জনৈক দরবেশের কারামত - শেখ সাদি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১২ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩৩

জনৈক দরবেশের কারামত - শেখ সাদি : সংগৃহীত ছবি জনৈক দরবেশের কারামত - শেখ সাদি : সংগৃহীত ছবি

 


এক বাদশাহ্ অত্যন্ত কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ল। তার অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাঁর হিতাকাঙ্খীদের মধ্য হতে জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে গিয়ে বললো, হে পরাক্রমশালী বাদশাহ্! এ শহরে এমন একজন পবিত্র মানুষ আছেন, যার দোয়া রদ হয় না, মঞ্জুর করা হয়। লোকেরা তার কাছে যেকোন কঠিন মুসিবত নিয়ে উপস্থিত হোক না কেন, তারা তার সুফল লাভ করেন। আপনি তাকে ডেকে এনে দোয়া নিন, হয় তো বা আল্লাহর মেহেরবানীতে আপনি রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবেন। তাঁর নেক দোয়ার বরকতে আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার কথা বাদশাহ্র পছন্দ হলো। তখনই বাদশাহ্ তার খাদেমকে প্রেরণ করে দরবেশকে রাজপ্রাসাদে ডেকে আনলেন এবং তার কঠিন রোগের কথা বলে দোয়া চাইলেন। অতিবৃদ্ধ দরবেশব্যক্তি পিঠ কুঁজো করে বাদশাহকে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক ন্যায়বিচারক এবং অতিশয় মেহেরবান।

হে বাদশাহ্! তুমি আল্লাহ তায়ালার দান দেখ এবং তুমিও দান কর। তুমি তো প্রজাবৃন্দের ওপর এহসান কর নি। তাহলে বল? আল্লাহ্ তায়ালা তোমার প্রতি এহসান করবেন কেন? আগে তুমি তোমার কৃত পাপকাজের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাও। তারপর সৎ ও নেককার বুযুর্গ লোকের নিকট দোয়া প্রার্থনা করো । বল, হে বাদশাহ্ ! দরবেশদের দোয়া কীরূপে কবুল হবে? যতক্ষণ পর্যন্ত মজলুমেরা তোমার জন্য অভিশাপ দিতে থাকবে। মুমূর্ষু বাদশাহ্ দরবেশের কথা শুনে অত্যন্ত লজ্জিত ও সংকোচবোধ করলেন। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মনে মনে ঠিক করলেন- হ্যাঁ, যা বলেছেন- যথার্থই বলেছেন। তারপর বাদশাহ্ হুকুম দিলেন, বন্দিশিবিরে যেসব কয়েদি আছে, তাদেরকে মুক্ত করে দাও। সৈনিকগণ বন্দিদেরকে মুক্ত করে দিলো এবং সেই দরবেশ দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করে অনুনয়-বিনয় সহকারে মহান প্রতিপালকের দরবারে দু'হাত তুলে দোয়া করলেন— হে সুউচ্চ আসমানের অধিপতি! আপনি আপনার রণকৌশলে তাকে বন্দি করেছেন, এখন ঐ অধমকে সন্ধিসূত্রে রহম করুন, তাকে মুক্ত করে দিন। দরবেশ এমনভাবে দোয়া করলেন যে, বাদশাহ্ তখনই সুস্থ হয়ে উঠে হাঁটতে লাগলেন । দরবেশের এরূপ আশ্চর্যজনক কারামতি অবলোকন করে বাদশাহ্ আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। মণি-মুক্তার ভাণ্ডার উম্মুক্ত করে দিলেন। মুক্তার মালা গেঁথে বুজুর্গের মাথা হতে পা পর্যন্ত সুসজ্জিত করে দিলেন। আল্লাহর আশেক সেই দরবেশ সত্যকে মিথ্যা দ্বারা ঢেকে রাখা মোটেই পছন্দ করলেন না। তার উপহার সবই খুলে রেখে বললেন, এগুলো চাই না, আমার এর দরকার নেই। আমার এটাই কামনা যে, তুমি এ-রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কর এবং পুনরায় জুলুমের দিকে প্রত্যাবর্তন না করো। পুনরায় জুলুমের দিকে পা বাড়ালে আর রেহাই নেই। কেননা, আল্লাহপাক বলেন- আমার ধরা বড় শক্ত ধরা।


বাণী :

১. হে মানব সমাজ! এ ধরণী অবশ্যই স্থায়ী আবাস নয়। এটা তোমার দিলের তামান্না পূর্ণ করতে সক্ষম নয়। তুমি কি শুনতে পাওনি যে, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের তখত ভোরে, দ্বিপ্রহরে ও সন্ধ্যার বাতাসে ভেসে চলতো। হায়। পরিশেষে সেটাও কোথায় ধ্বংস হয়ে গেল।

২. অবশ্যই ঐ ব্যক্তি এ জগতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে গেছে, যে ব্যক্তি ইনসাফের সাথে সৎকর্ম করে গেছে। যার মাধ্যমে সৃষ্টিজীব শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছে। হ্যাঁ, প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে এবং লোকদের প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। আর যে ব্যক্তি ধন-সম্পদ লাভ করে তা খরচ করেনি, শুধু জমা করে রেখেছে, সে অপদস্থ হয়েছে, কখনো সম্মান লাভ করতে পারেনি।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: