সাগরে মিশবে ফুকুশিমার দূষিত পানি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ দক্ষিণ কোরিয়ায়

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১০ জুলাই ২০২৩ ০৪:৫৬

(ছবি - সংগৃহীত) (ছবি - সংগৃহীত)

 

সুনামিতে ধ্বংস হওয়া ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় ও বিষাক্ত পানি সাগরে ফেলার পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছের দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দারা। শনিবার (৮ জুলাই) রাজধানী সিউলে এই বিক্ষোভে শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। 
জাপানের বিতর্কিত এই পরিকল্পনায় এরই মধ্যে সম্মতি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সমর্থন জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারও। কোরিয়ান সরকারের সমর্থন জানানোর এক দিন পর এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন দেশটির বাসিন্দারা।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘আমরা ফুকুশিমার পারমাণবিক বর্জ্য সমুদ্রের জলে নিষ্কাশনের নিন্দা করছি’, ‘আমরা এর বিরোধিতা করি’ সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

বিক্ষোভ চলাকালীন তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। এখন পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কোরিয়ান কনফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নের মুখপাত্র হ্যান সাং-জিন বলেন, জাপানকে পানি নিষ্কাশনের অনুমতি দেয়া আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল।

২০১১ সালে জাপানের পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে ভয়াবহ সুনামি। দানবীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের আশঙ্কায় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

মূলত ভয়াবহ সুনামি ও ভূমিকম্পের ধাক্কায় প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র। সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লিগুলোকে ঠান্ডা করতে লাখ লাখ মেট্রিক টন পানি ব্যবহার করে জাপান। সেই পানি সাগরে ফেলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মতি পেতে দেনদরবার করে আসছিল দেশটির সরকার।

বর্তমানে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশে বিভিন্ন সাইটে এক হাজারের বেশি বিশালাকার ট্যাংকে প্রায় ১৩ লাখ টন পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে জাপানের আশপাশের দেশগুলো বেশ সোচ্চার। বিশেষ করে বেইজিং বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছিল। এমনকি জাপানের মৎস্যজীবী সমিতিও বিষয়টির ওপর তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে আসছে।

অবশেষে গত সপ্তাহে সেই পানি সমুদ্রে ফেলার অনুমতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সংস্থাটি বলেছে, জাপান ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার বিষয়ে যে পরিকল্পনা করেছে, তা আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মানদণ্ড অনুসরণ করেই করা হয়েছে। ফলে এই তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়লে পরিবেশের ওপর খুব সামান্যই এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

আগামী মাস অর্থাৎ আগস্টেই ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়তে পারে জাপান। জাপান সরকার দাবি করছে, ওই পানি নিরাপদ। রেডিও অ্যাকটিভ আইসোটোপগুলো সরাতে পানি ফিল্টার করেই সাগরে ফেলা হবে। তবু আতঙ্কিত দক্ষিণ কোরিয়া। ভয়ে ভয়ে রয়েছেন সমুদ্র উপকূলের মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা। তবে জাপানের পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার।

শুক্রবার (৭ জুলাই) এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সমন্বয়মন্ত্রী বাং মুন কি জানান, জাপান সব নিয়ম মেনেই কাজ করছে। তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে মিশলে বড় কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলার পর প্রায় বছর দশেক পর সেই পানি কোরীয় উপত্যকার কাছে পৌঁছবে।
তবে মন্ত্রী বাং মুন কি-র এই আশ্বাসে চিড়ে ভিজছে না। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দলগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। অনেক সাংসদই অনশন কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: