বিশ্বর বড় বড় জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বাড়িয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোট টাকা। কার্বন নিঃসরণ করে পরিবেশের ক্ষতি করছে তারা পরিবেশবাদীরা এবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছে। এই লক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডার একটিভিজম নামে মাঠে নেমেছে বিশ্বের বিখ্যাত খুদে পরিবেশবাদী আন্দোলন ফ্রাইডি ফর ফিউচারের কর্মীরা।
জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের শেয়ার হোল্ডার যেমন জার্মানির আরডাব্লিউই, ফ্রান্সের টোটলএনার্জিসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার বিষয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা চায় তারা। তাদের এই আন্দোলনের সমর্থন আছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদেরও।
কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার দাবিতে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্সেডিজ, ভক্সওয়াগনের কাছ থেকে কঠোর পদক্ষেপ চায় তারা।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত আরডাব্লিউই-এর বাৎসরিক সভায় এফএফএফ-এর সদস্য পাউলিন ব্র্যুনগের বলেন, জ্বালানি খাতের একশ প্রতিষ্ঠান বিশ্বের শতকরা ৭১ ভাগ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। তার দাবি, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই পরিবেশ বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি (আরডাব্লিউই) যে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না সেটি স্পষ্ট। পশ্চিম জার্মানির একটি গ্রামে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করছে তারা।
ইউরোপের কোনো প্রতিষ্ঠানই আরডাব্লিউই-এর মতো কার্বন নিঃসরণ করে না, বলেন তিনি। এই মহাদেশের অন্য কোনো কোম্পানি এটির মতো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এতো ঋণী নয়৷
গত মে মাসে জার্মানির আরডাব্লিউই-এর বাৎসরিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী নিকলান হ্যোন।
সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, সারা বিশ্বেই ফসিল গ্যাসে বাণিজ্য করছে প্রতিষ্ঠানটি কিন্তু নিজেদের কার্বন নিঃসরণের গণনায় এই বাণিজ্যকে তারা বিবেচনায় নেয় না।
অবশ্য প্রতিাষ্ঠানটি জানায়, ১০ বছর আগের একটি র্কাবন বাজেটের পরিকল্পনা মেনেই চলছে তারা। হ্যোন বলছেন, এমন পরিকল্পনা বেশ পুরোনো।
মুনাফা নাকি পরিবেশের সুরক্ষা?
বালিনের পরিবেশকর্মী টাডজিও ম্যুলার বলেন, তেল, গ্যাসের মতো অর্থিক মুনাফার খাতগুলো বিশ্বের পুঁজি বাজারে শক্তিশালী হবে।
জীবাশ্ব জ্বালানির উৎপাদন ধাপে ধাপে বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় আইনি পরিবর্তনে আনতে এফএফএফ-এর যেই অক্ষমতা তা বিবেচনায় নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তাদের আন্দোলনটি আমি বুছতে পারছি।''
তবে শেয়ারহোল্ডারদের চাপে পড়ে উৎপাদকেরা তেল, গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করবে এমনটা তিনি মনে করেন না।
পরিবেশ সংগঠন লাস্ট জেনারেশন এবং জাস্ট স্টপ অয়েলের রাস্তা অবরোধের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধরনের আন্দোলন কার্যকর কৌশল হতে পারে৷
তবে শেয়ারহোল্ডারদের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷
সম্প্রতি জার্মানির উত্তরাঞ্চলের একটি তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের টর্মিনালের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে আরডাব্লিওই। ধারণা করা হচ্ছে, ল্যুটরাথের কয়লার খনির মতো ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই টার্মিনালের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে আরডাব্লিউই।
পরিবেশকর্মী ম্যুলার বলছেন, শক্তিশালী আন্দোলনের জন্য স্থানীয়দের হুমকির কারণেই মূলত সরে এসেছে তারা।
এফএফএফ-এর সদস্য পাউলিন ব্র্যুনগেরের মতে, আরডাব্লিউই-এর বোর্ড অব ডিরেক্টরদের পরিবেশ বিষয়ে তাদের বড় দায়িত্বের বিষয়টি বুঝাতে এবং প্রতি টন জীবাশ্ম জ্বালানির যে পরিবেশের উপর বড় প্রভাব রয়েছে তা জানাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন চলছে।
সূত্র : ডয়চে-ভেলে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: