২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে প্রকাশ্যে ষষ্ঠ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো তালেবান সরকার। ভরা স্টেডিয়ামে খুনের দায়ে জেলবন্দি আসামিকে গুলি করলো তারা। পাকতিয়া প্রদেশের রাজধানী গারদেজে হাজার হাজার দর্শকের সামনে অভিযুক্তের বুকে তিনটি গুলি করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগের সন্ধ্যায় গভর্নরের কার্যালয় সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মকর্তা ও বাসিন্দাদের ‘এই অনুষ্ঠানে যোগদান’ করার আহ্বান জানায়। আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একজন খুনিকে প্রতিশোধমূলক শাস্তির জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে’।
আদালত জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা স্বাক্ষর করেছেন। যাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সেই ব্যক্তি তালেবান ফের ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই খুনের দায়ে জেলে ছিলেন। হাবিবুল্লা সইফ কাতাল নামের এক ব্যক্তিকে খুন করেছিলেন আয়াজ। গার্দেস স্টেডিয়ামে হাবিবুল্লার পরিবারের সদস্যদের আনা হয়েছিল। তাদের দিয়েই গুলি চালানো হয়। মুহম্মদ আয়াজকে তিনটি গুলি করা হয়। হাজারো দর্শকের মাঝে তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানিসহ একাধিক নেতৃত্বও উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের প্রথম শাসনামলে প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড সাধারণ ছিল, কিন্তু আন্তর্জাতিক সূত্র অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে।
২০২২ সালে, আখুন্দজাদা বিচারকদের তালেবান সরকারের ইসলামিক আইনের ব্যাখ্যার সমস্ত দিক সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেন- যার মধ্যে ‘চোখের বদলে চোখ’ শাস্তি যা ‘কিসাস’ নামে পরিচিত। ফেব্রুয়ারিতে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। পূর্ব গজনি শহরে এক বিশাল জনতার সামনে একাধিক বন্দুকের গুলিতে দুই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তার কয়েকদিন পরে উত্তর জোজজান প্রদেশে একই ধরনের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনী প্রত্যাহারের পর একটি গৃহযুদ্ধের বিশৃঙ্খলা থেকে উদ্ভূত তালেবানের তীব্র মতাদর্শের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা। সেই যুগের সবচেয়ে কুখ্যাত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে একটি ছিল ১৯৯৯ সালে কাবুলের একটি স্টেডিয়ামে পুরো বোরকা পরা একজন নারীর মৃত্যুদণ্ড। তার বিরুদ্ধে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ ছিল।
জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তালেবান সরকারের শারীরিক শাস্তি এবং মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা করেছে। অ্যামনেস্টি অনুসারে, চীন, ইরান, সৌদি আরব, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়া হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: