বাজারমূল্য অনুসারে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টো-কারেন্সি বিটকয়েন। করোনা পরবর্তী সময়ে মূল্য ব্যাপক হ্রাস পেলেও এর দাম আকাশ ছুঁতে পারে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। বিটকয়েনের দাম ছাড়াতে পারে লাখ ডলার। ১০ জুলাই, সোমবার ব্যাংকটি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৫০ হাজার ডলার এবং ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এক লাখ ২০ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে। খবর রয়টার্সের।
এর আগে ব্রিটিশ বহুজাতিক ব্যাংকটি গত এপ্রিলে বিটকয়েনের মূল্য এক লাখ ডলারে উন্নীত হওয়ার যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, সেটি থেকে আরও ২০ হাজার ডলার বাড়িয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড সেই সময়ে বলেছিল যে, বিটকয়েনের সেই স্তরে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এর কারণ হিসাবে বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটি হলো ব্যাংকিং খাতের সংকট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমরা এখন মনে করি, এ অনুমানটি খুব রক্ষণশীল এবং তাই আমরা আমাদের ২০২৪ এর লক্ষ্যমাত্রার বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি’।
ব্যাংকটি বলছে, ব্যাংকিং খাতে সংকটের কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সিটির প্রতি ব্যাপক আকৃষ্ট হতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। বিশ্বব্যাপী সরবরাহের জন্য মজুত বাড়াতে উৎসাহিত হতে পারেন উৎপাদনকারীরাও।
চলতি বছরের শুরু থেকে বিটকয়েন ৮০ শতাংশ বেড়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার ১০০ ডলারে কেনাবেচা হচ্ছে। যদি গত নভেম্বরের সর্বোচ্চ ৬৯ হাজার ডলারের তুলনায় সেটি অর্ধেকেরও কম।
ব্রিটিশ ব্যাংকটি বলেছে, প্রতিদিন ৯০০ বিটকয়েন মাইন (বিটকয়েন মাইনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাইনাররা বিটকয়েন ব্লকচেইনে নতুন বিটকয়েন সংযোজন করেন) করা হয়। বিটকয়েন মাইনিংয়ে সুপারকম্পিউটারের যে বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা-সহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে মাইনারদের কিছু বিটকয়েন বিক্রি করতে হবে।
বিটকয়েনের দাম নিয়ে এর আগেও বড় বড় ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকের এক বিশ্লেষক ২০২০ সালের নভেম্বরে বলেছিলেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে বিটকয়েনের দাম তিন লাখ ১৮ হাজার ডলারে উঠবে, কিন্তু গত বছরের শেষে তা ৬৫ শতাংশ কমে ১৬ হাজার ৫০০ ডলারে নেমে আসে।
বিটকয়েন কী, কীভাবে কাজ করে?
২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের কেউ কিংবা একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার নতুন ধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার প্রচলন করে। এ ধরনের মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে পরিচিতি পায়। নাকামোতোর উদ্ভাবিত সে ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দেওয়া হয় বিটকয়েন।
বিটকয়েন লেনদেনে কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে সরাসরি (পিয়ার-টু-পিয়ার) আদান-প্রদান হয়। লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের পদ্ধতি।
খনি থেকে উত্তোলনের একপর্যায়ে গিয়ে যেমন স্বর্ণের সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে। এরপর উত্তোলিত স্বর্ণের বিকিকিনি হতে পারে। তবে নতুন করে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। বিটকয়েনের ধারণাও তা-ই। অ্যালগরিদমের সমাধানের মাধ্যমে বিটকয়েন ‘উত্তোলন’ করতে হয়, যা বিটকয়েন মাইনিং হিসেবে পরিচিত। আর বর্তমান হারে চলতে থাকলে ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েন মাইনিং করতে ২১৪০ সাল লেগে যাবে।
বিটকয়েনের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় এর ভগ্নাংশ সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে। অর্থাৎ বিটকয়েনের ভগ্নাংশ কেনাও সম্ভব। উদ্ভাবকের নামের সঙ্গে মিল রেখে বিটকয়েনের ভগ্নাংশ সাতোশি নামে পরিচিত। এক বিটকয়েনের ১০ কোটি ভাগের এক ভাগ হলো এক সাতোশি।
বিটকয়েন একধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। তবে একমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি না। বিটকয়েনের সাফল্যের পর এমন এক হাজারের বেশি ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চালু করা হয়। সব অবশ্য বিটকয়েনের মতো সফল হয়নি। তবে এ থেকে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রানির্ভর ভবিষ্যৎ আর্থিক ব্যবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
সূত্র : রয়টার্স
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: