‘একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে আমি আমার সমাজের দর্পণ’ বলছিলেন আফ্রিকান চিত্রশিল্পী বোহিয়েনি বুথালেসি। বুথালেসি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তার কাজের মাধ্যমের কারণে।
জলরং, তেলরং, ক্যানভাসের ধার ধারেন না বুথালেসি। তার কাজের মাধ্যম হলো প্লাস্টিক। পুরোনো, ফেলে দেয়া নানা ধরনের বোতল কুড়িয়ে নিয়ে তা দিয়ে চিত্রকর্ম তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন তিনি। আর এর মাধ্যমে একদিকে তিনি পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন চালাচ্ছেন, অন্যদিকে চালাচ্ছেন শিল্পসাধনা।
বুথালেসির শৈশব কেটেছিল গ্রামে বাবার গরু-ছাগল চরিয়ে। গরুগুলো মাঠে ঘাস খেত, আর বুথালেসি সেগুলোর পিঠে আনমনে ছবি আঁকতেন খড়িমাটি দিয়ে। এভাবেই তার ছবি আঁকায় হাতে খড়ি। সে সময় বুথালেসি দেখেছিলেন, প্লাস্টিকের প্যাকেট বা প্লাস্টিকের টুকরা খেয়ে তাদের অনেক গরু মারা গেছে। সেই থেকে এই প্লাস্টিকের ব্যাপারটা তার মাথায় গেঁথে যায়।
এরপর যখন দূরের শহরে আর্ট স্কুলে ভর্তি হলেন, তখনো প্লাস্টিকের কাছে ফিরতে হয় তাকে। অর্থের অভাবে তেলরং কিনতে পারতেন না। তাই নিজেই বুদ্ধি করে আবর্জনার স্তূপ থেকে প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট জোগাড় করতেন। এরপর সেগুলো গলিয়ে তা দিয়ে রঙের কাজ করতেন। এভাবেই প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার শুরু করলেন তিনি।
৫৬ বছর বয়সী জোহানেসবার্গের এই বিখ্যাত চিত্রকর বলেন, ‘গত কয়েক দশকে পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু প্লাস্টিকদূষণ বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি এখনো। উল্টো এই প্লাস্টিকবর্জ্য প্রাণিকুলের মৃত্যুর কারণ হয়ে রয়েছে। আর এর জন্য আমরা মানুষরাই দায়ী। আমাদের এই মৃত্যুর দায়ভার নিতে হবে।’
২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ১ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিকবর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে জমা হয়েছে। ২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, প্লাস্টিকদূষণে শীর্ষ বিশ্বের ২০ দেশের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্যতম।
তাই বুথালেসি তার শিল্পের মাধ্যমে একদিকে এই প্লাস্টিকদূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন, অন্যদিকে ভিন্নধারার চিত্রশিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছেন। তবে সব সময় যে তিনি তার কাজের প্রশংসা পাচ্ছেন, তা নয়। তার সমালোচকরা বলেন, একদিন এসব প্লাস্টিক শেষ হয়ে যাবে। তখন বুথালেসি আর তার কাজের উপকরণ পাবেন না। তখন কী হবে?
এর উত্তরে বুথালেসি বলেন, ‘সেদিন বরং আমি খুশিই হব। কারণ প্লাস্টিকবর্জ্যমুক্ত পৃথিবীই আমার স্বপ্ন। সে লক্ষ্যেই আমার প্লাস্টিক নিয়ে কাজ করা।’
সূত্র : সিএনএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: