'আমেরিকা পার্টি' নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৭ জুলাই ২০২৫ ১৪:১৭

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে জড়ানোর কয়েক সপ্তাহ পরই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, 'আমেরিকা পার্টি' নামে এই নতুন দলটি প্রচলিত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের দুই-দলীয় ব্যবস্থার বিকল্প হয়ে উঠবে।

তবে দলটি ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ইলন মাস্ক নিজে আমেরিকাতে জন্ম না নেওয়ায় প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। তাছাড়া তিনি এ দলটির নেতৃত্বে কে থাকবেন, সে সম্পর্কেও কিছু জানাননি।

ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়ানোর সময় থেকেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন মাস্ক। সেই সময় এক্স-এ করা একটি জনমত জরিপে তিনি ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন আছে কি না।

শনিবারের ঘোষণায় সেই জরিপের কথাই টেনে এনে তিনি লিখেছেন, 'দ্বিগুণ ব্যবধানে আপনারা বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক দল দরকার। তাই এই দল আপনাদের জন্যই! 'আমরা আসলে একদলীয় ব্যবস্থায় বসবাস করছি, যেখানে অপচয় আর দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়া করে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোনো গণতন্ত্র নয়। আজ থেকে আমেরিকা পার্টির যাত্রা শুরু হলো- আপনার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।'

যদিও শনিবার পর্যন্ত দলটির পক্ষে কোনো নিবন্ধনপত্র ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়নি। অবশ্য এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দুই দলের বাইরে কেউ কেউ চেষ্টা করলেও জাতীয় পর্যায়ে তারা খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিবার্টেরিয়ান, গ্রীন ও পিপলস পার্টির প্রার্থীরা ট্রাম্প কিংবা ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি।

ট্রাম্পের অন্যতম বড় সমর্থক ছিলেন মাস্ক। গত নির্বাচনের সময় তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে জনসভায় নাচেন, এমনকি নিজের চার বছরের ছেলেকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন। ট্রাম্পের প্রচারণায় মাস্ক প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। নির্বাচনের পর ট্রাম্প প্রশাসনে তাকে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিএ-এর প্রধান করা হয়। এ বিভাগের কাজ ছিল সরকারি বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁটের সুপারিশ করা।

কিন্তু গত মে মাসে মাস্ক প্রশাসন ছাড়ার পর থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। তিনি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের ব্যয়বহুল বাজেট পরিকল্পনা ও করপদ্ধতির সমালোচনা করেন।

'বিগ বিউটিফুল বিল' নামে পরিচিত সেই আইনটি সম্প্রতি কংগ্রেসে অল্প ব্যবধানে পাস হয়ে ট্রাম্পের সই পায়। এতে ব্যাপক সরকারি ব্যয় ও করছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার ফলে আগামী দশকে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঘাটতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই বাজেট পরিকল্পনায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও টেসলার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য কোনো বিশেষ ভর্তুকি রাখা হয়নি, যা নিয়ে মাস্ক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান। কারণ মাস্কের ব্যবসা অনেকটাই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিনির্ভর।

জবাবে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, 'ইলন সম্ভবত ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকিপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ভর্তুকি ছাড়া তাকে হয়তো দোকান গুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হতো।' তিনি ইঙ্গিত দেন, মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো কী পরিমাণ ভর্তুকি পায়, তা খতিয়ে দেখবে ডজে।

উল্লেখ্য, মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য রকেট উৎক্ষেপণ করে এবং তার স্টারলিংক স্যাটেলাইট সেবা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: