ফাইল ছবি
গাজায় ক্রমবর্ধমান ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে উপত্যকার ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের প্রভাব খাটাতে সোমবার ইসলামী বিশ্বের শীর্ষ কূটনীতিকদের একটি দলকে আতিথ্য দিচ্ছে তুরস্ক।
অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর ফিলিস্তিনিদের হামলার দাবির কারণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি মারাত্মকভাবে পরীক্ষিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় পুনর্গঠন প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান তার সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রতিপক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনা শুরু করতে ইস্তাম্বুলে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় আনুমানিক দুপুর দুইটায় এই বৈঠক শুরু হবে। এই খবর দিয়েছে তুর্কি মিডিয়া।
অস্ত্রবিরতির পরিকল্পনা উন্মোচিত হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে এসব কূটনীতিককে সেপ্টেম্বরের শেষে দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, আঙ্কারা ফিলিস্তিনিদের উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও শাসনভার গ্রহণের পরিকল্পনা কে সমর্থন করতে এই দেশগুলোর ওপর চাপ দেবে।
সপ্তাহান্তে, ফিদান ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী আন্দোলনের প্রধান আলোচক খালিল আল-হায়ার নেতৃত্বে হামাসের একটি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। ফিদান জোর দিয়ে বলেন, "আমাদের অবশ্যই গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। শুধু মাত্র যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়।" তিনি আরও বলেন, "গাজা ফিলিস্তিনিদের দ্বারা শাসিত হওয়া উচিত।"
সোমবারের আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, হামাস যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে এবং তিনি ইসরায়েলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
তিনি ইস্তাম্বুলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এক সমাবেশে বলেন, "মনে হচ্ছে হামাস চুক্তির প্রতি বেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তবে ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি খুবই দুর্বল।" তিনি আরও বলেন, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উচিত গাজার পুনরুদ্ধারে নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া।মার্চ মাসে উন্মোচিত সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি যে আরব লীগ এবং ওআইসির প্রস্তুতকৃত পুনর্গঠন পরিকল্পনাটি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা উচিত।"
তুরস্ক-ইসরায়েল উত্তেজনা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের মাধ্যমেই গাজা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, এবং তুরস্ক হামাসকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।ফিদান আশা করছেন, তিনি ইসরায়েলকে গাজায় আরও মানবিক সহায়তার অনুমতি দেওয়ার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করবেন। কেননা সাহায্য সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে, তাদের ত্রাণবাহী গাড়িগুলো এখনও অঞ্চলের কিছু অংশে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি লাঘব করতে পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না।
আঙ্কারার সঙ্গে হামাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে তুরস্কের কূটনৈতিক তৎপরতাকে সন্দেহের চোখে দেখে আসছে এবং যুদ্ধবিরতি তদারকির জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনীতে তুরস্কের যেকোনো ভূমিকার প্রতি তাদের দৃঢ় বিরোধিতা প্রকাশ করছে।ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে প্রত্যাহার করার পরে এই স্থিতিশীলতা মিশনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে।
আঙ্কারা জানাচ্ছে, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া বহু মৃতদেহ উদ্ধারের প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে পাঠানো তুরস্কের একটি দুর্যোগ ত্রাণ দলকে ইসরায়েলি সরকার প্রবেশাধিকার দিতে অস্বীকার করার কারণে সীমান্তে তারা আটকে আছে। এর মধ্যে হামাসের হাতে অপহৃত ইসরায়েলি জিম্মিদেরও মৃতদেহ রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: