সাহিত্য প্রতিযোগিতায় কেবল পুরুষদের আধিপত্য ছিল এমন নয়, বরং নারীরাও সাহিত্য প্রতিযোগিতার বিচারক হতো।
 
ইস্পাহানি ‘আল আগানি’তে লিখেন, হোজানের কবিরা একবার প্রতিযোগিতা করেছিল কবিতার। কিন্তু তারা কোনো সমাধানে পৌঁছতে পারছিল না। সবাই সবার কবিতাকে শ্রেষ্ঠ বলছিল। মিমাংসা করার জন্য তারা বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয় লায়লা আখলিয়াকে (৭০৪ হি)। তিনি তাদের মধ্যে আউস বিন গালফাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। প্রতিযোগীদের মধ্যে আরও ছিলেন নাবেগা এবং হুমাইদ।
 
সাহিত্য প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য একটি নাম সুকাইনা বিনতে হুসাইন (১১৭ হি)। সিবত ইবনুল জাওজি লিখেন, কবি-সাহিত্যিকরা তার বাড়িতে আসতো। তিনি কবিতার প্রতিযোগিতা নিতেন। মেধা অনুযায়ী পুরস্কার দিতেন এক হাজার দিনার। ا বর্তমানের হিসেবে ২ লাখ ডলার। এর বেশিও দিতেন। তার বাড়িতে আসতো ফারাজদাক, জারির, কুসাইর, নুসাইব প্রমুখ।
 
ইবনে আবদে রাব্বিহি ‘আল ইকদুল ফরিদ’ গ্রন্থে লিখেন, আব্বাসি খলিফা মাহদির মেয়ে আয়েশা কবি ছিলেন। তিনি একজন বার্তাবাহকের হাতে একটি কবিতা দিয়ে কবিদের নিকট পাঠালেন। যাদের মধ্যে আল-গাওয়ানিও ছিলেন। বার্তাবাহক এসে তাদেরকে বললেন, মালিকা বলেছেন, যারা তার এই কবিতা পূর্ণ করে দিতে পারবে, তাকে ১০০ দিনার দেয়া হবে। এই ১০০ দিনার জিতেছিলেন আল-গাওয়ানি।
 
 
প্রতিযোগিতার বিচারক কারা
 
সাধারণ সালিশির মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নির্ধারণ করা হতো। সালিশে যারা থাকতো, তারাই প্রতিযোগিতা পরিচালনার কৌশল, মূল্যায়নের প্রক্রিয়া, আবেদনকারীদের পাঠের গুণমান, স্তর অনুসারে র‌্যাঙ্কিং, অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিত্বদের পুরষ্কার প্রদানের মাপকাঠি নির্ধারণ করতো।
 
দিনওয়ারি তার ‘কবি ও কবিতা’ বইয়ে এই প্রতিযোগিতায় বিচারের নমুনার একটি মডেল তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ওকাজ বাজারে নাবেগা লাল একটি জিনিসে আঘাত করতো। কবিরা তখন তার কাছে এসে তাকে কবিতা শোনাতো। কবিতা শোনাতো আবু বাসির, তারপর হাসসান বিন সাবেত, তারপর খানসা সালামিয়া। নাবেগা খানসাকে বললেন, আল্লাহর কসম, আবু বাসির না থাকলে তুমিই বিজয়ী হতে।
 
সম্ভবত প্রাক-ইসলামী সাহিত্য প্রতিযোগিতায় সেই সালিশি ঐতিহ্য বসরার মিরবিদ এবং কুফার কানাসা বাজারে টিকে ছিল।
 
যারা সালিশি করতেন, তাদের মধ্যে বিখ্যাত কবি আবু তামাম। হামাবি লিখেন, তিনি বসতেন, কবিরা তার কাছে এসে কবিতা শোনাতো। একবার তিনি কবি বুহতারিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন।
 
মিশরীয় ম্যাগাজিন “রিসালা” (১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮8 ) এর ৭৬৩ তম সংখ্যায় লেখা হয়েছে, একবার ইবনে হাজারকে এক সাহিত্য প্রতিযোগিতার বিচারক বানানো হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল তৎকালীন শ্রেষ্ঠ তিন কবি। তাদের মধ্যে তিনি ইবনে হাজ্জাহ আল-হামাভিকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
 
কখনও কখনও সরাসরি মেধা যাচাই করা হতো। দেয়া হতো বিভিন্ন শর্ত। ইবনে রাশিক বলেন, একদল কবি আব্বাসি খলিফা মুতাসিমের দরবারে এল। দরবারের একজন ঘোষক ঘোষণা করলো, অমিরুল মুমিনিন সম্পর্কে মানসুর নুমাইরির মতো কবিতা লিখতে পারবে কে?
 
ইবনে খাল্লিকান লিখেন, বুওয়াইহি মন্ত্রী ইবনে আব্বাদ বলেন, এটা আবশ্যক, আমার দরবারে যে আসতে চায়, তাকে বিশ হাজার আরবি কবিতা মুখস্থ করে আসতে হবে।
 
প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রকৃত প্রতিযোগিতা শুরু হতো। জহিরুদ্দিন বায়হাকি ‘তারিখে বায়হাকিতে’ লিখেন, বুওয়াইহি মন্ত্রী ইবনে আব্বাদের দরবারে কবিরা এল। বিভিন্ন খবারের আয়োজন করা হলো। সবাই খাবার শুরু করার পর যখন মিষ্টির পর্ব এল, মন্ত্রী বললেন, সবাই মিষ্টি নিয়ে একটি করে পঙক্তি বলেন। সবাই কবিতা বলছিল। কবি আহমদ ইবনে ইবরাহিম বসে বসে আঙুল খুটছিলেন। তার পালা এলে তিনি বললেন, সবার কবিতায় ভুল ছিল। এরপর তিনি সবার ভুল যুক্তি সহকারে তুলে ধরে নিজে নতুন একটি পঙক্তি বললেন। ফলে তিনি প্রচুর পুরস্কার পান।
 
 
পদ্য নয়, গদ্যেও
 
ইসলামি সভ্যতায় আরবি কবিতা একাই পুরস্কার ও উপহার দখল করেনি; গদ্যেরও সেখানে দখল রয়েছে। গদ্য রচনার জন্য পুরস্কারের ঐতিহ্য ইসলামি সভ্যতায় শুরু হয়েছিল। আরবি সাহিত্যিক জাহিজ তিনটি বইয়ে পুরস্কার পেয়েছিলেন বর্তমানের হিসেবে তিন মিলিয়ন ডলার।
 
জাহিজ বলেন, ‘আল হায়ওয়ান’ বইটি আবদুল মালিকের কাছে দিলে তিনি দিলেন ৫ হাজার দিনার। ‘আল বয়ান ওয়াত তাবয়িন’ বইটি ইবনে আবি দাউদের কাছে দিলে তিনি দিলেন ৫ হাজার দিনার। ‘আয যার ওয়ান নাখল’ বইটি ইবরাহিম ইবনে আব্বাসের কাছে দিলে তিনি দিলেন ৫ হাজার দিনার।
 
ইসলামী সভ্যতা বই এবং অনুবাদের জন্য “রাষ্ট্রীয় পুরস্কার” এর প্রবর্তক। ঐতিহাসিক ইবনে আবি উসাইবা ‘উয়ুনুল আনবা’ গ্রন্থে লিখেন, যখন আব্বাসি খলিফা আল-মামুন আরবি ভাষায় গ্রীক বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ অনুবাদ করার সংকল্প করেছিলেন, হুনাইন ইবনে ইসহাককে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাকে বলেছিলেন, তার বইয়ের ওজনের সমপরিমাণ সোনা তাকে দেয়া হবে।
 
ইয়াকুত আল-হামাবী বলেছেন, ইস্পাহানি তার কিতাব আগানি সাইফুদ্দৌলা ইবনে হামদানকে দিলে তিনি তাকে এক হাজার দিনার দিলেন। ইস্পাহানি তখন বলেছিলেন, তরবারি ছোট হয়ে গেছে, তা আরও দ্বিগুণ হওয়ার যোগ্য!!
 
 
প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন
 
হিজরি সপ্তম শতাব্দি / ১৩শ খ্রিস্টাব্দে আমরা দেখতে পাই, আইয়ুবী রাজ্যের সুলতানগণ কবি সাহিত্যিকদের উৎসাহ প্রদানে যত্নবান ছিলেন। আইয়ুবী সুলতান আমজাদ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনে ওয়াসেল হামাভি বলেন, তিনি ছিলেন মহান বাদশা, গুণী-বিদ্বান। তিনি আলেম এবং কবি সাহিত্যিকদের ভালোবাসতেন। তাদেরকে অনেক উপহার দিতেন। আইয়ুবী সুলতানদের মধ্যে তিনিই সবচে বেশি কবিতা বুঝতেন।
 
একই শতাব্দীতে গুরুত্বপুর্ণ বই মুখস্থ করার জন্য পুরস্কার বরাদ্দ করা একটি শিক্ষামূলক নীতিতে পরিণত হয়। যাহাবি লিখেন, সুলতান মুআজ্জম হানাফি মাজহাবের কঠিন অনুসারী ছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, যে ইমাম মুহাম্মদের জামে কাবির মুখস্থ করতে পারবে, তাকে দুইশ দিনার, বর্তমানের হিসেবে ৪০ হাজার ডলার পুরস্কার দেয়া হবে।
 
ইবনে খাল্লিকান লিখেন, সুলতান মুআজ্জম আরও ঘোষণা করেছিলেন, যে যামাখশারির মুফাসসাল কিতাবটি মুখস্থ করতে পারবে, তাকে একশ দিনার এবং একটি দামি জামা উপহার দেয়া হবে।
 
সৃজনশীল লেখকদের পুরস্কার হিসেবে কেবল টাকাই দেয়া হতো না, বরং উচ্চ সরকারী পদেও তাদের নিয়োগ দেয়া হতো। এর একটি উদাহরণ হল, মসুল পোস্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে কবি আবু তামামের নিয়োগ। এ পদে তিনি আমরণ বহাল ছিলেন।
 
তাজুদ্দিন ইবনে সাঈ ‘দুররে সামিনে’ ফকিহ সাহিত্যিক জাফর ইবনে মাক্কি শাফেয়ির জীবনী তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, জাফর ছিলেন সাহিত্যের মানুষ। তিনি কবিতা লিখতেন। তাকে বাগদাদের মাদরাসায়ে নেজামিয়ার কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে নাসির লিদিনিল্লাহ তাকে পোস্ট বিভাগের প্রধানের চেয়ারে বসান। তিনি সংগীতের উপর একটি বই লিখেছেন, করেছেন কবিতার সংকলনও।
 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: