পাঁচ বছর পর চালু হচ্ছে সরাসরি চীন ভারত ফ্লাইট

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ ২১:২২

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

চীন ও ভারতের মধ্যে প্রায় পাঁচ বছর পর সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে। উভয় দেশই এই বিষয়ে সম্মত হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার (২৭ জানুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে। এটি ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে প্রাণঘাতী সামরিক সংঘর্ষের পর তিক্ত হয়ে যাওয়া দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ার ইঙ্গিত।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির বৈঠকের পর ভারতীয় মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, দুই পক্ষ শিগগিরই একটি বৈঠকে এই বিমান পরিষেবার কাঠামো নিয়ে আলোচনা করবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, উপমন্ত্রী পর্যায়ে আরেকটি বৈঠকে দুই দেশের সাংবাদিকদের বিনিময় সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে, ২০২০ সালের হিমালয় অঞ্চলে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের পর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভারত চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে বাধা দেয়, শত শত জনপ্রিয় অ্যাপ নিষিদ্ধ করে এবং যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। যদিও পণ্যবাহী বিমান চলাচল চালু ছিল।

গত চার মাসে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি হয়। এর মধ্যে, গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনা উল্লেখযোগ্য।

সোমবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বেইজিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রিকে জানান, দুই দেশকে একই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই বৈঠক ছিল অক্টোবরে হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য ছিল সীমান্ত সংঘাতের উত্তেজনা কমানো।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি নীতির স্বচ্ছতা ও পূর্বানুমানযোগ্যতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, গত বছরের জুনে রয়টার্স জানিয়েছিল, চীন সরকার এবং এয়ারলাইনসগুলো ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরায় চালুর অনুরোধ জানিয়েছে। তবে সীমান্ত বিরোধের কারণে ভারত সে সময় তা প্রত্যাখ্যান করে। অক্টোবরে ভারতীয় সরকারি সূত্র জানায়, আকাশপথে যোগাযোগ পুনরায় চালু করা এবং ভিসা অনুমোদনের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার বিষয়ে ভারত চিন্তাভাবনা করছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দেশ ধাপে ধাপে সংলাপ ও কার্যকর বিনিময় পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়েছে। ভারত-চীন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের মেকানিজমের একটি বৈঠকও শিগগির আয়োজন করা হবে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, ‘দুই দেশকে সন্দেহ ও বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে পারস্পরিক সমর্থন ও অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।’

তবে সম্পর্ক স্থিতিশীল হওয়ার সময়ের মধ্যেই তিব্বতে চীনের একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ অনুমোদন ভারতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বাঁধটি ব্রহ্মপুত্রের উৎস ইয়ারলুন সাংপো নদীর ওপর নির্মিত হবে। চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্প পরিবেশ বা ভাটিতে পানি প্রবাহে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ভারত ও বাংলাদেশ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাঁধটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে, যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা।

ভারত চীনকে প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং নিম্নবর্তী দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষার অনুরোধ জানিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সোমবারের উপমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশ সীমান্তবর্তী নদী সংক্রান্ত সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে এবং এই বিষয়ে একটি নতুন বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছে। এ ছাড়া, ২০২৫ সালে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য তিব্বতের পবিত্র পাহাড় ও হ্রদে যাত্রা পুনরায় চালুর বিষয়ে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: