
কাতারের রাজধানী দোহায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রতিনিধি দলকে লক্ষ্য করে মঙ্গলবার হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একের পর এক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বুধবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব নিন্দা তুলে ধরা হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ প্রধানের নিন্দা
জাতিসঙ্ঘ প্রধান অ্যান্তোনি গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, কাতারে ইসরাইলের এই হামলা দেশটির সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার চরম লঙ্ঘন।
তিনি আরো বলেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে এবং ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারে কাতার সর্বোচ্চ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। একইসাথে তারা গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধে সকল পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের নিন্দা
জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরাইল কাতারের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে যে হামলা চালিয়েছে, তার স্পষ্টভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ প্রধান। তিনি বলেছেন যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এভাবে হামলা করা তাদের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি আরো বলেন, কাতার একটি মধ্যস্থতাকারী পক্ষ। তারা মধ্যপ্রাচ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তাদের উপর সীমালঙ্ঘন করা ইতিবাচকভাবে নেয়া যায় না। এ সময় তিনি তাগিদ দেন যে এহেন মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে একই কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে।
জাতিসঙ্ঘ মুখপাত্র বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খুবই অস্থিতিশীল। এতে উত্তেজনা বৃদ্ধির বাস্তব কিছু ঝুঁকি রয়েছে। সেজন্য এভাবে মধ্যস্থতাকারী কোনো পক্ষের উপর হামলা করা গাজায় যুদ্ধ বন্ধের অগ্রগতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়।
বিবৃতির শেষ দিকে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের অবশ্যই শান্তি ও স্থিতিশীলতার অধিকার রয়েছে। আমরা তাদের আশার গুঁড়ে বালি ছিটাতে চাই না।
তুরস্কের নিন্দা
কাতারে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিব এরদোগান। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কাতারে ইসরাইলি হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও কাতারের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এরদোগান আরো বলেন, ইসরাইল এই হামলার মধ্য দিয়ে কাতারের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করেছে। এর থেকে এই কথা বুঝা যায় যে নেতানিয়াহুর এই বেপরোয়া সরকার সঙ্ঘাতকে আরো গভীরে টেনে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, যারা সন্ত্রাসবাদকে দেশের রাজনৈতিক পরিসরে প্রতিষ্ঠা করে, তারা কখনোই সফল হতে পারে না।
এ সময় তুর্কি প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন যে আমরা সাধ্যের সবটুকু নিয়ে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই, তুরস্কের মিত্র ও কৌশলগত অংশীদার কাতারের ভাইদের পাশে দাঁড়াবো।
ইরানের নিন্দা
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান কাতার সরকার ও নাগরিকদের প্রতি এবং ফিলিস্তিনি ভাইদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। এ সময় তিনি দোহায় ইসরাইলি হামলাকে দেশটির সার্বভৌমত্ব ও জাতিসঙ্ঘের চুক্তির লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দোহায় অবস্থানরত হামাস প্রতিনিধি দলের উপর ইসরাইল যে হামলা করেছে, সেটি অপরাধমূলক ও বিপজ্জনক কাজ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিন্দা
কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের প্রতিনিধি দলের উপর ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরাইলের এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও কাতারের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর লঙ্ঘন।
ইইউ’র এক মুখপাত্র বলেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি আরো বলেন, মধ্যস্থতাকারী একটি পক্ষের উপর হামলা করা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।
এ সময় তিনি ইইউ’র কৌশলগত অংশীদার কাতারের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন। একইসাথে তিনি ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেও কূটনৈতিক তৎপরতা ও সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ফ্রান্সের নিন্দা
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ইসরাইল যতই অজুহাত দেখাক না কেন, কাতারে হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময় তিনি কাতারের প্রতি তার সংহতি প্রকাশ করেন।
এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো অবস্থাতেই এই যুদ্ধকে আর বিস্তৃত হতে দেয়া যাবে না।
জার্মানির নিন্দা
কাতারে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ।
দেশটির মুখপাত্র স্টেফান কর্নেলিয়াস বলেন, কাতারে ইসরাইলি হামলার পর দেশটির আমির তামিম বিন হামদ আলে সানির সাথে ফোনে কথা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ। এ সময় তিনি বলেন, কাতারের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে ইসরাইলের এই হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এ সময় তিনি গাজা যুদ্ধ বন্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য কাতারের প্রশংসা করেন। একইসাথে এই অঞ্চলে যুদ্ধ যেন আরো বিস্তৃত না হয়, সেদিকে জোরালোভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ব্রিটেনের নিন্দা
কাতারের উপর ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। হামলার পর কাতারের আমিরের সাথে ফোনে কথা বলেন তিনি। এ সময় ইসরাইলের এই হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন। একইসাথে যুদ্ধক্ষেত্র যেন আর বিস্তৃত না হয়, সেদিকে সতর্ক করলেন।
ব্রিটেনের সরকারি মুখপাত্র বলেন, স্টারমার কাতারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন। একইসাথে তার শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানান এবং গাজা যুদ্ধ বন্ধে কাতারের ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
আয়ারল্যান্ডের নিন্দা
কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস। তিনি বলেন, এই ঘটনায় তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি আরো বলেন, এই হামলা মধ্যপ্রচ্যের স্থিতিশীলতাকে আরো হুমকির মুখে ফেলবে।
স্পেনের নিন্দা
কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তিনি বলেন, এই হামলা স্পষ্টত কাতারের সার্বভৌমত্ব ও জাতিসঙ্ঘের চুক্তির লঙ্ঘন।
সানচেজ বলেন, এমন একগুঁয়ে পক্ষকে মধ্যপ্রাচ্যে আর নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছেড়ে দেয়া যায় না। এখন সময় এসেছে যৌক্তিকতা রক্ষা, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের।
এছাড়া এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ইতালি, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, পাকিস্তান, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ওআইসি, ভ্যাটিক্যান সিটি। তারা এই হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: