লিবিয়ায় ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক সপ্তাহ পেরুলেও কাটেনি বিভীষিকা। বাস্তুচ্যুত ৩০ হাজার বাসিন্দার জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন সুপেয় পানি-খাবার-আশ্রয়ের মতো মৌলিক ত্রাণ সহযোগিতা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেরনা শহরের ৮৯১টি ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। শহরটির মোট ভবনের চার ভাগের এক ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ভূমধ্যসাগর ঘেঁষা লিবিয়ার দেরনা শহর পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। শহরটির ৮৯১টি ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটির সরকারি প্রতিবেদনে জানানো হয়, শহরের ২১১টি ভবন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া কাদায় দেবে যায় আরও ৩৯৮টি ভবন। উদ্ধারকারী দলকে পথ করে দিতে কাদা ও ধ্বংসস্তূপে বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়ক পরিষ্কার করা হচ্ছে।
বন্যায় বিধ্বস্ত শহরটির মোট ভবনের চার ভাগের এক ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সাগরে ভেসে থাকা মরদেহ শনাক্তে হেলিকপ্টার থেকে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
বন্যা দুর্গতদের একজন বলেন, দেরনায় আমরা পরিবারের ছয় সদস্য। আমাদের ৪৮ জন আত্মীয় স্বজন নিখোঁজ রয়েছে। বাঁধদুটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাদের ছিলো সৃষ্টিকর্তা তাদের শান্তি দিবেন।
বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে জরুরি সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘ, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা আসতে শুরু করেছে। এতে বেঁচে ফেরা লোকজনের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরছে।
তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও চাপা আছে অনেক মানুষ। মরদেহের গন্ধ ভাসছে বাতাসে। এই অবস্থায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা আশঙ্কা করছে, দুর্গত এলাকাগুলোয় কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়ার মতো নানা রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্থানীয় এক প্রশাসক জানিয়েছেন, ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত ১৫০ জনের পেটের অসুখ হয়েছে। কিছু মানুষকে হাসপাতালেও পাঠাতে হয়েছে।
তবে খাবার পানির চরম সংকটের কথা জানিয়েছে দেরনার স্থানীয় মানুষজন। তারা জানান, যেখান থেকে পানযোগ্য পানি আসে, তার উৎসমুখে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় তা বিষাক্ত হয়ে গেছে। ফলে দূর থেকে পানি আনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু দেরনার আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ ল্যান্ডমাইন পোতা রয়েছে। তাই দূর থেকে পানি আনতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা।
১০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল আঘাত হানে। এতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় দুটি বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্দরনগরী দেরনা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দারনায় মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৩০০ দাঁড়িয়েছে। এখনো ১০ হাজারের মতো মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। দেরনার মেয়রের আশঙ্কা, প্রাণহানির সংখ্যা ২০ হাজারে গিয়ে ঠেকতে পারে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: