ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে গাজা ও লেবাননজুড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপ্রিয় হয়ে উঠছে, বিশেষ করে আমেরিকান তরুণদের মাঝে। তবু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও তারা প্রকাশ্যে সংঘাতের অবসান চেয়ে আসছে। এর ফলে আমেরিকান প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে।
অনেকে বর্তমান প্রশাসনকে দায়ী করছেন সংঘাত বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য এবং তারা নির্বাচনে ভোট দিতে অনিচ্ছুক। যদিও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কী হবে, সেটি নিয়ে বিতর্ক প্রবল হয়ে উঠেছে গাজার মানুষদের মাঝে। তারা মনে করেন, আমেরিকান নেতৃত্বই শেষ পর্যন্ত সংঘাত নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেবল আমেরিকার মধ্যেই নয়, বিশ্বজুড়ে অনেকের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে।
গাজা
জাবালিয়ার আম্মার জুদেহ বলছেন, ট্রাম্প জিতলে আমাদের জন্য মহাবিপদ। ট্রাম্পের আমলে ফিলিস্তিনের জন্য বিপর্যয় নেমে এসেছিল। তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক শক্তিশালী করেছেন। ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় এলে, আমাদের হয়তো সিনাই উপত্যকায় স্থানান্তরিত হতে হবে।
গাজা সিটির তাহানি আরাফাত বলছেন, আশা করার মতো কিছু নেই। কারণ বর্তমান আলোচনাগুলো কেবল লেবাননের যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে হচ্ছে। গাজার মতো অঞ্চলের মানুষদের জন্য কোনও সমাধান নেই। জো বাইডেনের আমলে যুদ্ধ আট মাস ধরে চলছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কোনও প্রভাব রাখতে পারেনি। ডেমোক্র্যাটদের শান্তির পক্ষে কথা কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমাদের জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই।
শাতি শরণার্থী শিবিরের ইমাদ আল-দাইয়া বলেন, গাজার মানুষ হিসেবে আমরা চাই এই যুদ্ধ শেষ হোক। ট্রাম্পের সময় আমাদের জন্য বিপর্যয়কর ছিল। তিনি ফের ক্ষমতায় এলে ইসরায়েলের ইচ্ছার বাইরে কিছু হবে না।
দখলকৃত পশ্চিম তীর
এল-বিরেহের খালেদ ওমরান বলেন, একজন ফিলিস্তিনি হিসেবে আমাদের কাছে ট্রাম্প বা হ্যারিস, দুজনের মধ্যে পার্থক্য খুবই ক্ষীণ। ফল যাই হোক, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের পক্ষেই থাকবে।
রামাল্লার ওয়াফা আবদেল রাহমানের মতে, ফিলিস্তিনিরা যেন শয়তান এবং তার চেয়েও খারাপ কারও মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। ট্রাম্পের জয় হলে ইসরায়েলের পক্ষে দ্রুত এবং সহিংস উপায়ে যুদ্ধ সমাধান হতে পারে। হ্যারিস থাকলে যুদ্ধ দীর্ঘ হবে। আমাদের জন্য এর ফল একই—মৃত্যু, হয় দ্রুত নয়তো ধীরগতিতে।
লেবানন
বৈরুতের জয় স্লিমের ভাষ্য, আমরা আরবরা সবসময় খারাপ এবং খারাপের মধ্যে ভালো বেছে নিতে বাধ্য হই। ব্যক্তিগতভাবে, আমি ট্রাম্পের বিরোধী ছিলাম। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে ট্রাম্প জিতলে যুদ্ধ থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভবত তিনি ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকান সমর্থন কমিয়ে আনবেন।
শরিফ খাইলি বলেন, লেবাননের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেন হ্যারিস যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন আবার কেউ মনে করেন ট্রাম্প এটিকে থামাতে পারেন। তবে আমি মনে করি, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি কখনোই পরিবর্তন হবে না। ট্রাম্প অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দেবেন এবং হ্যারিস সামরিকভাবে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকবে।
সূত্র: আল জাজিরা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: