সাহিত্য সময়কে ধরে রাখে। সাহিত্য মানুষের মনের খোরাক জোগায়। মুসলিম সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যজ্ঞান দিয়ে শতাব্দীকাল ধরে পাঠকের মনের পুষ্টির জোগান দিয়েছেন। জ্ঞানের আলো ও পাঠের আনন্দ তাদের সাহিত্য সৃষ্টিকে করেছে কালজয়ী। মুসলিম সাহিত্যের বড় অংশই আলোচনা করেছে স্রষ্টা প্রেমের অনবদ্য আকুল আবেদন। স্রষ্টা প্রেমের পাশাপাশি মানবপ্রেমের নানা দিক উঠে এসেছে সাহিত্যকর্মে। কবিতা ছাড়াও, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ভ্রমণও ছিল সাহিত্যের বিষয়বস্তু। এবারের আয়োজন কয়েকজন কালজয়ী মুসলিম সাহিত্যিকদের নিয়ে।
জালাল উদ্দিন রুমী
মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। এখনো তার সাহিত্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। ইরানি সাহিত্যকে তিনি দিয়েছেন বিশ্বজুড়ে সম্মান। কবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীর জন্ম ১২০৫ সালের (মতান্তরে ১২০৭) ২৯ সেপ্টেম্বর, ৬০৪ হিজরি ৬ রবিউল আউয়াল আফগানিস্তানের বালখে। তার প্রকৃত নাম মুহাম্মদ। জালাল উদ্দিন ছিল তার উপাধি। সুলতান মুহাম্মদ বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন মাওলানা রুমীর পিতা। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) ছিলেন মাওলানা রুমীর পিতৃকুল থেকে নবম বংশধর এবং মাতৃকুল থেকে ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর (রা.) বংশধর।
তিনি শুধু কবি ছিলেন না, ছিলেন একজন আধুনিক আধ্যাত্মিক চিন্তা চর্চার সাধক। অন্য মরমি কবি-দার্শনিকদের থেকে তিনি ভিন্ন। মরমিয়াবাদী হিসেবে তিনি ছিলেন নীতি-শিক্ষক এবং সংস্কারক। দর্শন ও বিশ্বসাহিত্যের একজন অগাধ পাণ্ডিত্যপূর্ণ মনীষী। মাওলানা রুমী সাহিত্যচর্চা করেছেন ফারসিতে। তার স্বাভাবিক প্রবণতা আল্লাহর সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়ার ব্যাকুলতার স্তর পেরিয়ে তাকে ঘিরে বিরাজ করে তীব্র আকাক্সক্ষা। রুমীর সব কাব্য ও সংগীত নানারূপে কেবল এই কথাটিই বলে। তিনি ফারসি ভাষায় অনেক জ্ঞানগর্ভ শিক্ষামূলক গ্রন্থ রচনা করেন। তার আধ্যাত্মিক ও উপদেশমূলক একাধিক প্রবন্ধও আছে। তার মধ্যে ‘ফিহি মা ফিহি’ অন্যতম। তার সর্বশ্রেষ্ঠ উল্লেখযোগ্য কীর্তিমান অমরত্ব পাওয়া গ্রন্থ ‘মসনবী’।
মসনবী শুধু ফারসি সাহিত্য ভাণ্ডারে নয়, এটি বিশ্বসাহিত্য ভাণ্ডারেরও একটি অমূল্য সম্পদ। এই গ্রন্থে দ্বিপদী ছন্দবদ্ধ কবিতার সংখ্যা পঁচিশ হাজার। যা ছয় খণ্ডে বিভক্ত। মসনবীতে পাঠক প্রিয় সৃষ্টিকর্তার প্রেমের অপার রহস্যোদঘাটনে তৃপ্তি লাভ করতে পারবেন। মসনবী কেবল ধর্মতত্তে¡র ওপর নয়, সাধারণ দর্শনের একটি আদর্শ গ্রন্থ হিসেবেও পরিচিত। মসনবীকে বলা হয় একটি ধর্মীয় নীতিশাস্ত্র গ্রন্থ।
ইবনে বতুতা
ইবনে বতুতা ছিলেন বিশ্বসেরা পর্যটক। তিনি ১৩০৪ সালে মরক্কোর তানজিয়ারে মুসলিম পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন কাজী। ইবনে বতুতা সারাজীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২১ বছর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের পরবর্তী ৩০ বছরে তিনি প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পথ পরিভ্রমণ করেছেন। তিনিই একমাত্র পর্যটক যিনি তার সময়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং এর সুলতানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রায় ৪০টি দেশ ভ্রমণ শেষে মরক্কোতে ফেরার পর মরক্কোর সুলতান আবু ইনান ফারিস তার ভ্রমণকাহিনীর বর্ণনা লিপিবদ্ধ করার জন্য একজন সচিব নিয়োগ করেন। এই ভ্রমণ কাহিনীর নাম ‘রিহলা’। এটিকে চৌদ্দ শতকের পূর্ব, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মুহাম্মাদ-ই ওয়ালাদ
মুহাম্মাদ-ই ওয়ালাদ সবচেয়ে বেশি পরিচিত সুলতান ওয়ালাদ নামে। তিনি ছিলেন জালাল আল-দিন রুমীর বড় সন্তান। তার বাবার মতোই তিনিও ফারসি সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার সাহিত্যকর্মও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় বিশ্বজুড়ে। মসনবী আঙ্গিকে লেখা তার কবিতার বইগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘ইবদিতা-নামা’ বইটি ছিল সে ধারার শ্রেষ্ঠ। তার কাব্যিক ছোঁয়ার কারণে একে অনেকে ‘ওয়ালাদ-নামা’ বলেও ডেকে থাকেন। এই বইয়ে স্রষ্টা প্রেমের আবেগঘন পঙ্ক্তি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। ১২৯১ সালে বইটি রচিত হয়। এ ছাড়া ‘রাবাব-নামা’ বইটিও ফারসি সাহিত্যে অনন্য। এই মসনবী মাত্র পাঁচ মাসে রচিত হয়েছিল। এ ছাড়া রয়েছে ‘ইনথা-নামা’। এটিও একটি জোড় মসনবী। এখানে রয়েছে ৮ হাজার ৩০০ লাইন।ৎ
বুল্লে শাহ
বুল্লে শাহ একজন প্রখ্যাত সুফি কবি। তার জš§ ১৬৮০ সালে। এই পাঞ্জাবি কবি, সুফি, দার্শনিকের পুরো নাম সৈয়দ আবদুল্লাহ শাহ কাদরি। তার বাবা শাহ মুহাম্মদ দরবেশ। তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। এ ছাড়া তিনি ধর্ম প্রচারক হিসেবেও একটি মসজিদে কাজ করতেন। বুল্লে শাহের পূর্ব পুরুষগণ বুখারা থেকে এসেছিলেন। ধারণা করা হয়, তার পূর্ব পুরুষগণ মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর বংশধর। তিনি মাত্র ছয় বছর বয়সে তার পরিবারের সঙ্গে মালাকওয়ালে চলে আসেন। এখানেই তিনি মাওলানা মইনুদ্দিনের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। তার সাহিত্য প্রতিভা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তার কবিতাগুলো মুখে মুখে পাঠ হতো। কবিতার ধরনের দিক হতে বুল্লে শাহের ধরন ছিল কাফি। এটি পাঞ্জাবি ঘরানার রাগ, সিন্ধি এবং সিরাকি কবিতা শুধু সুফি এবং সিন্ধিদের এবং পাঞ্জাবিদের দ্বারাই ব্যবহƒত হতো না বরং শিখগুরুরাও তা ব্যবহার করতেন।
শেখ সাদি
শেখ সাদিকে বলা হয় ইরানের প্রধানতম কবি। তার পুরো নাম আবু মুহাম্মাদ মুসলিহ আল-দিন বিন আবদেল্লা শিরাজী। প্রকৃত নাম শরফুদ্দীন। ডাক নাম মুসলিহ উদ্দীন। আর উপাধি বা খেতাব হচ্ছে সাদি। আসল নাম নয়, তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে আছেন উপাধি ‘সাদি’ নিয়ে। তার সাহিত্যের ভক্ত পাঠক ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। তিনি শুধু একজন কবি নন, মানবতাবাদী সমাজ চিন্তাবিদও। ইরানের শিরাজ শহরে শেখ সাদি জš§গ্রহণ করেন। শিরাজ ছিল এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভ‚মি। এখানেই এই মনোরম সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন শেখ সাদি তার কাব্য প্রতিভার গুণে। তার জীবন শুরু হয় বেদনাসিক্ত অনুভবে। যখন শেখ সাদির বাবার মৃত্যু ঘটে তখন তিনি নিতান্তই শিশু। এ ছাড়া পরিবারে ছিল দারুণ অভাব। এই অভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। কৈশোরেই তার স্বভাবজাত জ্ঞানের দ্যুতির দেখা মেলে। শিক্ষা গ্রহণের আকুলতাকে তিনি এড়িয়ে যাননি। তরুণ বয়সে কবি চলে আসেন বাগদাদ শহরে। বাগদাদ তখন সাহিত্য আর সাহিত্যিকদের চারণভ‚মি। এ যেন জ্ঞানের তীর্থস্থান। বাগদাদের সুবিখ্যাত ‘আল নিজামিয়া’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। সময়টা ১১৯৫ থেকে ১২২৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি। এ সময় তিনি উচ্চশিক্ষা নেন শারিয়া, আলকেমি, গভর্নমেন্ট, হিস্টোরি, অ্যারাবিক লিটারেচার অ্যান্ড থিওলজি বিষয়ে। তার জ্ঞানের পরিধি কতদূর বিস্তৃত সেটা বিষয়গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এরই মাঝে এলো যুদ্ধ। দুর্ধর্ষ মঙ্গোলরা মধ্য এশিয়ার খোওয়াইজম নগর ও পারস্য আক্রমণ করেছে। জš§ভ‚মিতে আর ফিরতে পারেননি শেখ সাদি। বাগদাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন।
ফরিদ উদ্দীন আত্তার
তার পুরো নাম আবু হামিদ বিন আবু বকর ইব্রাহিম। তিনি লেখালেখি করেছেন ফরিদ উদ্দীন নামে। তার লেখনী এতটাই হƒদয়গ্রাহী ছিল যে, পাঠকরা তাকে সুগন্ধির সঙ্গে তুলনা করতেন। তার নামের সঙ্গেই জুড়ে দেয়া হয় আত্তার বা সুগন্ধি ব্যবসায় শব্দটি। তিনি হয়ে ওঠেন তার সময়ে অন্যতম প্রধান মুসলিম কবি। তার কবিতা পড়ে মানুষের মন স্রষ্টার প্রতি আকৃষ্ট হতো। হƒদয় ছুঁয়ে যাওয়ার আবেগ তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ফারসি কবি কিন্তু সুফিবাদের ছোঁয়া রাখতের তার কবিতায়। শুধু তাই নয়, কবিতার আড়ালে সুফিবাদের যে প্রেমময় দিক উঠে আসত তা পরবর্তীতে স্থায়ী ভিত্তি লাভ করে। ফরিদ উদ্দীন আত্তার অন্তত ৩০টি বই লিখে গেছেন। তার একটি বিখ্যাত বই হচ্ছে ‘মানতিকে তাইয়ার’ বা ‘পাখির সমাবেশ’। তিনি গবেষণার মাধ্যমে যে জ্ঞানার্জন করেন তা কবিতা আকারে লিখে গেছেন।
সাইদ নুরসি
সাইদ নুরসিকে অনেকে চেনেন বদিউজ্জামান নামে। এই প্রখ্যাত লেখক রিসালায়ে নূর নামক কোরানের ব্যাখ্যা রচনা করেন। এটির আকার ছয় হাজার পৃষ্ঠারও বেশি। আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিকে ভবিষ্যতের পথ বিবেচনা করে তিনি সাধারণ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় জ্ঞান ও ধর্মীয় বিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। যে কারণে তাকে এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। বর্তমানে ইসলাম নিয়ে উচ্চশিক্ষার যে ধারা চালু রয়েছে এর নেপথ্যে তার অবদান অনস্বীকার্য। সাইদ নুরসি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত পূর্ব আনাতোলিয়ার বিতলিস ভিলায়েত প্রদেশের নুরস নামক কুর্দি গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ধর্মীয় বিতর্কে পারদর্শিতা দেখান। ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের পর তাকে বদিউজ্জামান নাম প্রদান করা হয়, যার অর্থ ‘সময়ের অদ্বিতীয় ও সবচেয়ে উচ্চ ব্যক্তি’।
ওয়ারিস শাহ
ওয়ারিস শাহ পাঞ্জাবি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন। তিনি পাঞ্জাবের জানদিয়ালা শের খান (বর্তমানে পাকিস্তানে) নামক এলাকায় একটি বিশিষ্ট মুসলিম সৈয়দ পরিবারে জš§গ্রহণ করেন এবং সৈয়দ মোহাম্মদ আল-মাক্কির শিষ্য ছিলেন। তার বাবার নাম ছিল গুলশের শাহ। যুবক অবস্থায় তার পিতা-মাতা মারা যান। ওয়ারিস শাহ প্রধানত হীর রাঞ্জা নামক কবিতার লেখক হিসেবে পরিচিত, যার পঙ্ক্তিগুলো পাঞ্জাবি সাহিত্যের গুপ্তধন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তার রচিত অনেক পঙ্ক্তি রয়েছে যা পাঞ্জাবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও ব্যবহƒত হয়। ওয়ারিস শাহর জীবনী নিয়ে পাঞ্জাবি ভাষায় একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৬৪ সালে ওয়ারিস শাহ নামে একটি পাকিস্তানি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ভারতেও ২০০৬ সালে তার জীবনী নিয়ে ওয়ারিস শাহ: ইশ্ক দ্য ওয়ারিস নামে আরেকটি ছবি নির্মিত হয়।
নিজামী গজনবী
ফারসি কবি ও বিশ্বসেরা সাহিত্যিকদের একজন নিজামী গজনবী। তার আসল নাম জামাল আল-দিন আবু মুহাম্মদ ইলিয়াস ইবনে ইউসুফ ইবনে জাক্কি। এই মুসলিম কবির কবিতায় স্রষ্টা প্রেমের অনবদ্য পঙ্ক্তি পাঠকদের হƒদয় ছুঁয়ে যায়। তার কাব্যিক ধরনও নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বর্তমান আজারবাইজানে তিনি জš§গ্রহণ করেছিলেন। মসনবী ধরন কবিতায় তিনি গুরু বলে স্বীকৃত। তার সেরা কীর্তি ‘খামসা’। এটি মূলত পাঁচটি দীর্ঘ কবিতার সংকলন। তার জীবনের বড় একটি সময় তিনি এই কবিতার পেছনে ব্যয় করেন। এ কবিতাগুলোকে বিশ্বসাহিত্যে ‘পাঁচ রতœ’ বলা হয়।
ফেরদৌসী
শাহনামা লিখে সাহিত্যের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছেন ফেরদৌসী। তিনি ছিলেন পারস্যের একজন বিখ্যাত কবি। তার রচিত ‘শাহনামা’ একই সঙ্গে ইরানের ও সারা বিশ্বের ফারসি ভাষাভাষী লোকজনের জাতীয় মহাকাব্য। শাহনামা প্রাচীন ইরানের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন কাব্যগাথা। এতে আছে ৯৯০টি অধ্যায় ও ৬২টি কাহিনী। পুরো মহাকাব্যে ৬০ হাজার বার আছে অন্তমিল। মনে করা হয়, শাহনামার আগেও ফেরদৌসী কিছু কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর ইরানের বিভিন্ন শাসক ও বাদশাহদের কাহিনী তুলে ধরেন শাহনামাতে।
হাফিজ
হাফিজ শিরাজী একজন ইরানি কবি। তাকে অনেকে চেনেন বুলবুল-ই-শিরাজ নামে। শিরাজ ছিল পারস্যের তীর্থভ‚মি। এখানেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই শহরের মানুষ তার কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বলত ‘লিসান-উল-গায়েব’, ‘তর্জমান-উল-আসরার’। হাফিজ তার জীবদ্দশায় কবিতাসমূহ সংগ্রহ করে যাননি। তার বন্ধু গুল-আন্দামই সর্বপ্রথম তার মৃত্যুর পর ‘দিওয়ান’ আকারে হাফিজের সব কবিতা সংগ্রহ ও একত্রিত করেন। হাফিজের প্রায় সব কবিতা ‘শাখ-ই-নবাৎ’ নামক কোনো ইরানি সুন্দরীর স্তবগানে মুখরিত। এটি হয়তো ছদ্মনাম।
ইবনুল আরাবি
বর্তমান স্পেন। ১১৬৫ সালে এখানেই জন্মগ্রহণ করেন ইবনুল আরাবি। তখন ইসলামী স্বর্ণযুগ। সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতায় ইবনুল আরাবির নাম সে সময় সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হতো। এই সুফি সাধক তার দার্শনিক লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের মনে আলোড়ন তুলতে পেরেছিলেন।
সুফিতত্তে¡ তার অনবদ্য অবদানের কারণে তিনি প্রশংসিত হন। তার লেখার মূল ভিত্তি ছিল আধ্যাত্মিকতা। আধ্যাত্মিক আলোচনা ও স্রষ্টার নিকটবর্তী হওয়ার আকুল কাব্যিক বর্ণনা রয়েছে। সুফি সাধকদের কাছে তার লেখা অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি দামেস্কে মৃত্যুবরণ করায় তাকে অনেকে ডাকেন ‘দামেস্কি’ বলেও।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: