যুক্তরাজ্যে হাসপাতালের এক নার্সের দ্বারা সাত নবজাতককে হত্যার ভয়াবহ ঘটনা সামনে এসেছে। ম্যানচেস্টারের ক্রাউন কোর্ট ১৮ আগস্ট, শুক্রবার লুসি লেটবি নামের ৩৩ বছর বয়সী ওই নার্সকে এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এছাড়া আরও ছয় শিশুকে হত্যা চেষ্টার প্রমাণও পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
লুসিকে বলা হচ্ছে ব্রিটেনের আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় ‘শিশু সিরিয়াল কিলার।’ তিনি কীভাবে নবজাতকদের হত্যা করেছেন সেটিও জানা গেছে এই বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, লুসির দায়িত্ব ছিল চেস্টার হাসপাতালের একটি শিশু ইউনিটে। সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া ও অসুস্থ শিশুদের রাখা হতো।
লুসি ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত এসব হত্যাকাণ্ড ঘটান। এসব শিশুকে হত্যা করতে তিনি বেশ কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি কোনো শিশুকে হত্যা করতে তাদের ধমনী বা শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে বাতাস প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলেন, কাউকে অতিরিক্ত দুধ পান করিয়েছিলেন অথবা শরীরে ইনসুলিন প্রবেশ করিয়ে বিষক্রিয়া ঘটিয়ে হত্যা করেছিলেন।
বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, লুসি এত সূক্ষ্মভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন যে, খুব বেশি প্রমাণ রাখেননি। তবে লুসি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে লুসিকে দোষী সাব্যস্ত করার ব্যাপারে বিবৃতিতে সরকারি কৌঁসুলি পাসকেল জোনস বলেছেন, ‘সবচেয়ে দুর্বল শিশুদের রক্ষার দায়িত্ব ছিল লুসি লেটবির। যারা তার সঙ্গে কাজ করেছেন তারা কেউই জানতেন না তাদের মধ্যেই ছিল এক হত্যাকারী। বারবার তিনি শিশুদের ক্ষতি করেছেন সেই স্থানে যেটি শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য নিরাপদ স্থান হওয়ার কথা ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তার ওপর যে বিশ্বাস রাখা হয়েছিল সেটির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তিনি।’
তদন্তের জন্য ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে লুসিকে দুই বার গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরে আবার গ্রেফতার হন লুসি। পুলিশ তার বাড়ি তল্লাশির সময় তার লেখা একটি চিরকুট পায়।
তাতে লুসি লেখেন, ‘আমি তাদের খুন করেছি, কারণ তাদের যত্ন নেয়ার মতো যথেষ্ট ভালো মানুষ আমি না। আমি ভীষণ খারাপ মানুষ। আমি শয়তান, আমিই এ কাজ করেছি।’
২১ আগস্ট, সোমবার ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে লেটবিকে সাজা দেয়া হবে। রায়ে তার দীর্ঘদিনের জেল এবং খুব সম্ভবত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
এদিকে লুসির মাধ্যমে আবারও সামনে এসেছে যুক্তরাজ্যের দুই কুখ্যাত— ডাক্তার হারল্ড শিপম্যান এবং নার্স বেভারলি অ্যালিটের মেডিকেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
১৫ জন রোগীকে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন ডাক্তার শিপম্যান। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়ার চার বছর পর ২০০৪ সালে জেলের ভেতর গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে বিষদ তদন্তে জানা গিয়েছিল, ডাক্তার শিপম্যান ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জন রোগীকে মরফিন ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছিলেন।
অপরদিকে নার্স আলিটকে ১৯৯৩ সালে চার শিশুকে হত্যা ও তিনজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সূত্র: এএফপি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: