তেহরানের সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের মারাত্মক হামলার ‘কঠোর ও কার্যকর’ জবাব দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই। পাশাপাশি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার ইসরায়েলকে ‘তিক্ত পরিণতির’ সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
২৮ অক্টোবর সোমবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সব ধরনের সম্ভাব্য উপায়ে ইহুদি রাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত। হামলার প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করেই আমাদের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করবে।’
ইসরায়েল শনিবার ইরানের সামরিক স্থাপনার ওপর বিমান হামলা চালায়, যা ছিল ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ইরানের হামলার প্রতিশোধ। ইরানের ওই হামলাটি ছিল তেহরান সমর্থিত বিদ্রোহী নেতাদের ও এক রেভল্যুশনারি গার্ডস কমান্ডারের হত্যার প্রতিশোধ।
সামরিক সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় অন্তত চারজন সেনা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এতে একজন বেসামরিক ব্যক্তিও প্রাণ হারিয়েছেন বলে একাধিক ইরানি গণমাধ্যম সোমবার জানিয়েছে।
তবে এই হামলায় বেসামরিক মৃত্যুর বিষয়টি কর্তৃপক্ষ আগে প্রকাশ করেনি। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের গাজায় সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই হামলা হয়। যুদ্ধ সম্প্রতি লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপরও বিস্তৃত হয়েছে। হামাস ও হিজবুল্লাহ—উভয়ই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের সঙ্গে জোটবদ্ধ ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ অংশ।
গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখাই ইরানের ‘লক্ষ্য’ জানিয়ে বাঘাই আরো বলেন, ইসরায়েলি হামলা নিয়ে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সেখানে এই হামলার বিষয়ে ‘দৃঢ় ও সঠিক’ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। ইরান রবিবার এই বৈঠক করার দাবি জানিয়েছিল।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বাঘাই ইরাকের আকাশসীমাকে ব্যবহার করে ইসরায়েলের এই আক্রমণ চালানোর বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ইহুদি রাষ্ট্র তাদের আইনভঙ্গকারী নীতির ক্ষেত্রে কোনো সীমা মানে না...তারা বহুবার বিভিন্ন দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।’
অন্যদিকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, ইরানি সামরিক স্থাপনার ওপর হামলা ‘তিক্ত পরিণতি’ বয়ে আনবে। সোমবার স্থানীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা তাসনিম বাহিনীর প্রধান হোসেন সালামিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, শনিবারের বিমান হামলায় ইসরায়েল ‘তার অশুভ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে’। গাজা ও লেবাননে তেহরান সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় ইসরায়েলের এই হামলা ‘ভুল হিসাব ও অসহায়ত্বের প্রমাণ’।
সালামি তার সতর্কবাণীতে বলেন, ‘এর ফলাফল ইসরায়েলের জন্য অকল্পনীয় ও তিক্ত হবে।’
এদিকে ইরানি গণমাধ্যম ইসরায়েলের হামলার মাত্রাকে ছোট করে দেখিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি উত্তেজনা আর না বাড়াতে তেহরানের অনীহার ইঙ্গিত। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রবিবার বলেছেন, ইসরায়েলের হামলায় সেনারা নিহত হওয়ার ঘটনা ‘অতিরঞ্জিত বা অবহেলা’ করা উচিত নয়। তিনি এ হামলাকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ‘ভুল হিসাব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ ছাড়া ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে আমরা আমাদের জাতি ও দেশের অধিকার রক্ষায় প্রস্তুত।’ ইরান ‘ইহুদি রাষ্ট্রের আগ্রাসনের যথাযথ জবাব দেবে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র : এএফপি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: