আফ্রিকার দেশ মালি থেকে রওয়ানা দিয়ে সাহারা মরুভূমি এবং সবশেষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছেছে আট বছর বয়সী এক শিশু। এর জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার পথ, যা সে করেছে বাবা-মা কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য ছাড়াই।
আলোচিত শিশুটির নাম ওমর। অভিবাসন রুটের এক পর্যায়ে লিবিয়ার কারাগারে কিছুদিন আটকও ছিল সে। পরে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর থেকে মানবিক জাহাজের মাধ্যমে উদ্ধার হলে তার ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার ইতি ঘটে।
মালি থেকে যাত্রার পর দীর্ঘ চার মাস বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি ওমর। অবশেষে গত ১৮ মার্চ ইতালির আনকোনায় পৌঁছে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে আট বছরের শিশুটি।
ওমরসহ অভিবাসীদের উদ্ধারকারী এনজিও এসওএস মেডিটারানের জাহাজটিতে ছিলেন ইতালীয় সাংবাদিক অ্যাঞ্জেলা নোসিওনি। তিনি বলেন, ওমর পরিবারের কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য ছাড়াই মরুভূমি এবং সমুদ্রের ওপর দিয়ে সাত হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছে।
গত বছরের শেষের দিকে মালিতে সন্ত্রাসী হামলার পর দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসে ওমর। একপর্যায়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাহারা মরুভূমির দিকে যাত্রা শুরু করেছিল সে। পরবর্তীতে আফ্রিকার আরেক দেশ লিবিয়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় শিশুটি।
সাংবাদিক নোসিওনি স্থানীয় দৈনিক লিউনিতাকে বলেন, শিশুটি ঠিক কীভাবে লিবিয়ায় পৌঁছেছিল তা স্পষ্ট নয়। অভিবাসন রুটে টাকার জন্য কাজ করার কথাও বলেছে সে। আমরা জানি না, ওমর কীভাবে লিবিয়া উপকূলের নৌকায় উঠেছিল কিংবা কীভাবে পাচারকারীদের অর্থ দিয়েছিল।
শিশুটির লিবিয়া উপকূল থেকে প্রথম সমুদ্রযাত্রা অবশ্য ব্যর্থ হয়েছিল। তাকে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা অন্যান্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আটক করে ত্রিপোলির আইন জারা কারাগারে নিয়ে যায়। এই কারাগারটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে ‘নরক’ হিসেবে পরিচিত।
সেখানে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করে সেই ঘটনার ভিডিওধারণ করে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে পাঠিয়ে থাকে স্থানীয় মিলিশিয়ারা। আইন জারা থেকে মুক্তি পেয়ে ওমর পশ্চিম লিবিয়ার জাউইয়া শহরে গিয়ে সেখান থেকে ইউরোপের দিকে যাত্রার চেষ্টা করে।
অ্যাঞ্জেলা নোসিওনি বলেন, আমি এই ছেলেটিকে আইন জারা কারাগার পরিদর্শনের সময় দেখেছিলাম। কারাগারে থাকা একমাত্র শিশু হওয়ায় তাকে আমি উদ্ধারকারী জাহাজে দেখেই চিনতে পারি।
লিবিয়ার উপকূলে গত ১৪ মার্চ উদ্ধারকারী জাহাজের ঘটনা স্মরণ করে এই সাংবাদিক বলেন, ছেলেটি পানিশূন্যতায় ভুগছিল এবং আহত অবস্থায় ছিল। তবে সে অন্যদের চেয়ে সচল ছিল।
মানবিক উদ্ধারকারী জাহাজ ওশান ভাইকিং ওমরসহ অন্যন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ইতালির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত আনকোনায় পৌঁছে দেয়। ওমরকে সেখানে নাবালকদের জন্য নিবেদিত একটি কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
কেন্দ্রটির পরিচালক আলেসান্দ্রো ফুসিলি ডেইল টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ছেলেটি তার বাবার টেলিফোন নম্বর মুখস্থ রেখেছিল। আমি আমার ফোন বের করলে সে তার বাবার নম্বর দেয়। পরে একজন দোভাষীর সহায়তায় কল দিয়েছিলাম। ফোনে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে।
ওমর তার বাবাকে জানায়, বাবা, আমি দুঃখিত তোমাকে না বলে চলে আসার জন্য। আমি এখানে রয়েছি।
ফোনে তার বাবা জিজ্ঞেস করে, কিন্তু কোথায় রয়েছো? সে উত্তর দেয়, অন্য দিকে রয়েছি! ইউরোপে! বাবা আমি কি এখানে স্কুলে যাবো?
ওমরের কথা শুনে ফোনের অপর প্রান্তে অবাক বনে যান তার বাবা। চার মাস ধরে খুঁজতে থাকা ছেলে নিরাপদ রয়েছে, এটি শুনে আপাতত স্বস্তি পেয়েছেন তিনি।
আলেসান্দ্রো ফুসিলি বলেন, ছেলেটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং সাহসী। সে প্রতিদিন সকালে অন্য বাচ্চাদের প্রস্তুত হতে দেখে আমাদের জিজ্ঞেস করে, আমি কি স্কুলে যাব?
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: