মিয়ামি হেরাল্ডের রিপোর্ট : ভেনেজুয়েলায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ২০:২৩

ভেনেজুয়েলার উপকূলে দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে আর্লে বার্ক-শ্রেণীর গাইডেড-ক্ষেপণাস্ত্র ডেস্ট্রয়ার পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত ভেনেজুয়েলার উপকূলে দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে আর্লে বার্ক-শ্রেণীর গাইডেড-ক্ষেপণাস্ত্র ডেস্ট্রয়ার পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে এই হামলা হতে পারে। কথিত মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পরবর্তী ধাপ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকান বাহিনী। মিয়ামি হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে পরিকল্পিত হামলার বিষয়টি উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, হামলার লক্ষ্য হবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নেতৃত্বে পরিচালিত এবং তার প্রশাসনের শীর্ষ সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত মাদক পাচারকারী সংগঠনের ব্যবহৃত সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা।


মিয়ামি হেরাল্ড জানিয়েছে, লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আকাশপথে কয়েকদিন বা কয়েক ঘন্টা ধরে হামলা চালানো হতে পারে এবং এর লক্ষ্য মাদক কারবারিদের মূলোৎপাটন করা। আমেরিকান কর্মকর্তাদের দাবি, মাদক কারবারিরা (ড্রাগ কার্টেল) বছরে প্রায় ৫০০ টন কোকেন পাচার করে, যা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।

মিয়ামি হেরাল্ড বলেছে, সূত্রগুলো মাদুরো নিজেই লক্ষ্যবস্তু কিনা তা বলতে অস্বীকৃতি জানালেও তাদের একজন বলেছেন যে, তার সময় ফুরিয়ে আসছে। সূত্রটি জানিয়েছে, ‘মাদুরো নিজেই আটকা পড়তে চলেছেন এবং শিগগিরই দেখতে পারেন যে, তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে পারবেন না, এমনকি যদি তিনি (পালানোর) সিদ্ধান্ত নেনও।’

প্রতিবেদন মতে, সূত্রটি আরও বলেছে, ‘তার (মাদুরোর) জন্য আরও খারাপ বিষয় হলো, এখন একাধিক জেনারেল তাকে ধরে হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক। তারা পুরোপুরি জানে যে, এক জিনিস হলো মৃত্যুর কথা বলা, এবং অন্য জিনিস হলো মৃত্যুকে দেখতে পারা।’

চলতি বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন মাদুরোর গ্রেফতারের জন্য পুরষ্কার দ্বিগুণ করে ৫ কোটি ডলার করে, যা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। সেই সঙ্গে তার কিছু শীর্ষ সহযোহীকে ধরার জন্য আড়াই কোটি ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো ক্যাবেলোও অন্তর্ভুক্ত, যিনি মাদক কারবার পরিচালনা করেন বলে দাবি মার্কিন কর্মকর্তাদের।

সম্প্রতি ভেনেজুয়েলা ঘিরে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ট্রাম্পের নির্দেশে ক্যারিবীয় অঞ্চলে গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্যারিবীয় এলাকায় রণতরী পৌঁছাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় সাগরে নৌযান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে আমেরিকান বাহিনী। এখন পর্যন্ত ১২বার হামলা চালিয়েছে তারা। সবশেষ হামলা চালানো হয় গত বুধবার (২৯ অক্টোবর)। এসব হামলায় অর্ধ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব নৌযান ভেনেজুয়েলা থেকে আসছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এদের সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও দাবি ওয়াশিংটনের।

ক্যারিবীয় সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেনেজুয়েলার নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ শামিল বলে অভিহিত করে এই হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের একটি দল। কিন্তু কোনো নিন্দা ও সমালোচনাই পাত্তা দিচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন।

চলতি সপ্তাহে সিবিএসকে এক সাক্ষাৎকারে সিনেটর রিক স্কট বলেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর এখনই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। কারণ ভেনেজুয়েলায় তার ক্ষমতার দিন শেষের পথে। ভেনেজুয়েলায় ‘মাদুরোর দিন ফুরিয়ে আসছে।

প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ওয়াশিংটন ‘এক নতুন, অনন্ত যুদ্ধের আগুন জ্বালাতে চাইছে’। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলা আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদারের অংশ হিসেবে সারাদেশে ৫ হাজার রুশ নির্মিত ইগলা-এস অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: