যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানিকে বিতর্কের আহ্বান জানিয়েছেন অ্যান্ড্রু কুমো। তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী জোহরান মামদানি ‘মাঝখানের ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরাসরি বিতর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
সিবিএস নিউজ নিউইয়র্ক আগেই জানিয়েছিল যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউস বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন চাকরির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে। এর ফলে মেয়র পদের লড়াইয়ে কেবল কুমো এবং মামদানিই থাকবেন।
কুমোর চ্যালেঞ্জ মামদানিকে, মামদানির চ্যালেঞ্জ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ের পরাজিত হয়েছে নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ছেন অ্যান্ড্রু কুমো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি একটি বক্তব্য দিয়ে মেয়র পদের লড়াইয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা করেছেন। তিনি শুধু মামদানিকে কয়েকটি বিতর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ জানান। একই সঙ্গে তিনি অন্যান্য প্রার্থীকে প্রচার থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
জোহরান মামদানির দিকে ইঙ্গিত করে কুমো বলেন, ‘আমি তাঁকে পাঁচটি বিতর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, প্রতিটি বরোতে একটি করে বিতর্ক হবে। সেখানে আমরা সেই বরোর সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলব। আসুন, নিউইয়র্কের মানুষকে একবারের জন্য জানান, আপনি কে এবং কী বিশ্বাস করেন।’
কুমোর এই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে জোহরান মামদানি আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
কুইন্স থেকে নির্বাচিত রাজ্যের আইনসভার সদস্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘চলুন মাঝখানের লোকটিকে বাদ দিই। আমি কেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতের পুতুলের সঙ্গে বিতর্ক করব, যখন আমি সরাসরি তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করতে পারি।’
জোহরান আরও বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি এ বিষয়ে সিরিয়াস হন, তবে তাঁকে নিউইয়র্ক সিটিতে আসতে হবে। আমরা যত খুশি তত বিতর্ক করতে পারি। কেন তিনি শুধু তাঁর কোটিপতি সমর্থকদের কর কমাতে নিউইয়র্কের ক্ষুধার্ত মানুষের এসএনএপি (খাদ্যসহায়তা) সুবিধা কমিয়ে দিচ্ছেন।’
কুমো বলেন, ‘মিস্টার জোহরান মামদানি আমার সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করতে ভয় পাচ্ছেন। কেন? কারণ, নিউইয়র্কের বেশির ভাগ মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে এবং ভোট ভাগ হয়ে গেলেই কেবল তিনি জিততে পারেন। আমি আপনাকে বলছি, নিউইয়র্কের মানুষ আপনাকে যত বেশি চিনবে, আপনার প্রতি সমর্থন তত কমবে।’
নিউইয়র্কের মেয়র পদের এই লড়াই শুধু শহরের আলোচনার বিষয় নয়, এটি হোয়াইট হাউসেরও আলোচনার বিষয়।
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমি একজন কমিউনিস্টকে মেয়র হতে দেখতে চাই না, আমি এটা স্পষ্ট করে বলছি।’
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র পদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়ে বর্তমানে চারজন প্রার্থী আছেন। এই নির্বাচনে সর্বশেষ জরিপেও দেখা গেছে, জোহরান এগিয়ে আছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই, দুজন প্রার্থী সরে দাঁড়াক এবং লড়াইটা মুখোমুখি হোক। আমি মনে করি, তাহলে জেতা সম্ভব।’
সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজের রাজনৈতিক প্রতিবেদক মার্সিয়া ক্রেমার জানান, এই সপ্তাহে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও নিউইয়র্কের আবাসন ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দেখা করেছেন।
অ্যাডামসের নির্বাচনী প্রচার দলের একজন মুখপাত্র বলেন, মেয়র অ্যাডামস ব্যক্তিগত সফরে ফ্লোরিডায় ছিলেন। তিনি সেখানে কোনো প্রচারমূলক বা সরকারি কাজ করেননি।
এরিক অ্যাডামস বলেন, ‘শুধু কিছু মানুষ আপনাকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বললে বা আপনার যা করা উচিত বলে মনে করেন, তা না করতে বললে, আপনি কি তা মেনে নেবেন? আমি এমনটা করি না।
অ্যাডামস ও স্লিওয়াকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান কুমোর
অ্যান্ড্রু কুমো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অ্যাডামস এবং স্লিওয়াকে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে ট্রাম্পের ধারণার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁর সঙ্গে ট্রাম্প বা তাঁর প্রশাসনের কোনো যোগাযোগ নেই। কুমো নিজেও এই দুজনের প্রতি প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
কুমো বলেন, ‘যদি আপনি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী না হন, তাহলে সরে দাঁড়ান। যখন আপনি বুঝতে পারেন কে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী, তখন অন্যদের উচিত তাঁর প্রতি সম্মান দেখানো।’
কুমো বিশ্বাস করেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৩ পয়েন্টে হেরে গিয়েছিলেন। তবু তিনি সাধারণ নির্বাচনে জোহরানের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে জেতার সেরা সুযোগ পাবেন বলে আশা করেন।
কুমো বলেন, জোহরানকে নিউইয়র্কের বেশির ভাগ মানুষ সমর্থন করে না। এই নির্বাচনে রূপক অর্থে ৪ হাজার ৭৮২ মানুষের মধ্যে জরিপ করা হয়েছে। প্রতিটি জরিপেই দেখা গেছে তার সমর্থন প্রায় ৪০ শতাংশ।
কুমো আরও বলেন, তিনি ট্রাম্পের সমর্থন কখনো গ্রহণ করবেন না। এই নির্বাচনে ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।
অবশ্য এরিক অ্যাডামস ও রিপাবলিকানপ্রার্থী স্লিওয়ারের প্রচার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা সরে দাঁড়াবেন না। মনে হচ্ছে, অ্যাডামস ও স্লিওয়া কেউই লড়াই ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নন।
অ্যাডামস বলেন, ‘আপনি যদি অ্যান্ড্রু কুমোকে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিয়ম নির্ধারণ করতে দেন, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র কোথায় থাকে? নিউইয়র্ক নগরের পরবর্তী মেয়র কে হবেন, তা ভোটাররা ঠিক করবেন।’
অ্যাডামসের প্রচার দলের মুখপাত্র টড শাপিরো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অ্যান্ড্রু কুমো দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার খরচ করেও দুই অঙ্কের ব্যবধানে হেরেছেন। যদি জরিপ সঠিক হতো, তবে আজ তিনি ডেমোক্রেটিক ব্যালটে থাকতেন। তাঁর উচিত এখন সরে দাঁড়ানো।’
মেয়র অ্যাডামস নিউইয়র্কের মানুষের জন্য কাজ করার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন এবং নভেম্বরে জোহরান মামদানিকে পরাজিত করতে তিনিই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী।
মেয়র বৃহস্পতিবার তাঁকে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য সমর্থন দিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মহানবী (সা.)-এর জন্মদিনে শহরে ছুটি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্লিওয়া বলেছেন, তিনি কোনো পরিস্থিতিতেই সরে দাঁড়াবেন না।
গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলেসের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আপনি আমাকে ঘুষ দিতে পারবেন না। আপনি আমাকে ভাড়া করতে পারবেন না। এই লড়াই থেকে সরে যাওয়ার জন্য আপনি আমাকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন না।’
স্লিওয়া আরও বলেন, ‘আমি রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে লড়ছি। অন্যান্য পদেও আমার দলের প্রার্থীরা লড়ছেন। তাঁদের প্রতি এবং আমার সমর্থকদের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে, যাঁরা আমার প্রচারের জন্য ৪ লাখ ডলার দিয়েছেন।’
স্লিওয়া বলেন, তিনি চান ‘সমস্যার ওপর ভিত্তি করে লড়াই চলতে থাকুক।’
তবে, অনেকে আশা করছেন, নির্বাচনের আগেই লড়াইয়ে পরিবর্তন আসবে। কয়েক দিন আগে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পর ব্যবসায়ী জন ক্যাটসিম্যাটিডিস ভবিষ্যদ্বাণী করেন, সেপ্টেম্বরের শেষ হওয়ার আগেই ‘কিছু একটা’ ঘটবে।
মেয়র কয়েক সপ্তাহ আগে বলেছিলেন, এই লড়াইয়ে কনি আইল্যান্ডের রোলার কোস্টারের চেয়েও বেশি বাঁক নিতে পারে। বিভিন্ন দিকে মোড় নেবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: