লেবাননে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২২:০৯

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যকার শত্রুতা বন্ধ করার একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার তারা দেশটিতে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চায়। এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন আমেরিকান মধ্যস্থতাকারীরা। এ বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র ৩০ অক্টোবর, বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সূত্রগুলোর একজন আলোচনার বিষয়ে ব্রিফ করেছেন এবং অপরজন লেবাননে কর্মরত একজন সিনিয়র কূটনীতিক। তিনি বলেছেন, এই দুই মাস সময়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন চূড়ান্ত করা হবে। দক্ষিণ লেবাননকে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রণের বাইরে অস্ত্রমুক্ত রাখতে ২০০৬ সালে এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল।

প্রস্তাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বৈরুতে আমেরিকান দূতাবাসের মুখপাত্র সামা হাবিব বলেন, ‘আমরা আবারও বলতে চাই, আমরা একটি কূটনৈতিক রেজ্যুলেশন চাই, যেটি সম্পূর্ণরূপে ১৭০১-কে বাস্তবায়ন করে এবং ইসরায়েলি ও লেবাননের নাগরিকদের সীমান্তের উভয় পাশে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে দেয়।’

লেবাননে ইসরায়েলি অভিযান অব্যাহত থাকায় যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ এই প্রচেষ্টার বিষয়টি সামনে এলো। বুধবার পূর্বাঞ্চলীয় বালবেক শহরের বাসিন্দারে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেখানে অন্যান্য এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েক হাজার লেবানিজ বসবাস করছিল।

এই ধরনের নোটিশ সাধারণত বোমা হামলার আগে দেওয়া হয়। সাবেক মেয়র ফুয়াদ বলুক রয়টার্সকে বলেছেন, বাসিন্দারা শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছিল, যার কারণে রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচলও শুরু হয়। তবে অনেকেই সেখানে রয়ে গেছেন। কেননা, কোনও স্থানই নিরাপদ নয়।

টানা তৃতীয় দিনের মতো দক্ষিণাঞ্চলীয় খিয়াম শহরের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই করছে হিজবুল্লাহ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের সেনারা লেবাননের গভীরে প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে।

লেবানন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণ লেবাননের সারাফান্দে মঙ্গলবার অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ সময় বন্দর শহর সিডনে পৃথক হামলায় অন্তত পাঁচ জন নিহত এবং আরও ৩৭ জন আহত হন।

রেজ্যুলেশন ১৭০১ হলো ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে লড়াইয়ের গত বছরের সমাপ্তির আলোচনার ভিত্তি। এই সংঘাত গাজা যুদ্ধের সঙ্গে সমান্তরালভাবে শুরু হয়েছিল এবং গত পাঁচ সপ্তাহে তা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের দূত আমোস হচস্টেইন। চলতি মাসের শুরুতে বৈরুতে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েল বা লেবানন কেউই এই প্রস্তাবটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি।

জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও সূত্রটি আলোচনার বিষয়ে রয়টার্সকে বলেছেন, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলোর দেওয়া একটি প্রস্তাবকে প্রতিস্থাপন করেছে। ওই প্রস্তাবে রেজ্যুলেশন ১৭০১-এর পূর্ণ বাস্তবায়নের পূর্বসূচি হিসেবে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল।

তবে চুক্তিটি এখনও ভেস্তে যেতে পারে বলে উভয়ই সতর্ক করেছিলেন। কূটনীতিক বলেছিলেন, ‘যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য একটি আন্তরিক চাপ রয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়ন করা এখনও কঠিন।’

আলোচনার বিষয়ে ব্রিফ করা ব্যক্তিটি বলেছেন, একটি বিষয়ের ওপর ইসরায়েল এখনও জোর দিচ্ছে। আর তা হলো, চুক্তি লঙ্ঘন করলে হিজবুল্লাহর ওপর বিমান হামলা বা অন্যান্য সামরিক অভিযানের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির ‘সরাসরি প্রয়োগ’ করার ক্ষমতা।

ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ টেলিভিশন জানিয়েছে, জাতিসংঘের রেজ্যুলেশন ১৭০১-এর একটি শক্তিশালী সংস্করণ চাইছে ইসরায়েল। যাতে দেশটি নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হলে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি পায়।

লেবাননের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লেবাননকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাবের বিষয়ে অবগত করা হয়নি। আর তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনও মন্তব্য করেননি তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক দিন আগে এবং গাজায় একই ধরনের কূটনৈতিক অভিযানের সঙ্গে লেবাননেও যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।

অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, লেবাননের চুক্তিটি বন্ধ করার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার ইসরায়েল সফর করবেন হচস্টেইন ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ব্রেট ম্যাকগার্ক। এটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাস্তবায়িত হতে পারে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনটি সূত্র।

অ্যাক্সিওস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, হচস্টেইন ও ম্যাকগার্ক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও কৌশলগত বিষয়কমন্ত্রী রন ডার্মারের সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

অ্যাক্সিওস রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি ও আমেরিকান কর্মকর্তারা মনে করেন, দুই মাস ধরে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি হামলার শিকার হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত গোষ্ঠীটি গাজার হামাসের সঙ্গে কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টতা না রাখার দিকটি বিবেচনায় নিয়েছে।

এ বিষয়ে আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মন্তব্যের অনুরোধ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সাড়া পাযওয়া যায়নি। 

 

সূত্র : রয়টার্স।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: