নওয়াজকে সেনাবাহিনীর ‘প্রিয়পাত্র’ আখ্যা বিরোধীদের

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩৮

পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ : সংগৃহীত ছবি পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ : সংগৃহীত ছবি

 


পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন শেষে আজ ২১ অক্টোবর শনিবার দেশে ফিরছেন। তবে দেশের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবারই আদালত দুটি মামলায় তাঁকে জামিন দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এই গুঞ্জন তুঙ্গে উঠেছে যে ‘দণ্ডিত ও পলাতক’ নওয়াজ রাজনৈতিক সমঝোতা করেই দেশে ফিরছেন।

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) শীর্ষ নেতা নওয়াজ শরিফকে বৃহস্পতিবার দুটি মামলায় জামিন দেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জামিনের ক্ষেত্রে কোনো বিরোধিতা করেনি দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব)।

নওয়াজের দেশে ফেরা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানে আলোচনা-বিতর্ক চলছিল। অন্যতম প্রধান দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) বেশ খোলাখুলিভাবেই বলে আসছে, সেনাবাহিনী ও বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আপসরফা করেই দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন নওয়াজ।

অথচ ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলকে ক্ষমতা থেকে তাড়াতে পিএমএল-এনের সঙ্গেই জোট করে সরকার গঠন করেছিল পিপিপি।

অ্যাভেনফিল্ড ও আল-আজিজিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাদণ্ডাদেশ পান নওয়াজ। পরে তাঁকে আদালত সরকারি পদ গ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করেন। দণ্ডাদেশ পেয়ে কিছুদিন কারাভোগও করেন তিনি।

পরে ২০১৯ সালে জামিন নিয়ে চিকিৎসার কথা বলে দেশ ছাড়েন। এরপর সম্প্রতি ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্ষমতা হারানোর পর্ব তিনি বিদেশ থেকেই প্রত্যক্ষ করেন। ইমরান তখন বারবার অভিযোগ করতেন, তাঁকে সরাতে লন্ডনে বসে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন নওয়াজ শরিফ। নওয়াজ তখন পাল্টা ইমরান খানকে সেনাবাহিনীর ‘প্রিয়পাত্র’ বলতেন।

পিএমএল-এন বারবার দাবি করেছে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাদের পক্ষে জনগণের দেওয়া রায় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এবার পরিস্থিতি দৃশ্যত উল্টো দিকে মোড় নিচ্ছে। নওয়াজের প্রত্যাবর্তনকে ইঙ্গিত করে পিটিআই নেতা মুনিস এলাহি খোঁচা দিয়েছেন। নওয়াজকে সেনাবাহিনীর ‘নতুন প্রিয়পাত্র’ অভিহিত করেছেন তিনি।

আদালত থেকে পিএমএল নেতার জামিন পাওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় এলাহি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’-এ বলেন, ‘এখন এমন একজন রয়েছেন যিনি আগে অন্য একজনকে (ইমরান) প্রিয়পাত্র বলতেন। এবার তিনি (নওয়াজ) নতুন প্রিয়পাত্র হয়েছেন। নওয়াজ শরিফ একজন ঘোষিত অপরাধী ও দোষী, যিনি সারা দেশ চষে বেড়ানোর অনুমতি পেয়েছেন।’

অবশ্য পিএমএল-এন আগাগোড়াই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। নওয়াজের ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবেন নওয়াজ শরিফ। নওয়াজের কন্যা মরিয়ম নওয়াজ বলেন, ‘অনেকেই নওয়াজ শরিফকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি কেউ।’

পিএমএল-এনের ভাষ্য, ‘এস্টাবলিশমেন্ট’-এর (পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতীকী নাম) অঙ্গুলিহেলনেই নওয়াজের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দেওয়া হয়েছে। নওয়াজ কিছুদিন আগেই তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির নেপথ্যে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ও সাবেক প্রধান বিচারপতির ভূমিকা ছিল বলে দাবি করেন। তবে ওই বক্তব্যের পর তাঁকে আর এ নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি।

সমঝোতার অভিযোগ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার বলেছেন, নওয়াজ শরিফ তাঁর সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করে ফিরছেন না। পিএমএল-এন সূত্র জানায়, নওয়াজ শরিফ ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে যাবেন। সেখানে মিনার-ই-পাকিস্তান ময়দানে ভাষণ দেবেন তিনি। শীর্ষ নেতার প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দল। ইসলামাবাদ থেকে হেলিকপ্টারে করে লাহোর যাবেন নওয়াজ। এরপর গাড়িতে করে সমাবেশস্থলে যাবেন তিনি।

পিপিপির জ্যেষ্ঠ নেতা আইতাজ আহসান বলেন, নওয়াজের জায়গায় অন্য কেউ হলে এভাবে নিস্তার পেতেন না। চার বছর পলাতক থেকেও জামিন পেয়ে যাচ্ছেন তিনি।

পিপিপির আরেক নেতা আজহার হুসাইন দার মন্তব্য করেন, নওয়াজকে যেভাবে আদালত আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সুরক্ষামূলক জামিন দিয়েছেন, তা দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আলাদা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অন্যদিকে পিটিআইয়ের আইনজীবী শোয়াইব শাহিন নওয়াজের জামিনকে ‘কৌতুক’ আখ্যা দেন। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে শাহিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, পলাতক আসামি আত্মসমর্পণ না করলে জামিন দেওয়া যাবে না।

পিপিপি কয়েক মাস ধরেই অভিযোগ করে আসছে, আগামী সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে কাকারের সরকার এবং দেশের কিছু প্রতিষ্ঠান পিএমএল-এনকে সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। ভুট্টো পরিবারের নেতৃত্বাধীন পিপিপির অনেক নেতাও বলছেন, নওয়াজের প্রত্যাবর্তনের জন্যই নির্বাচন বিলম্বিত করা হচ্ছে। দ্রুত নির্বাচনের জন্য বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বেশ কয়েকবার দাবি তোলেন।


সূত্র : দ্য ডন, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: