দ্রুতই মিটে যাচ্ছে ভারত-চীন সীমান্ত সমস্যা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২১ আগস্ট ২০২৫ ০৭:০০

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

ঘোর শত্রু চীনের সঙ্গে দোস্তি জমে উঠেছে ভারতের। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন দহরম মহরমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ট্রাম্প তাদেরকে ঠেলে দিয়েছেন একত্রিত হতে।

এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতিপথ পুনর্গঠনের প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে ভারত ও চীন সীমান্ত প্রশ্নে সমাধানের দিকে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটির সদস্যরা সীমান্ত নির্ধারণে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করবেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর বৈঠকের পর মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় পক্ষ দ্রুততম সময়ে সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় চালু করার এবং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর হ্রদে যাত্রার সুযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। একইসঙ্গে দুই দেশ সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা হবে নির্ধারিত তিনটি বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার- লেপুলেখ পাস, শিপকী লা ও নাথুলা দিয়ে।

২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষ ও দীর্ঘ সামরিক অচলাবস্থার পর সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা উষ্ণতা ফিরেছে। সর্বশেষ এ খবর এমন এক সময়ে পাওয়া যাচ্ছে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ ভাগ শুল্ক এবং রুশ তেল আমদানিতে বাড়তি ২৫ ভাগ কর আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেও শুল্ক নিয়ে বিরোধ চলছে। অজিত দোভাল ও ওয়াং ই সীমান্ত প্রশ্নে দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধি। তাদের মধ্যে ২৪তম দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, কাজানে শীর্ষ পর্যায়ে যে ঐকমত্য হয়, তার বাস্তবায়নে যে অগ্রগতি হয়েছে, উভয় পক্ষই তা ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছে। তারা মত প্রকাশ করে যে, ২৩তম দফা আলোচনার পর থেকে ভারত-চীন সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে।

তারা পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সীমান্ত প্রশ্নে সমাধানের জন্য ২০০৫ সালের পলিটিক্যাল প্যারামিটারস অ্যান্ড গাইডিং প্রিন্সিপালস এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে একটি ন্যায্য, যৌক্তিক ও পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য কাঠামো নির্ধারণে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

দুই বিশেষ প্রতিনিধি ওয়ার্কিং ম্যাকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন অন ইন্ডিয়া-চায়না বর্ডার অ্যাফেয়ার্সের (ডব্লিউএমসিসি) অধীনে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠনে একমত হন। ওই কমিটি সীমান্ত নির্ধারণে সমাধানের পথ খুঁজবে। সীমান্ত নির্ধারণ বলতে আইনগত ও রাজনৈতিক উপায়ে সীমারেখা নির্ধারণকে বোঝানো হয়, যেখানে স্থলভাগে দৃশ্যমান চিহ্ন নাও থাকতে পারে। ওয়াং ই ও অজিত দোভালের বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা বাড়াতে ডব্লিউএমসিসি’র অধীনে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে।

এ ছাড়া পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় সীমান্ত সেক্টরে নতুন জেনারেল লেভেল ম্যাকানিজম তৈরি করা হবে, বিদ্যমান পশ্চিমাঞ্চলীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি। এতে নিরস্ত্রীকরণ বিষয়েও আলোচনা হবে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে উভয় পক্ষ সম্মত হয় যে স্থিতিশীল, সহযোগিতামূলক ও ভবিষ্যতমুখী সম্পর্ক উভয় দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা পূর্ণাঙ্গভাবে নিজেদের উন্নয়ন সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তিয়ানজিনে অনুষ্ঠেয় এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায় চীন। ভারতও চীনের এসসিও সভাপতিত্বকে পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং সফল সম্মেলনের প্রত্যাশা করে।

উভয় দেশ একে অপরকে আসন্ন কূটনৈতিক আয়োজনগুলোয় সহযোগিতার আশ্বাস দেয়, যার মধ্যে ২০২৬ সালে ভারতে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন ও ২০২৭ সালে চীনে সম্মেলন অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ে সরাসরি বিমান সংযোগ পুনরায় চালুর বিষয়ে একমত হয়েছে এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের কথাও বলা হয়েছে। ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা আরও সম্প্রসারিত করা হবে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নির্ধারিত তিনটি প্রবেশদ্বার- লিপুলেখ পাস, শিপকী লা ও নাথুলা দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালুর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি উভয় দেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য প্রবাহ বাড়াতে কংক্রিট ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: