আল জাজিরা এক্সপ্লেইনার

আসিয়ান সম্মেলনে যারা থাকছেন, গুরুত্বপূর্ণ যা যা হবে

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৪২

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলন। আজ রোববার থেকে শুরু হয়ে এই সম্মেলন চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। আসিয়ানের ৪৭তম সম্মেলনে যোগ দিতে কুয়ালালামপুরে আসছেন বিশ্বের প্রায় দুই ডজন নেতা। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রয়েছেন। সম্মেলন ঘিরে আরও বেশ কয়েকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

 

আসিয়ান কী, সম্মেলনে কারা অংশ নিচ্ছেন

আসিয়ান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট। সংগঠনটির সদস্য দেশ এখন ১১টি। দেশগুলো হলো- ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও পূর্ব তিমুর। দেশগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ। এসব দেশের মোট জিডিপি ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার।

এবারের সম্মেলনের শুরুতেই পূর্ব তিমুরকে সংগঠনটির একাদশতম সদস্য করা হয়। ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে পূর্ব তিমুর।

মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি জেনারেল মিন অং হ্লাইং ছাড়া বাকি সব সদস্য দেশের নেতারা একত্রিত হবেন এবারের সম্মেলনে।

আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়। এর পাশাপাশি পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা অংশ নেন।

এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে–মিউং ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন অংশ নেবেন।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার নোভাক দেশটির প্রতিনিধিত্ব করছেন। ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাও কুয়ালালামপুরে অবস্থান করছেন।

এ ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ফিফা) প্রধানেরা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

 

আসিয়ানে কী বিষয়ে আলোচনা হবে

আসিয়ানে এবারের সম্মেলনে মার্কিন শুল্ক ও বিরল মাটির খনিজ পদার্থের নিয়ে আলোচনা করা হবে। এসব পদার্থ প্রযুক্তি তৈরির উৎপাদন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যটারির উপাদান হিসেবে এসব খনিজ অপরিহার্য, যার বেশির ভাগ চীনের কাছে রয়েছে। মার্কিন বাণিজ্যঘাটতি কমানোর জন্য ট্রাম্প এপ্রিল মাসে বেশির ভাগ দেশের পণ্যে শুল্ক বসান। দীর্ঘ আলোচনার পর বেশিরভাগ আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর জন্য মার্কিন শুল্ক ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে রাখেন তিনি। তবে ব্রুনাইয়ের শুল্কহার ২৫ শতাংশ, লাওস ও মায়ানমার উভয়ের জন্য শুল্ক ৪০ শতাংশ ধার্য করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় চীন বিরল মৃত্তিকা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর প্রভাব পুরো বিশ্বে পড়েছে।

পেশাদার পরিষেবা সংস্থা ডেজান শিরা অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের আসিয়ান পরিচালক মার্কো ফস্টার আল জাজিরাকে বলেন, ‘আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ নেতাই ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে কথা বলার আগ্রহ দেখাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে প্রত্যেকেই সাইডলাইন বৈঠক করতে চাইবেন এবং এটা হতেও পারে।’

এছাড়াও আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতারা মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবেন। এবং তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতারণা কেন্দ্রগুলোর বিস্তার নিয়ে কথা বলবেন। এসব অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে।

 

কেন সম্মেলনে নেই মিয়ানমার

মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট জেনারেল মিন অং হ্লাইং আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেননি। দেশটির আগামী বছরের জন্য আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব গ্রহণ করছে না। ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। মিয়ানমারের পরিবর্তে ফিলিপাইন মালয়েশিয়ার কাছ থেকে এ দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

২০২১ সালে আসিয়ান একটি পাঁচ দফার ঐকমত্য ঘোষণা করেছিল। এতে মিয়ানমারে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা আহ্বান করা হয়েছিল। এ ছাড়া সংঘাতের সমাধানে মধ্যস্থতা করার জন্য একজন বিশেষ আসিয়ান দূত নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। চার বছর পর সমালোচকেরা বলছেন, মিয়ানমারের সংকটের ওপর আসিয়ানের ওই সিদ্ধান্তের খুব কম প্রভাবই পড়েছে।

আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের সহসভাপতি চার্লস সান্তিয়াগো আল জাজিরাকে বলেন, তিনি আশা করছেন, শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমার ও গৃহযুদ্ধের ফলাফল নিয়ে আলোচনা হবে।

চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, ‘মিয়ানমার ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা এবং সামাজিক সংহতির জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।’ তিনি আরও বলেন, গৃহযুদ্ধের ফলে সেখানে মাদক ও অস্ত্রের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শরণার্থী সংকট তৈরি হয়েছে।

যদিও এবারের আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন থেকে বেশি কিছু আশা করছেন না সান্তিয়াগো। তিনি বলেন, ‘এটি সবার জন্য একটি বড় ফটোসেশনের সুযোগ হবে। তবে নীতির বিষয়ে থেকে বেশি কিছু ঘটবে না।’

 

আসিয়ানের সীমাবদ্ধতাগুলো কী

আসিয়ান সম্পর্কে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করা হয় এই বলে যে সদস্যদেশগুলোকে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার মতো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এর নেই। যার ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অন্যান্য আঞ্চলিক গোষ্ঠী থেকে আলাদা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যদেশগুলোকে অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন ও সিদ্ধান্ত মানতে হয়।

মিয়ানমারের সংকট এবং সম্প্রতি কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত সংঘাতের বিষয়ে ভূমিকা পালন নিয়েও আসিয়ানকে এ সমালোচনা শুনতে হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: