আব্বাসীয় রাজপরিবারের প্রতিভাবান নারী কবি : উলাইয়া বিনতে মাহদি (রহ.)

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৪১

ছবি : প্রতীকী ছবি : প্রতীকী




আব্বাসীয় রাজকন্যা উলাইয়া বিনতে মাহদি (রহ.) ছিলেন একজন আধ্যাত্মবাদী নারী কবি। যিনি একজন কবি ও গীতিকার হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। উলাইয়া ছিলেন তৃতীয় আব্বাসীয় খলিফা মাহদির কন্যা। উলাইয়ার অপর নাম ছিল ‘আব্বাসা’।


তাঁর মা মাকনুনাহও সংগীত সাধনা করতেন। ১৬০ হিজরি মোতাবেক ৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে শাহজাদি উলাইয়া জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু উলাইয়া ছোট থাকতেই মাহদি ইন্তেকাল করেন। এরপর সত্ভাই হারুনুর রশিদ তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তিনি ছিলেন সুন্দর চেহারা ও সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী। মেধা ও প্রতিভায় ছিলেন ঈর্ষণীয়।
তাঁর সত্ভাই ইবরাহিম বিন মাহদিও কবিতা চর্চা করতেন, তবে উলাইয়া (রহ.) সবাইকে ছাড়িয়ে যান, বরং ইবরাহিম তাঁর কাছেই কবিতা রচনার রীতি-পদ্ধতি ও কৌশল শিখেছিলেন। আব্বাসীয় রাজপরিবারে যত নারী কবিতা রচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে উলাইয়া (রহ.) ছিলেন সবচেয়ে প্রতিভাবান।


তিনি ‘মুহদাত’ রীতিতে (আব্বাসীয় আমলে সৃষ্ট কবিতা রচনার বিশেষ পদ্ধতি) ছোট ছোট গীতি কবিতা বেশি রচনা করতেন। তাঁর কবিতায় আল্লাহপ্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও মাতৃভূমির অনুরাগ প্রাধান্য পেত। তবে খলিফা হারুনুর রশিদের প্রশংসা এবং তাঁর শত্রুদের তীব্র নিন্দা করেও তিনি বেশ কিছু কবিতা রচনা করেছেন।
আল্লামা আবুল ফারাজ ইস্পাহানি কিতাবুল আগানিতে লিখেছেন, উলাইয়া একজন প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী ছিলেন। রাজমহলে তাঁর নীরব অথচ জোরালো প্রভাব ছিল।


সুযোগ থাকার পরও তিনি কখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেননি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি লাজুক ও ধার্মিক ছিলেন। কঠোরভাবে ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে চলতেন এবং নিজেকে আড়ালে রাখতে ভালোবাসতেন। তাঁর প্রবল ক্ষমতাধর ভাইদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কখনো খারাপ হয়নি।
উলাইয়া বিনতে মাহদি (রহ.)-এর কাছে কাব্যচর্চা ছিল আল্লাহর প্রেম সাধনার মাধ্যম। এ জন্য তিনি কখনো তাঁর কবিতার প্রসার কামনা করেননি। একান্ত পারিবারিক পরিমণ্ডলেই তা সীমাবদ্ধ ছিল। ভাবি জুবাইদা বিনতে জাফরের (হারুনুর রশিদের স্ত্রী) সৌজন্যে একটি প্রেমের কবিতা রচনা করেছিলেন। হারুনুর রশিদের নির্দেশে কবিতাটি দুই হাজার দাসী গেয়েছিল।

উলাইয়া (রহ.)-এর স্বামী মুসা বিন ঈসাও একজন আব্বাসীয় রাজপুত্র ছিলেন। তিনি মক্কা, মদিনা, দামেস্ক, মিসর, কুফা, আর্মেনিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। উলাইয়া (রহ.)-এর আগেই তিনি মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ভাই ও ভাতিজাদের সঙ্গেই জীবন কাটান।

২১০ হিজরি মোতাবেক ৮২৫ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে এই মহীয়সী নারীর মৃত্যু হয়। খলিফা মামুন তাঁর জানাজার ইমামতি করেন। আল্লাহর ভালোবাসায় রচিত তাঁর একটি পঙক্তি হলো, ‘আমি আমার প্রিয়তমর নাম উচ্চারণ করি এবং তা বারবার পুনরাবৃত্তি করতে থাকি/যে নাম আমি ভালোবাসি তা উচ্চারণ করে মহাবিশ্বের শূন্যতা পূরণ করি।’

কবি ও ঐতিহাসিক আবু বকর মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া সুলি বলেন, ‘আমি আব্বাসীয় রাজবংশে তাঁর মতো কোনো শাহজাদি খুঁজে পাইনি। তিনি তাঁর পবিত্রতার দিনগুলোর বেশির ভাগ সময় নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন এবং আল্লাহর জিকিরে কাটিয়ে দিতেন। যখন (ঋতুস্রাবের কারণে) ইবাদত করতে পারতেন না, তখন আল্লাহর ধ্যানমগ্ন হয়ে কবিতা ও গান গাইতেন। বাদশাহ হারুনুর রশিদ তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান করতেন এবং তাঁকে নিজের খাটে বসাতেন। তিনিও ভালোবাসার উপযুক্ত প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তাঁর একটি কবিতা সমগ্র আছে। তাঁর কবিতায় সৃজনশীলতা ও ভিন্নতা পাওয়া যায়।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: