শস্য উৎপাদনে সহযোগিতা করে কেঁচো

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:১৩

গ্রাফিক্স গ্রাফিক্স


বিশ্বের শস্য সংগ্রহে কেঁচোর অবদান রয়েছে। আর মোট যে পরিমাণ শস্য উৎপাদনে কেঁচো ভূমিকা রাখে তা রাশিয়ার মোট উৎপাদিত শস্যের সমান। খাদ্য উৎপাদনে তাদের বিশাল ভূমিকা নিয়ে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

গবেষকরা বলছেন, এরা বছরে প্রায়,১৪০ মিলিয়ন টন খাদ্য উৎপাদনে অবদান রাখে। যা একটি দেশ হলে কেঁচো বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম উৎপাদনকারী হয়ে উঠত। রাশিয়া ২০২২ সালে ১৫০ মিলিয়ন টন শস্য উৎপাদন করেছিল এবং এই বছর ১২০মিলিয়ন টন উৎপাদন করবে বলে আশা করছে৷

এই সপ্তাহে নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, মাটিতে বসবাসকারী অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা শস্য সংগ্রহের ৬ দশমকি ৫ শতাংশে অবদান রাখে। শস্যের মধ্যে রয়েছে ধান, ভুট্টা, গম ও বার্লি। যদি এক প্যাকেট পাউরুটিতে ১৫টি স্লাইস থাকে। তাহলে এর অর্থ প্রতিটি রুটি তৈরির পেছনে কেচোঁর কার্যকলাপ রয়েছে।

কেঁচো লেগুমের বৃদ্ধিতে অবদান রাখার পরিমাণ ২ দশমিক ৩ শতাংশ। যার মধ্যে রয়েছে সয়াবিন, মটর, ছোলা ও মসুর ডাল। গবেষকরা জানান, লেগুমগুলো তাদের নিজস্ব নাইট্রোজেন ঠিক করতে পারে, যা তাদের কেচোঁর ওপর কম নির্ভরশীল করে তোলে।

কেঁচো মাটির কণাকে ভেঙে দেয় এবং মাটির ভেতরে অবস্থিত গাছের খাদ্য উৎপাদনকে সহজলভ্য করে তোলে। মাটিকে বায়ুশূন্য করে এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায়। মাটির পানিধারণ ক্ষমতাও বাড়ায়। কেঁচোর উপস্থিতিতে মাটিতে বায়ু চলাচল ক্ষমতা ৮-৬৭% বৃদ্ধি পেতে পারে।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই ধারণা করছিলেন কেঁচোর উপস্থিতি ফসলের উন্নতি ঘটায়। প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইন ১৮৮১ সালে এটি সম্পর্কে লিখেছিলেন। তবে এই গবেষণার আগে তা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রধান গবেষক স্টিভেন ফন্টে বলেন, ‘মাটি কেবল একটি জটিল আবাসস্থল কিন্তু সেই জীববৈচিত্র্য আমাদের বিশ্বব্যাপী ফসলের ফলনের জন্য কীভাবে অবদান রাখে বোঝার জন্য সত্যিই খুব কম প্রচেষ্টা করা হয়েছে।’

গবেষকরা বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের কেঁচোর সঙ্গে মাটির বৈশিষ্ট্য এবং ফসলের ফলনের মানচিত্র বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে শস্য ও লেগুমে কেঁচোর প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন।

গবেষকরা জানান, বিশ্বের দক্ষিণের অঞ্চলে কেঁচো আনুপাতিকভাবে বেশি অবদান রেখেছে। তবে সাব-সাহারান আফ্রিকায় শস্য উৎপাদনের ১০ শতাংশ এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ৮ শতাংশ অবদান রেখেছে। এই অঞ্চলের কৃষকরা সম্ভবত কম সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে। পরিবর্তে সারের উপর নির্ভর করে এবং জৈব পদার্থ পচে যায়, যা কেঁচোর প্রাচুর্য বাড়াতে সাহায্য করে।

স্টিভেন ফন্টে জানান, মাটির জীববৈচিত্র্যকে ঐতিহাসিকভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে এবং এই গবেষণাটি দেখিয়েছে কীভাবে এটি কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: