নতুন একটি পারমাণবিক চুল্লির নির্মাণকাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরান। দেশটির ইসফাহান নগরীতে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সোমবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর কয়েক দিন আগেই দক্ষিণাঞ্চলে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে বলে জানিয়েছিল দেশটি।
ইরান জানিয়েছে, এটি দেশের চতুর্থ পরমাণু চুল্লি। ইসফাহানের পরমাণু কেন্দ্রে এই চুল্লিটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার ইরানের সরকার জানিয়েছিল, দেশের দক্ষিণে একটি পরমাণু প্রকল্পের কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে। খবর এএফপির
ইরানের আণবিক শক্তি সংগঠনের প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি বলেছেন, 'ইসফাহানের স্থাপনায় এই চুল্লির ভিত্তি নির্মাণে সোমবার কংক্রিট ঢালার কাজ শুরু হয়েছে।'
ইরানের জাতীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ এই খবর প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, নতুন এই পরমাণু চুল্লিটি ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। সঙ্গে এটি আরও বেশ কিছু কাজ করতে সক্ষম হবে। এই চুল্লি তেল এবং পরমাণু সংক্রান্ত জিনিস পরীক্ষা করতে পারবে। রেডিওআইসোটোপ তৈরি করার ক্ষমতা আছে এই চুল্লির। এছাড়াও রেডিওফারমাসিউটিকলসও তৈরি করার ক্ষমতা আছে এই চুল্লির। ইসফাহানের এই কেন্দ্রে এর আগে তিনটি পরমাণু চুল্লি তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো এখন সচল।
ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরই উদ্বিগ্ন। তাদের বক্তব্য, ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত করছে, তা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায়। বস্তুত, একের পর এক পরমাণু কেন্দ্র গড়ে তুলে ইরান আসলে অস্ত্র তৈরির পথেই এগোচ্ছে বলে মনে করছে পশ্চিমা দেশগুলি।
ইরান অবশ্য কখনোই এই বক্তব্য সমর্থন করে না। তারা বরাবরই জানিয়ে এসেছে যে, তাদের সমস্ত পরমাণু প্রকল্পই জনগণের জন্য। অর্থাৎ, মূলত বিদ্যুৎপ্রকল্প। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলি ইরানের এই বক্তব্য সমর্থন করে না। বস্তুত, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল অ্যামেরিকা-সহ পশ্চিমা দেশগুলির। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের সময়ে অ্যামেরিকা সেই চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। ইরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয়ের সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি জানিয়েছেন, ইরান তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। পরমাণু প্রকল্প সম্পর্কে কোনো তথ্য ইরান তাদের দিচ্ছে না।
ইরানের পরমাণু প্রকল্পের প্রধান অবশ্য জানিয়েছেন, তাদের সমস্ত প্রকল্পই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা চিন্তা করে। সে কারণে দেশের দক্ষিণে একটি নতুন পরমাণু কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনা আছে তাদের। ২০১৪১ সালের মধ্যে সব মিলিয়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরমাণু চুল্লি থেকে তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষেই প্রকল্পগুলো তৈরি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া হলো পাঁচটি দেশ যারা ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরমাণু চুল্লিতে তৈরি করে। ইরানে আপাতত তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরমাণু চুল্লিতে তৈরি হয়।
পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জনের যেকোনও ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণের বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটি জোর দিয়ে বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরিই শান্তিপূর্ণ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: