
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে নতুন করে সঙ্ঘাতের আশঙ্কা করছে তেলআবিব। ইসরাইলি দৈনিক মারিভ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হলেও তা ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সঙ্ঘাতের ইতি টানেনি। বরং এই বিরতি আরো বিপজ্জনক এক নতুন পর্যায়ের সূচনা করেছে।
রাজনৈতিক সংবাদদাতা আনা ব্রাস্কি উল্লেখ করেছেন, ইসরাইলের রাজনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, মূল প্রশ্ন এখন আর ‘যুদ্ধ হবে কিনা’ নয়। বরং মূল প্রশ্ন হলো, ‘কবে এবং কোন ফ্রন্টে পরবর্তী রাউন্ড শুরু হবে?’ তিনি বলেন, সংঘর্ষে জড়িত পক্ষগুলো অপরিবর্তিত, খেলা চলছেই এবং সঙ্ঘাত শেষ হয়েছে, এমন ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দেড় দিন পরই মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়ার এক বিবৃতি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী করে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের সব প্রকল্পের ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখব। আমরা জানি তারা কী করছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করব।’ বিশ্লেষকেরা এটিকে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী মাত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই যুদ্ধবিরতি কৌশলগত কোনো সমাধানের ফল নয়। বরং উভয় পক্ষের স্বার্থের একটি সাময়িক ভারসাম্য। ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করেছিল। অন্যদিকে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরাসরি সঙ্ঘাতে না জড়িয়ে সঙ্ঘাত সীমিত রাখে।
সংবাদদাতা উল্লেখ করেন, মধ্যস্থতাকৃত এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে কোনো তদারকি ব্যবস্থা বা স্থায়ী যোগাযোগ চ্যানেল নেই। ইরানকে তার পারমাণবিক বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করার কোনো স্পষ্ট অঙ্গীকারে বাধ্য করা হয়নি।
আনা ব্রাস্কি সতর্ক করে বলেন, এই অস্থিতিশীল অবস্থা যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরিত হতে পারে, লেবানন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র, ইয়েমেন থেকে ড্রোন কিংবা সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেও।
ইসরাইলি মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতের সঙ্ঘাত একাধিক ফ্রন্টে ঘন ঘন, ছোট কিন্তু ধ্বংসাত্মক আকারে ফিরে আসতে পারে। এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরো সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন বলে তারা মনে করে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চলমান উত্তেজনা ও অবিশ্বাস আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অদূর ভবিষ্যতে দূরীভূত হবে না বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকাও এই বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। ট্রাম্পের অবস্থানকে ‘পরস্পরবিরোধী’ ও ‘বিনোদনমূলক’ বলে বর্ণনা করেন প্রতিবেদক, যেখানে একদিকে তিনি আক্রমণের সমাপ্তি ঘোষণা করেন, অন্যদিকে আবার নতুন হামলার হুমকি দেন। তিনি এই সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ নামে অভিহিত করে টেলিভিশন সিরিজের একটি পর্বের মতো উপস্থাপন করেন।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির পরও গোলাগুলি চলতে থাকে। এতে প্রশ্ন ওঠে, এই যুদ্ধবিরতি কি প্রকৃত শান্তির ইঙ্গিত, নাকি এটি শুধু নতুন সঙ্ঘাতের আগে সাময়িক বিরতি?
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস যুদ্ধবিরতির বিষয়ে পরস্পরবিরোধী দাবি করেছে। একদিকে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্ষতির পরিমাণ ছিল সাময়িক মাত্র।
প্রতিবেদকের মতে, যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। যেমন, তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিচার বাতিলের দাবি তোলেন এবং ইঙ্গিত দেন, আমেরিকান সমর্থন পেতে হলে ইসরাইলকে নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে; ফিলিস্তিনি ইস্যু কিংবা পারমাণবিক চুক্তির মতো বিতর্কিত ক্ষেত্রেও।
ব্রাস্কি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি ওয়াশিংটন সিদ্ধান্ত না নেয় যে তারা সংঘাতের নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় থাকবে না কি শুধু পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকবে, তাহলে ইরান-ইসরাইল সংঘাত যেকোনো সময় ফের দানা বাঁধতে পারে।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: